পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আবু হেনা মুক্তি : মৌসুমের প্রথম ধাক্কায় আমার বিজ্ঞান সম্মত প্রজেক্টের প্রায় ৬০-৭০ লক্ষ টাকার চিংড়ি মাছ ভাইরাসে শেষ হয়ে গেছে। ব্যাংক ঋন, ব্যক্তি পর্যায়ের দেনা এবং পোনার হ্যাচারী মালিকদের পাওনা পরিশোধ করবো কিভাবে সে দুশ্চিন্তা আমাকে অসুস্থ করে তুলেছে। কথাগুলো বললেন সফল চিংড়ি চাষী ও সমাজসেবী সুন্দরবনের কোলঘেষে গড়ে ওঠা গ্রাম কালাবগীর বাসিন্দা আব্দুল মালেক। ভাইরাসে চিংড়ি মরে সাবাড় হয়ে যাওয়ায় সমিতির ঋনের টাকা দিতে হবে ভিটা বন্ধক রেখে অথবা বিক্রি করে। এমন আক্ষেপ করে ইনকিলাবকে এ কথা জানালেন পাইকগাছার শোলাদানার প্রান্তিক চিংড়ি চাষী বিকাশ মন্ডল। বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে হাজার হাজার চিংড়ি ঘেরে এখন ভাইরাস। এ মড়ক নতুন নয়। প্রতি বছর ভাইরাস ঘেরে হানা দেয় দানবের মত। এবার তার সরূপ আরো রুক্ষ। বৃষ্টিপাত নেই। পানি গরম হয়ে আগুন হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন পকেট ঘেরে পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। আর সর্বনাশা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে চিংড়ি ঘেরগুলো। বড় বড় ব্যবসায়ীরা ব্যাংক ঋনে জর্জরিত হচ্ছে আর প্রান্তিক চাষীরা সহায় সম্বল হারাচ্ছে। আর সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব। সংশ্লিষ্ট বিভাগ প্রতিবছর পানি টেষ্টের নামে রুটিন ওয়ার্ক করছে। এ বিষয়ে গবেষনা বা সুদূর প্রসারী কোন প্রকল্প হাতে নিচ্ছে না। ভাইরাসের প্রকৃত কারণ নিশ্চিত করতে না পারায় প্রতিরোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্রমতে, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে সাদা সোনা বলে খ্যাত যে চিংড়ি চাষ হয় তা দেশের মোট উৎপাদনের ৬০ শতাংশ। খুলনা, বাগেরহাট এবং সাতক্ষীরা জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চিংড়ি চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে বেশ কিছু প্রকল্পও গড়ে উঠেছে। যেখানে আধুনিক উপায়ে চিংড়ি চাষ হচ্ছে। এমনকি এ অঞ্চলে চিংড়ির পোনা উৎপাদন হ্যাচারী নির্মিত হয়েছে। বাগদা চিংড়ি রপ্তানি করে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয় করছে সরকার।
জানাযায়, বৃহত্তর খুলনাঞ্চলে ৩ জেলার উপজেলা এলাকার প্রত্যন্তাঞ্চলে ৮০’র দশকে শুরু হয় চিংড়ি চাষ। শুরুর দিকে চিংড়ি চাষ অধিক লাভজনক হওয়ায় দক্ষিনাঞ্চল সহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় ছড়িয়ে পড়তে থাকে এ চাষ ব্যবস্থা। ৯০ দশকের মাঝামাঝিতে দেখা দেয় ভাইরাসসহ নানা রোগ বালাই। বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে চিংড়ি শিল্পকে এগিয়ে নিতে থাকেন এ শিল্পে সংশ্লিষ্টরা। ফলে চড়া মূল্যে হারির টাকা দিয়ে ঘের করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষীরা। এ যেন মরার উপর খাড়ার ঘা; এমন অবস্থার শিকার তারা।
কয়রার গ্রামের চিংড়ি চাষী আব্দুল মজিদ গাজী জানান, ‘আমি ১৫ দিন আগের থেকে চিংড়ি ধরা শুরু করেছি। এবছর চিংড়ির মূল্যটা ভাল আছে, কিন্তু ভাইরাসে ক্ষতি করছে, ঘেরে নামলেই মরা চিংড়ি পাচ্ছি। আমার মনে হয় বাগদা চিংড়িতে পোনার জন্মলগ্ন থেকেই ট্যাংকি থেকে ভাইরাস আসছে’। আরেক ঘের ব্যবসায়ী আব্দুল হামিদ জানান, ‘চিংড়িতে ভাইরাসের কারণে বছরের প্রথমেই আমারা একেবারেই ধরাশয়ী। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে চিংড়ি চাষ করেছি, কিভাবে সেটা পরিশোধ করবো তা ভেবে পারছিনা’।
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘বর্তমানে অধিক তাপমাত্রা ও ঘেরে পোনা ছাড়ার সময় নার্সিং পয়েন্টে না রাখার কারণে চিংড়িতে ভাইরাস লেগেছে। ভাইরাস মুক্ত পোনা কিনা ঘেরে দেওয়ার আগে চাষীদেরকে নিশ্চিত হতে হবে’। জলবায়ু পরিবর্তন, দূর্বল নার্সারী, তাপমাত্রা ওঠানামা, ত্রæটিপূর্ণ ঘের ব্যবস্থাপনা এবং চাষাবাদে ভাইরাসমুক্ত পোনা ব্যবহার না করা ও চাষের ক্ষেত্রে আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ না করাটা চিংড়িতে ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগ বালইয়ের কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের অন্যতম খ্যাত হচ্ছে হিমাইত চিংড়ি, যা রপ্তানি করে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্লেষকরা বলছেন, চিংড়ির বাজার মূল্য বৃদ্ধি, ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগ বালাই দমন করার ক্ষেত্রে সরকারীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ না নিলে চিংড়ি শিল্প ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, আর দেশ হারাবে বৈদেশিক মুদ্রা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।