Inqilab Logo

মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হুমকিতে চিংড়ি শিল্প

মিজানুর রহমান তোতা : | প্রকাশের সময় : ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রতি বছর রফতানি আয় তিন থেকে চারশ’ কোটি টাকা কমছে। ২০১১-১২ সালে চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৫৮০ মিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা আয় করেছিল। সে আয় কমতে কমতে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আয় হয়েছে ৪ হাজার ২১১ কোটি টাকা, যা প্রায় চারশ’ কোটি টাকার মতো কম।
সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি শিল্প হুমকির মুখে। সোনালী আঁশ পাট শিল্প ধংসের পর এবার রফতানি আয়ের অন্যতম খাত চিংড়ি শিল্পও ধীরে ধীরে রুগ্নাবস্থার দিকে যাচ্ছে। চিংড়ি রফতানি আয়ের লক্ষ্য মাত্রা ৩শ’ মিলিয়ন পাউন্ড বা প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হলেও তার অর্ধেকও পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না। বরং প্রতি বছর রফতানি আয় তিন থেকে চারশ’ কোটি টাকা কমছে। ২০১১-১২ সালে চিংড়ি রফতানি করে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ৫৮০ মিলিয়ন ডলার বা ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা আয় করেছিল। সে আয় কমতে কমতে গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আয় হয়েছে ৪ হাজার ২১১ কোটি টাকা। যা প্রায় চারশ’ কোটি টাকার মতো কম। রফতানী কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ ভারত ও ভিয়েতনাম হাইব্রিড ‘ভেনামি’ চিংড়ি উৎপাদন। ভারত, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় হাইব্রিড জাতের চিংড়ির ব্যাপক চাষ শুরু হয়েছে। একর প্রতি উৎপাদন হচ্ছে ৮ থেকে ১০ হাজার কেজি। বাংলাদেশে এ জাতের চিংড়ি চাষের অনুমতি নেই।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্র জানায়, গত কয়েকবছর ধরে চিংড়ি রফতানীর লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করা সম্ভব না হলেও রফতানী বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বিরাট সম্ভাবনাময় সাদা সোনা চিংড়ি শিল্পটি ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছে। কমে যাচ্ছে চিংড়ি রফতানী। এটিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য উল্লেখযোগ্য পরিকল্পনা নেই। অথচ বাংলাদেশে চিংড়ির উৎপাদন ও রফতানী বৃদ্ধি করার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। শুধুমাত্র উদ্যোগের অভাবে সুযোগ কাজে লাগানো যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্টদের কথা, প্রাকৃতিকভাবে চিংড়ির উৎপাদন কমে যাওয়া, চিংড়িঘেরে ভাইরাস, চাষিদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, কারিগরি জ্ঞান ও উন্নত ব্যবস্থাপনার অভাব, কম্পোজিট ইন্ডাষ্ট্রি গড়ে তুলতে না পারা, আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা অনুযায়ী স্বাস্থ্য ও মানসন্মত চিংড়ি উৎপাদনে ব্যর্থতা, মূূল্যের অস্বাভাবিক ওঠানামা, নন ট্যারিফ ব্যারিয়ার এবং অভ্যতরীণ বাজারে চাহিদা বৃদ্ধির কারনে রফতানী কমে যাওয়ায় শিল্পটিতে বিরাজ করছে অশনী সংকেত। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, কাঁচামাল ও পুঁজি সংকট, দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবসহ বিভিন্ন কারণে ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কয়েকটি চিংড়ি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
মৎস্য অধিদপ্তরের চিংড়ি পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রন বিভাগের পরিচালক নিত্য রঞ্জন বিশ্বাস দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, দেশে মোট ২লাখ ৬হাজার চিংডি খামার ও ৯হাজার ৬শ’২৪টি সাদা মাছের খামার রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানীকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৭৮টি। তিনি দাবী করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে মানসন্মত চিংড়ি রফতানীর ক্ষেত্রে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ অনন্য। তারা ল্যাবরেটরি টেস্ট রিপোর্ট ছাড়াই রফতানীর সুযোগ দিয়েছে। তারপরেও কেন চিংড়ি রফতানী দিনে দিনে কমে যাচ্ছে তা তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চিংড়ি চাষ বিশেষজ্ঞ মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা মোঃ অলিয়ার রহমান জানান, মৎস্য গবেষণা ইন্সটিটিউট ও মৎস্য অধিদপ্তর সর্বোতভাবে চেষ্টা চালাচ্ছে চিংড়ি উৎপাদন ও রফতানী বৃদ্ধির। কিন্তু নানাবিধ সমস্যা ও সংকটের কারনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। একাধিক সুত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মৎস্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন উইং রয়েছে। কিন্তু একে অপরের মধ্যে সমন্বয় নেই। বিশেষ করে চিংড়ি বিভাগের নজরদারি একেবারেই ঢিলেঢালা। চিংড়ি চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রফতানীর ক্ষেত্রে যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তার বাস্তবায়ন হয় খুবই কম।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, চিংড়ি ও সাদা মাছ চাষ, বেচাকেনা, প্রক্রিয়াকরণ এবং রফতানি কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের ১ কোটি ৪৬ লাখ ৯৭ হাজার মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে। এদের অধিকাংশই বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মানুষ। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক এস হুমায়ুন কবির জানান, ইউরোপের বাজারগুলোতে ভারত চিংড়ি রপ্তানিতে ‘ট্যাক্স ফ্যাসিলটি’ পায় না। এরপরও প্রতিযোগিতায় আমরা তাদের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারছি না। এর কারণ আমাদের চেয়ে তাদের চিংড়ি উৎপাদন অনেক বেশী। আবার উৎপাদন ব্যয় কম। তিনি বলেন, এখানে ব্যাংকের এত উচ্চ সুদের হার, যা বিশ্বের আর কোথাও নেই। ব্যাংকগুলো চিংড়ি চাষে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করলে চাষিদের পক্ষে উন্নত ব্যবস্থাপনায় চিংড়ি চাষ করা সম্ভব হবে।
আশার কথা, বিপর্যস্ত অবস্থার মধ্যেও চিংড়ি রপ্তানিতে ভিশন-২০২১ ঘোষণা করেছেন রপ্তানিকারকরা। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সুত্র জানায়, পাঁচ বছরের মধ্যে সারাদেশের বর্তমান রপ্তানির প্রায় দ্বিগুণ ১৫শ’ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, অর্থাৎ বাংলাদেশি টাকায় ১৩ হাজার কোটি টাকার চিংড়ি রপ্তানি করতে চায় বাংলাদেশ। তবে এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারি নীতিমালায় পরিবর্তন আনা অত্যন্ত জরুরি।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুড এক্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন সুত্র আরো জানায়, বর্তমানে চাহিদা অনুযায়ী চিংড়ি রপ্তানি করতে পারছে না বাংলাদেশ। চলতি বছরের শুরুতে ঘেরে ভাইরাসজনিত কারণে চিংড়ি উৎপাদন মারাত্মক কমে যায়। এ ছাড়া ঘন ঘন লোডশেডিং ও বরফ সংকটের কারণে ব্যবস্থাপনা ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচামালের (চিংড়ি) অভাবে কোম্পানিগুলো তাদের সামর্থ্যরে ১৫ থেকে ২০ শতাংশের বেশি ব্যবহার করে না। ফলে বৈদ্যুতিক ব্যয়, ব্যাংক সুদের উচ্চ হার ও কর্মচারীদের বেতন মিলিয়ে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে কোম্পানিগুলো। আর এসবের বিরূপ প্রভাব পড়েছে রফতানীতে। মৎস্য চাষীরা জানান, ঘেরের পানির গভীরতা কমে যাওয়া, তাপমাত্রা ও চাষের ব্যয় বৃদ্ধি, ভাইরাস সংক্রমণের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় চাষীরা চিংড়িসহ সাদা মাছ চাষ থেকে সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সুত্রমতে,উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে চিংড়ি চাষের অবকাঠামো গড়ে তোলা, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হ্যাচারির মাধ্যমে পোনার সরবরাহ বৃদ্ধি, আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ব্যাংক-ঋণ প্রদান ও ঝুঁকি কমাতে ‘চিংড়িবীমা’ চালু করার দাবী পুরণ করা জরুরি। তাহলে উৎপাদন ও রফতানী বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
সুত্র জানায়, বিদেশে আধুনিক পদ্ধতিতে একরপ্রতি চিংড়ি উৎপাদিত হয় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কেজি। সেখানে বাংলাদেশে উৎপাদিত হয় মাত্র ৩শ’ থেকে ৫শ’ কেজি। বাগেরহাটের চিংড়িচাষি কোরবান আলী ও খুলনার ডুমুরিয়ার সুনীল কুমার জানান, ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে চিংড়ির উৎপাদন বাড়ানো খুবই কষ্টকর। তার মতে, আধানিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ করলে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব কিন্তু তা ব্যয়বহুল। তাছাড়া ভাইরাসমুক্ত পোনার সংকট, অতিবৃষ্টিতে চিংড়ির ঘের ভেসে যাওয়া, ন্যায্যমূল্য না পাওয়া ও আর্থিক ক্ষতিতে জেরবার হচ্ছেন চাষিরা। রফতানী কমে যাওয়ার আরেকটি কারণ ভারত ও ভিয়েতনাম হাইব্রিড ‘ভেনামি’ চিংড়ি উৎপাদন। বাংলাদেশে এ জাতের চিংড়ি চাষের কোন অনুমোদন নেই।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিজ এ্যান্ড মেরিন বায়োসায়েন্স ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মোঃ আনিসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, চিংড়ি শিল্পটি বিরাট সম্ভাবনাময়। চিংড়ি গবেষণা ইন্সটিটিউটসহ সংশিষ্টরা চেষ্টা চালাচ্ছেন শিল্পটি এগিয়ে নেওয়ার জন্য। কিন্তু রোগবালাইসহ নানা সংকট ও সমস্যায় শিল্পটি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। একই বিশ্বদ্যিালয়ের একই ডিপার্টমেন্টের প্রফেসর ড. মীর মোশাররফ হোসেন দৈনিক ইনকিলাবকে বলেন, পোনা সংকট ও রোগ বালাই বিশেষ করে ‘ইএমএস’ রোগ ও খাদ্যের দাম বৃদ্ধির কারনে আশানুরূপ ফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর আগে ‘হোয়াইট স্পট ডিজিজ’ মারাত্মক ক্ষতি করে দেয় চিংড়ি শিল্পের। তিনি বলেন, গলদা চিংড়ি স্বাদু পানি ও বাগদা চিংড়ি লবনাক্ত পানিতে উৎপাদন হয়। গলদা পোনা পশুর নদীসহ ন্যাচার থেকে সংগ্রহ হয়। কিন্তু নদ-নদীতে নাব্যতা না থাকায় পোনা সংগ্রহ একেবারেই কমে গেছে। আর বাগদা পোনা কক্সবাজার থেকে সংগ্রহ করে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা এলাকায় চাষ হয়। কিন্তু লবনাক্ত পানির অভাবে উৎপাদনে সমস্যা হচ্ছে। কারণ খাল বিল নদীতে পানি কমে গেছে। নাব্যতা না থাকায় জোয়ারভাটা নেই। বাগদা চিংড়ি চাষের জন্য যে পরিমাণ লবনাক্ত পানির প্রয়োজন। তা পাওয়া যায় না।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো ও বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ) সূত্র জানায়, গত কয়েকবছর ধরে চিংড়ি রফতানীর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৩শ’ মিলিয়ন পাউন্ড। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করা সম্ভব হয় না। তবে রফতানী বৃদ্ধির চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সুত্র জানায়, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড চিংড়ি ও সাদা মাছ বিদেশে রফতানি হয়েছে। এ থেকে আয় হয়েছে ৪ হাজার ২১১ কোটি টাকা। এর আগের বছর ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৬৬ মিলিয়ন পাউন্ড চিংড়ি ও সাদা মাছ রফতানি করা হয়। আয় হয় ৪ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। সুত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে রফতানি হয়েছে ১৮৪ মিলিয়ন পাউন্ড। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় ৪ হাজার ৪৩১ কোটি টাকা। ২০১১-১২ সালে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ ২১২ মিলিয়ন পাউন্ড হিমায়িত মাছ রফতানি করে ৫৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করে। যার মূল্য দাঁড়ায় ৪ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সুত্র জানায়, রফতানীর মতো কমছে চাষও। ২০১৪-১৫ সালে ২ লাখ৭৫ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ হয়। সেখান থেকে চিংড়ির উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩০ হাজার ২৪৪ মেট্রিক টন। ২০১৫-১৬ সালে চিংড়ি চাষ হয় ২ লাখ ৭৫ হাজার ৫০৯ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদন হয় ২ লাখ ৩৪ হাজার ১৮৮ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে চিংড়ি চাষের জমি কমে গেলেও চাষের সনাতন পদ্ধতি ত্যাগ করে কিছু চাষী সেমি-ইনটেনসিভ পদ্ধতি ব্যবহার করায় উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। আবার ২০১২-১৩ সালের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশে মোট ২ লাখ ৭৫ হাজার ২৭৪ হেক্টর জমিতে চাষ হয়। এ বছর উক্ত জমি থেকে চিংড়ি উৎপাদিত হয় ২ লাখ ৩১ হাজার ৮৪২ মেট্রিক টন। অপরদিকে আর্থিক অসঙ্গতি এবং আরও কিছু সমস্যার কারণে চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানারও বন্ধ হয়ে গেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১০৪টি ও ২০১৫-১৬ সালে ১০৬টি কারখানা দেখানো হয়। এরমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন অনুমোদিত কারখানা যথাক্রমে ৭৬ ও ৬৬টি। সূত্রমতে, বর্তমানে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ সারাদেশে ৪০টির মতো মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা চালু রয়েছে। এরমধ্যে মাত্র ১০/১২টি কারখানা ভালোভাবে বিদেশে মাছ রফতানি করছে। আর্থিক সংকটের কারণে অন্য কারখানাগুলোর রফতানি অনিয়মিত হয়ে পড়েছে। সুত্রমতে, ঘেরের জমিতে বাড়ি-ঘর তৈরি হওয়ায় চাষের জমি হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় রফতানি কমে যাচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী চলতি বছর আর্ন্তজাতিক বাজারে বাগদা চিংড়ির দাম বৃদ্ধির কারণে রফতানী সম্ভবত কমবে না।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে খুলনার রূপসা, ডুমুরিয়া উপজেলাসহ আশপাশের এলাকায় চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশের ব্যবহার উদ্বেগজনকহারে বাড়ছে। মাছের ওজন বাড়াতে ডিপোগুলো সিরিঞ্জের মাধ্যমে জেলিজাতীয় পদার্থ পুশ করে থাকে বলে অভিযোগ। ইতিপূর্বে র‌্যাব ও পুলিশের অভিযানে খুলনার রূপসা ও ডুমুরিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ পুশ করা চিংড়ি উদ্ধার হয়। সুত্র জানায়, ২টি হিমায়িত খ্যাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানকে সতর্ক করে দেয় নেদারল্যান্ড, ফিনল্যান্ড ও রাশিয়া। এ দু’টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত চিংড়িতে ব্যাক্টেরিয়ার পরিমাণ বেশী পাওয়া যায়। যা মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর। এ ধরণের পণ্য রফতানি না করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছেন বিদেশী ক্রেতারা।



 

Show all comments
  • নিঝুম ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৩৯ এএম says : 0
    বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বিরাট সম্ভাবনাময় সাদা সোনা চিংড়ি শিল্পটিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা
    Total Reply(0) Reply
  • সাব্বির ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৪০ এএম says : 0
    চিংড়ি শিল্প-এর মত সম্ভাবনাময় খাতগুলোকে ভালোভাবে কাজে লাগাতে পারলে দেশ অনেক এগিয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৪১ এএম says : 0
    এই নিউজটি করায় দৈনিক ইনকিলাবকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • কামরুজ্জামান ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ২:৪২ এএম says : 0
    সরকারের উচিত রপ্তানির দিকে বেশি নজর দেয়া
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৫ পিএম says : 0
    ঘেরের জমিতে বাড়ি-ঘর তৈরি হওয়ায় চাষের জমি হ্রাস পাচ্ছে। উৎপাদন কম হওয়ায় রফতানি কমে যাচ্ছে। এই বিষয়টির দিকে সকারের নজর দেয়া উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • নাসির ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১২:৩৬ পিএম says : 0
    উপকূলীয় এলাকায় চিংড়ির উৎপাদন বৃদ্ধিতে চিংড়ি চাষের অবকাঠামো গড়ে তোলা, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে হ্যাচারির মাধ্যমে পোনার সরবরাহ বৃদ্ধি, আধুনিক পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ব্যাংক-ঋণ প্রদান ও ঝুঁকি কমাতে ‘চিংড়িবীমা’ চালু করার দাবী পুরণ করা জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • তাজরিয়া ২১ নভেম্বর, ২০১৭, ১:৩৭ পিএম says : 0
    সোনালী আঁশ পাট শিল্পের মত এই শিল্পটাও যেন ধ্বংস হয়ে না যায়
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিংড়ি

২১ নভেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ