Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাগদা চিংড়ি ঘেরে মড়ক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয়

| প্রকাশের সময় : ২০ মে, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সাতক্ষীরা থেকে আবদুল ওয়াজেদ কচি : প্রচন্ড গরমে সাতক্ষীরায় বাগদা চিংড়ি ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। এতে বাগদা চিংড়ি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রতিদিন ভাইরাস আক্রান্ত ঘেরসমূহে বিপুল পরিমাণ মাছ মারা যাচ্ছে। মৌসুমের শুরুতেই ভাইরাস সংক্রমণ দেখা দেয়ায় হাজার হাজার ঘেরমালিক সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার ছয়টি উপজেলার ৬৬ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর চার হাজার ৬৫ হেক্টর, তালায় তিন হাজার ৩৮ হেক্টর, দেবহাটায় আট হাজার ৮৯৩ হেক্টর, আশাশুনিতে ১৭ হাজার ৪০৩ হেক্টর, কালীগঞ্জ ১৫ হাজার ৯৯৩ হেক্টর ও শ্যামনগর উপজেলায় ১৭ হাজার ৫০৮ হেক্টর জমিতে চিংড়ি চাষ করা হয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৮৯০ হেক্টর, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৭৯৫ হেক্টর, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৬৬ হাজার ৭৩৫ হেক্টর, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫৯ হাজার ৯৪৫ হেক্টর, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৬০ হাজার ৩৪৮ হেক্টর, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৫৮ হাজার ৫৩৩ হেক্টর, ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৫৫ হাজার ৫০৫ হেক্টর ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৫৪ হাজার ৪৮৬ হেক্টর জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করা হয়েছিল।
জেলার বেশি চিংড়ি উৎপাদন হয় শ্যামনগর, কালিগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলায়। এ তিন উপজেলার অধিকাংশ মানুষ চিংড়ির ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু চলতি মৌসুমে যে হারে চিংড়ি মারা যাচ্ছে তাতে অনেকের পথে বসার উপক্রম হয়েছে। আশাশুনি উপজেলার বল­বপুর গ্রামের আব্দুল কুদ্দুস মোড়ল জানান, চলতি মৌসুমের শুরুতেই তার ঘেরে মড়ক দেখা দিয়েছে। কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা গ্রামের ঘেরব্যবসায়ী মঞ্জুর আলম পলাশ জানান, গত বছর চিংড়ি মাছ করে লাভ হওয়ায় এবার দুইটি ঘের থেকে বাড়িয়ে জমি লিজ নিয়ে চারটি ঘের করেছেন। কিন্তু এ মৌসুমে প্রতিদিন মাছ মারা যাচ্ছে। বিনিয়োগকৃত টাকার সিকি ভাগও উঠবে না বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জ এলাকার দাতনিখালির আব্দুস সাত্তার জানান, তার সবকটি ঘেরে ভাইরাস লেগে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এখন আসল উঠবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্য মতে, জেলাতে ৫৫ হাজার ১২২টি রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে। এর মধ্যে সদরে দুই হাজার ১০৫টি, তালাতে এক হাজার ২৯৫টি, দেবহাটায় হাজার ৪৬৯টি, কালিগঞ্জে ১৪ হাজার ৬১৪টি, আশাশুনিতে ১৩ হাজার ২৩৬টি এবং শ্যামনগরে ১৬ হাজার ৪০৩টি বাগদা চিংড়ি ঘের রয়েছে।
এসব ঘেরে চলতি বছরে উপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৭ হাজার ৫০০ মে.টন। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদরে ১৫৪০ মে.টন, তালাতে সদরে ১৩৫৫ মে.টন, দেবহাটাতে ৩৫১৪ মে.টন, কালিগঞ্জে ৬০১০ মে.টন, আশাশুনিতে ৮২৪৫ মে.টন এবং শ্যামনগরে লক্ষ্যমাত্রা ৬৮৩৬ মে.টন।
২০১৬-১৭ অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছিল ২৬ হাজার ৪৮৫ মে. টন। সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য অধিদফতর সূত্র মতে, জেলাতে হেক্টর প্রতি পিএল মজুদ ৫০ হাজারটি। ৩৩৪ কোটি পোনার চাহিদা রয়েছে। বেশির ভাগ পোনা জেলার বাইরে থেকে আসে। ফলে বাগদার এসব পোনা অনেকটা ভাইরাসযুক্ত বলে চাষিরা জানান। জেলাতে ১৮২টি বাগদা পোনার নার্সারি রয়েছে। হ্যাচারি রয়েছে ৯টি। এখান থেকে উৎপাদিত নপ্লি নার্সিং করে পিএল করা হয় ৮০ কোটি। যা জেলার চাহিদার তুলনায় অনেক কম।
জেলা চিংড়িচাষি সমিতির সভাপতি ডাক্তার আবুল কালাম বাবলা জানান, এবার মৌসুমের শুরুতেই ভাইরাস ও হিটস্ট্রোকে অধিকাংশ ঘেরে চিংড়ি মাছ মারা যাচ্ছে। তিনি বলেন, উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার কামালকাটি ও খুঁটিকাটা এলাকায় চলতি মৌসুমে তিনি দেড় হাজার বিঘা জমিতে বাগদা চিংড়ি চাষ করেছেন। গত কয়েক বছরে চিংড়ি ঘেরে এমন মড়ক লাগতে দেখা যায়নি। ভাইরাসের পাশাপাশি এবার হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি চিংড়ি মারা যাচ্ছে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য ঘেরে পানি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। পর্যাপ্ত পানি না থাকায় মড়ক লাগার পাশাপাশি হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে চিংড়ি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, আধুনিক পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষে চাষিদের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। ভাইরাস প্রতিরোধে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ