Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এ মাসে বন্যা, তাপদাহ ও তীব্র ঘূর্ণিঝড়ের আশঙ্কা

চরম ভাবাপন্ন বৈরী আবহাওয়া

| প্রকাশের সময় : ৩ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম


শফিউল আলম : হঠাৎ মেঘ আর ভারী বৃষ্টি-বজ্রবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, আবার রোদ, বজ্রপাতের আধিক্য, কালবৈশাখী, সাগর উত্তাল, অসময়ে কুয়াশা, হঠাৎ শীত আর গরম। এভাবে এলোমেলো ও চরমভাবাপন্ন মেজাজের আবহাওয়া জেঁকে বসেছে। সেই সাথে বৈরীও। এতে করে মানুষের জীবনযাত্রায় তার বিরূপ প্রভাব পড়েছে। কৃষি-খামারে উৎপাদনশীলতা ব্যাহত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যেও পড়েছে ক্ষতিকর প্রভাব। বছর বছর আবহাওয়া-জলবায়ুর স্বাভাবিক মেজাজ-মর্জি পরিবর্তনের নেতিবাচক ধারা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এদিকে আকস্মিক বন্যা ও পাহাড়ি ঢল, ঘূর্ণিঝড়, কালবৈশাখী বা বজ্রঝড়, বজ্রপাত ও তীব্র তাপদাহের মধ্য দিয়ে চলতি মে (বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ) মাস প্রতিকূল হয়ে উঠতে পারে। গত এপ্রিল ((চৈত্র-বৈশাখ) মাসে বাংলাদেশে তিন দশক ব্যবধানে সর্বোচ্চ বর্ষণ রেকর্ড হয়েছে।
দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের জন্য গতকাল (মঙ্গলবার) আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভা সূত্রে জানা গেছে, চলতি মে মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।  দেশে ও উজান থেকে (ভারতের) অতিভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের কারণে দেশের উত্তর,  উত্তর-পূর্ব  ও দ্িক্ষণ -পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে আক্িস্মক বন্যা হওয়ার আশংকা রয়েছে। উত্তর-পূর্বাঞ্চলে তথা বৃহত্তর সিলেটে একমাস না যেতেই ফের ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বন্যা সংঘটিত হলে বিশেষত হাওর অঞ্চলে তা মরার ওপর খাঁড়ার হয়ে দেখা দিতে পারে। দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি থেকে তীব্র আকারে কালবৈশাখী বা বজ্রঝড় এবং দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা থেকে মাঝারি আকারে কালবৈশাখী ঝড়ের আশংকা রয়েছে। মে মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ১ বা ২ টি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ঊর্ধ্বে) বয়ে যেতে পারে। দেশের অন্যত্র ২-৩ টি মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তবে এ মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।     
বিশেষজ্ঞ কমিটির উক্ত সভায় গত এপ্রিল মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১০৬.২ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। পূবালী বায়ুর সাথে পশ্চিমা বায়ুর মিলনের ফলে অতিবৃষ্টি হয়। অতিবৃষ্টির সাথে ভারত থেকে আসা ঢলে হাওড় অঞ্চল বানে ভেসে যায়। চট্টগ্রামে মারাত্মক পানিবদ্ধতা সৃষ্টি হয়, যা বর্ষাকালকেও ছাড়িয়ে যায়। গত মার্চ মাসেও স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়। এপ্রিলের বর্ষণ গত ৩০ বছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এপ্রিলে এর আগে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় ১৯৮৭ সালে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭৬ শতাংশ বেশি। গত ৩৭ বছরে বাংলাদেশে মোট ৮ বার এপ্রিলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়। ১৯৮১ সালের এপ্রিলে স্বাভাবিকের তুলনায় ১৬৮ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়।      
চরমভাবাপন্ন অবস্থা        
চিরচেনা বৈশিষ্ট্যের বদল ঘটে এলোমেলো হয়ে উঠেছে আবহাওয়া-জলবায়ু। ক্রমাগত চরমভাবাপন্ন আচরণ করছে। এতে বিপর্যস্ত হয়ে উঠেছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। নিত্যনতুন দুর্যোগ, দুর্ভোগ ও সংকট তৈরি হচ্ছে। ফল-ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়ে উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। অনেক সময়ই পূর্বাভাসের সাথে আবহাওয়া-রাজ্যের বাস্তব অবস্থা মিলছে না। মানুষের বান্ধব না হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন জটিল সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে। জনজীবনে অনিষ্ট ডেকে আনছে। হ্রাস পাচ্ছে মানবসম্পদের সার্বিক উৎপাদনশীলতা। কমছে সক্ষমতার হার। সাগরের উচ্চতা বৃদ্ধি ও করাল গ্রাসে বসতি হারিয়ে প্রতিবছর পিছু হটে মূল ভূখন্ডের দিকে ধেয়ে আসছে উপকূল, চর, দ্বীপাঞ্চলের ভূমি ও বসতি হারা অভাবী মানুষজন। সাগরের উপরতল ফুলে-ফেঁপে উঠছে। উপর্যুপরি সতর্ক সংকেত দেখাতে হচ্ছে সমুদ্র বন্দরসমূহকে।
সা¤প্রতিক পর্যবেক্ষণে আবহাওয়া-জলবায়ুর অন্যতম প্রধান নিয়ামক ও সূচক বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি হচ্ছে। বাতাসের আর্দ্রতায়ও হেরফের হচ্ছে। অনুভূত হচ্ছে অসহনীয় ভ্যাপসা গরম। বছরের বছরের অধিকাংশ সময়ই গুমোট হয়ে থাকছে আবহাওয়া। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আক্তার মল্লিক সম্প্রতি এক সেমিনারে তথ্য প্রকাশ করেন, বৈশ্বিক ক্রমবর্ধমান গতিতে উষ্ণায়নের ধারায় বিগত ৫০ বছরে বাংলাদেশের তাপমাত্রা গড়ে শূণ্য দমমিক ৪ ডিগ্রি সে. বেড়ে গেছে। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকা ভেদে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সে. পর্যন্ত বেড়ে গেছে। গত ৫০ বছর সময়কালে বৃষ্টিপাত বেড়েছে প্রায় গড়ে ২৫০ মিলিমিটার। বিগত ৫০ বছরের গড় বৃষ্টিপাত এবং তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশে বিশেষত খাদ্য ও কৃষিখাতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে। এসব নেতিবাচক সংকট ও প্রভাব মোকাবেলায় আমাদের সুনির্দিষ্ট ও যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে এগিয়ে যেতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ