পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রেজাউল করিম রাজু : ভরা বর্ষায় পদ্মার বড় আকারের গলদা কিংবা কুচো চিংড়ি আর বছরের বাকী সময় চট্টগ্রাম ও খুলনা হতে আসা সামুদ্রিক গলদা চিংড়ি দিয়ে এতদিন ভোজন রসিকরা স্বাদ মেটালেও এবার পুকুরের স্বাদু পানিতে উৎপাদিত গলদা চিংড়ি ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। রাজশাহীর পুকুরে পুকুরে আবাদ হচ্ছে গলদা চিংড়ি। প্রথমে দু’চারজন আবাদ শুরু করলেও এখন এর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। পুকুরের মিঠা পানিতে গলদা চিংড়ি চাষ করে সফল হয়েছেন এদের মধ্যে পুঠিয়ার নন্দনপাড়ার ইউসুফ আলী অন্যতম। ২০০৯ সালে মৎস্য বিভাগের কল্যাণে খুলনায় চিংড়িঘের পর্যবেক্ষণ করেন। সংকল্পবদ্ধ হন পুকুরে স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ির আবাদ করবেন। পরের বছর থেকে শুরু করেন আবাদ। সাফল্যও আসে। তাকে দেখে উৎসাহী হয় আরো অনেকে। ইউসুফ আলী এখন পুরোদস্তুর গলদা চাষী। পোনা থেকে শুরু করে বড় বড় চিংড়ি নেবার জন্য সব সময় ভিড় লেগে থাকে তার খামারে। বড় চিংড়ির জন্য শহর থেকে আগাম বুকিং হয়। পোনা আর বড় চিংড়ির এতো চাহিদা যে সামান্যই সরবরাহ করতে পারেন। রাজশাহীর পাবনা, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন উপজেলা থেকে পোনা কেনার জন্য আসে উৎসাহীরা। তিনি চিংড়ির পোস্ট লার্ভা আনেন নাটোর ও পার্বতীপুরের সরকারী হ্যাচারী থেকে। এরপর সেগুলোকে যতœ-আত্তি করে বড় করা। এক মাস বয়েস থেকে পোনা বিক্রি শুরু হয়। আকার ভেদে প্রতিপিস আট থেকে কুড়ি টাকা। এগুলো বড় হয়ে বিক্রি হয় এক হাজার টাকা থেকে সাতশো টাকা কেজি দরে। গত বছরই এই চিংড়ি থেকে আড়াই লাখ টাকা লাভ হয়েছে বলে জানান। শহর থেকে প্রায় পঞ্চান্ন কিলোমিটার দূরে নন্দন গ্রামে ইউসুফ আলীর খামারে গিয়ে দেখা গেলো বড় বড় চিংড়ি ধরতে। সাত/আটটাতেই এককেজি।
আরেক চাষী পবা’র কর্ণহার গ্রামের শহীদুল ইসলাম শহিদ। তার পুকুরে সমুদ্র কিংবা ঘেরের মত বড় চিংড়ি আলোড়ন তুলেছে। চাহিদা আর দামও মন্দ নয়। এতে অনেক মাছ চাষী উৎসাহী হয়ে চাষ শুরু করে দিয়েছে। শহীদের স্বাদু পানিতে গলদা চিংড়ি চাষের শুরুটা এমন উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কাছে থেকে উৎসাহ পেয়ে চিংড়ি চাষে প্রশিক্ষণ নেন। সরকারী অনুদানও জোটে। তার দেড় বিঘা পুকুরে গলদা চিংড়ি চাষের জন্য নিয়মমত উপযোগী করে তোলেন। সেখান নাটোর থেকে তের হাজার পোস্ট লার্ভা বা পোনা চিংড়ি এনে পুকুরে ছেড়ে দেয়া হয়। মাস খানকের মধ্যে পোনা চিংড়িগুলো কিশোর চিংড়িতে পরিণত হয়। এরমধ্যে প্রতিপিস আট দশ টাকা হিসাবে হাজার পাঁচেক কিশোর চিংড়ি বিক্রি হয়েছে। বাকীগুলোর সাথে মিশ্রভাবে কার্প জাতীয় মাছ চাষও চলছে। মাস ছয়েকের মধ্যে পোনা চিংড়িগুলো গায়ে গতরে একশো থেকে সোয়াশো গ্রাম ওজনে পরিণত হয়। বরফ দেয়া কিংবা ওজন বাড়ানোর জন্য ঘেরের জেলী কিংবা অন্য কোন পদার্থ মেশানো নয়। একেবারে জ্যান্ত ও টাটকা নির্ভেজাল বলে এর চাহিদাও দিন দিন বাড়ছে। বিক্রি হচ্ছে সাত থেকে আটশো টাকা কেজি দরে। বাজারে ঘেরের চিংড়ি পাঁচ ছয়শো টাকা কেজি। টাটকা আর স্বাদু পানির বলে ক্রেতারা বেশী দাম দিতে কার্পণ্য করছে না। বরং চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম। এমন তথ্য জানালেন সাহেব বাজারের চিংড়িসহ সামুদ্রিক মাছ ব্যবসায়ী রফিকুল। তার ভাষ্য হলো এমনিতে নদী কিংবা খাল বিলের কুচো চিংড়ির কেজি চার পাঁচশো টাকার নীচে নয়। সেখানে বড় আকারের চিংড়ি থেকে দাম ভাল মিলবে। তাছাড়া ক্রেতাদের সব মাছই জ্যান্ত কেনার আগ্রহ বেশী। পুঠিয়ার চিংড়ি চাষী ইউসুফের সাফল্যে অনেকে আগ্রহী হয়ে চিংড়ি চাষ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে কুড়ি পঁচিশজন চিংড়ি আবাদ করছে। অনেকে তার কাছ থেকে কিশোর চিংড়ি সংগ্রহ করে অন্যান্য মাছের সাথে মিশ্রচাষ হিসাবে আবাদ করছে। লাভও মন্দ নয়। হরিয়ানের মৎস্যচাষী আকবর কিশোর চিংড়ি নিয়ে মিশ্র চাষ করে লাভবান হবার কথা জানান। কার্ভা চাষীর মাছের সাথে পাঁচ ছয় মাসের মধ্যে কিশোর চিংড়ি গলদা হয়ে যায়। একজন মৎস্য বিশেষজ্ঞর অভিমত হলো গলদা চিংড়ি চাষের জন্য বিশেষ কোন পরিচর্যার প্রয়োজন নেই। খাবারে তেমন পার্থক্য নেই। কার্ব জাতীয় মাছের সাথে এর আবাদ করা যায়। তা বাণিজ্যিক ভাবে আবাদ করতে হলে আলাদা ভাবে চাষ করলে অনেক ভাল ফল মিলবে।
আলাপকালে গলদা চিংড়ি চাষীরা সবাই পোস্ট লার্ভার সংকটের কথা জানান। সরকারী খামারে পর্যাপ্ত নয়। তাছাড়া ডিম থেকে পোস্টলার্ভা তৈরী করা বেশ পরিশ্রমের কাজ। সমুদ্রের পানিও ব্যবহার করতে হয়। বেশী সময় ও পরিশ্রমের কারণে বেশী পোস্টলার্ভা তৈরী হয়না। চাহিদার চেয়ে সরবরাহ কম বলে সরকারী খামারে এর দাম বেশী। একজন চাষী জানান, দুশো গ্রাম পোস্টলার্ভার দাম পড়ে সাড়ে সাঁইত্রিশ হাজার টাকা। এতে পনের হাজার পোনা হতে পারে। সে হিসাবে পোস্টলার্ভা কিনতে হয় প্রতি পিস আড়াই টাকা। সরকারী খামারগুলোয় বেশী করে পোস্টলার্ভা উৎপাদন করা গেলে সাদাসোনা খ্যাত চিংড়ি চাষে বিপ্লব ঘটবে। স্বাদু পানির মাছ বলে বিদেশী ক্রেতাদের কাছে হবে আকর্ষণীয়। প্রয়োজন সরকারী যথাযথ উদ্যোগ ও পরিকল্পনা।
রাজশাহীতে কত পুকুরে চিংড়ি চাষ হচ্ছে এমন তথ্য মৎস্য বিভাগের কাছে না থাকলেও মৎস্যচাষীরা জানান, শুরুতে দশ পনের জন থাকলেও সাফল্য দেখে এর সংখ্যা অনেক বড়েছে। তবে মৎস্য কর্মকর্তারা বলছেন বরেন্দ্র অঞ্চলে গলদা চিংড়ি চাষের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছেন তারা। দক্ষিণাঞ্চলের মত বরেন্দ্র অঞ্চলেও সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি চাষের উৎকৃষ্ট ক্ষেত্র হয়ে উঠতে পারে। সে সম্ভাবনার দিকে লক্ষ্য রেখে তারা চাষীদের সব রকমের সহযোগিতা দেবার প্রস্তুতি রেখেছেন্ তাদের উৎসাহ পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছেন। চাষীদের ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করতে পারলে বদলে যাবে মৎস্য অর্থনীতির চেহারা।
এমনিতে রাজশাহী অঞ্চল মাছ উৎপাদনে বেশ এগিয়ে আছে। প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদনও বেশী। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অন্য জেলায় যায় এখানকার মাছ। বিশেষ করে তাজা মাছের ক্ষেত্রে রাজশাহীর সাফল্য ঈর্ষণীয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।