বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
স্টাফ রিপোর্টার : উন্নত বিশ্বের আদলে হচ্ছে রাজধানীর বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় কিলোমিটার ডিজিটাল-সবুজ সড়ক। সড়কের পাশে থাকছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাসহ ১২টি যাত্রী ছাউনি।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে বনানী থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এ সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ করছে ভিনাইল ওয়ার্ল্ড নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রায় ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হচ্ছে। তবে এ প্রকল্পে সরকারের কোনো টাকা ব্যয় হচ্ছে না। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে তাদের লগ্নীকরা এই খরচের মূল্য তুলে নেবেন বলে জানা গেছে।
গত বছরের জুলাই মাসে উল্লিখিত এ সড়কটির আধুনিকায়নের কাজ শুরু হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। এরপর জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক সুবিধাসংবলিত ডিজিটাল সড়কের দু’পাশের উদ্বোধন করবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বনানী-বিমানবন্দর ডিজিটাল সড়কে রয়েছে ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত আন্দোলন-সংগ্রামের বিভিন্ন ঘটনার ম্যুরাল। এসব ম্যুরাল অক্ষত রেখেই সৌন্দর্য বর্ধনের এই কাজ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, কুড়িল, শেওড়া, কাওলা ও বিমানবন্দরসহ কয়েকটি এলাকায় ১২টি যাত্রী ছাউনি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। যাত্রী ছাউনি থাকছে ক্যাফে ও নামাজের স্থানের পাশে। ক্যাফে থেকে হালকা খাবারসহ যে কোনো খাবার কেনা যাবে কয়েন দিয়ে। পাওয়া যাবে মোবাইল ফোন রিচার্জ ও মোবাইল টপ-আপসহ এটিএম বুথ সেবা। এ ছাড়া যাত্রী ছাউনির মধ্যে থাকবে আধুনিক টয়লেট। থাকবে মায়েদের সুবিধার্থে ব্রেস্টফিডিং কর্নার।
এ ছাড়া থাকবে ডিজিটাল ডাস্টবিন বক্স। যেখানে ময়লা ফেললেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চলে যাবে নিচে। থাকবে ডিজিটাল বোর্ড। এতে নির্দেশনা দেয়া থাকবে কোন বাস কোথায় যাবে, সময়সহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।
দীর্ঘ এ ছয় কিলোমিটার সড়কে ডিজিটাল প্রযুক্তির পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব গাছ লাগিয়ে সবুজ ঢাকা তৈরি করারও পরিকল্পনা রয়েছে। দেশিসহ বিশ্বের আধুনিক বিভিন্ন জাতের ফুল ও ফলের গাছ লাগানোর কাজ চলছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন, সারা বছরই ফুল ও ফলের শোভাবর্ধন করবে এখানে। সৌন্দর্য উপভোগের সুযোগ দিতে স্বল্প আকারের চা-বাগান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও সড়কের বিভিন্ন এলাকায় ১২টি কৃত্রিম ঝরনা বসানো হয়েছে।
এ সড়কটি হবে পথচারীবান্ধব। ফুটপাতে প্রতিবন্ধী ও বাচ্চাদের ট্রলি টানার আলাদা লেন থাকবে। চলতে গিয়ে ক্লান্ত পথিক বিশ্রাম নিতে পারবেন। এজন্য বসানো হচ্ছে ১৫০টি গার্ডেন বেঞ্চ। হাঁটার জন্য হচ্ছে আলাদা লেন।
এ ছাড়া সড়কটির পাশে বেশ কয়েক জায়গায় ফুলের ছোট বাগান, কৃত্রিম ঝরনা, আলোর খেলা, বাহারি মাছের লেকসহ নান্দনিক দৃশ্য তৈরির কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। সড়কের দুপাশে কয়েকটি মাউন্টেন ঝরনা বসানো হয়েছে, যা থেকে পাহাড়ি ঝরনার মতো পানি ঝরতে থাকবে। বিমানবন্দর থেকে নিকুঞ্জ পর্যন্ত বাইসাইকেল চালানোর জন্য আলাদা লেন করা হয়েছে। নিকুঞ্জ লেকে করা হচ্ছে শিশুদের পার্ক।
সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় এলইডি মনিটর বসানো হবে, যার মাধ্যমে জানা যাবে দেশে কোথায় কী হচ্ছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ক্রিকেট, ফুটবলসহ বিভিন্ন খেলার খবর ও বিভিন্ন লাইভ অনুষ্ঠান দেখা যাবে। এ ছাড়া আবহাওয়ার খবর জানা যাবে। এ সড়কে বিনামূল্যে ওয়াইফাই সংযোগ পাওয়া যাবে। একসঙ্গে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।
ছয় কিলোমিটার সড়কজুড়েই থাকবে সুপ্রশস্ত দৃষ্টিনন্দন ফুটপাত ওয়াকওয়ে। পুরো ওয়াকওয়ে সারা রাত আলোকিত থাকবে। সাদা এলইডি ফোকাসিং করা লাইটের এমন ব্যবহার এই প্রথম দেশের কোনো সড়কে করা হচ্ছে।
সড়কটির সব কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে বনানীতে কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি কুড়িলে একটি সাব-কন্ট্রোল রুম ও অভিযোগ কেন্দ্র হবে। সড়কটির দেখভালের দায়িত্বে সার্বক্ষণিক থাকবে ৩০ জন গার্ড। এ জন্যে ভিনাইল ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে সওজের ১০ বছরের চুক্তি হয়েছে। এক হাজার ৫০০ সিসি ক্যামেরায় পুরো সড়ক তদারকির আওতায় থাকবে।
বনানী থেকে বিমানবন্দর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নির্মাণ শ্রমিকরা দিন-রাত কাজ করছেন। লোহার শিকল ঝালাই করে ফুটপাতে বেষ্টনি তৈরি করছে। ফুটপাতের নির্ধারিত স্থানে ইট-পাথরের সুড়কি দিয়ে তৈরি হচ্ছে নানা আল্পনা। সড়কের সড়ক বাতি বদলে এলইডি বাতি লাগানো হচ্ছে। হোটেল রেডিসনের সামনে একটি ঝরনা ও ২০০ মিটার হাঁটার রাস্তা নির্মাণ কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এখানে রয়েছে একটি ঝরনা। ঝরনার পানিতে খেলছে বিভিন্ন রঙের মাছ। এ ব্যাপারে জনপথ অধিদপ্তরের ঢাকা সার্কেলের তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ সবুজ উদ্দিন খান বলেন, উন্নত বিশ্বের আদলে সড়কটি তৈরির কাজ চলছে। সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ স্লোগানের একটি অংশও বলা যায় একে।
তিনি বলেন, প্রকল্পটিতে ব্যয় হচ্ছে ৯০ কোটি টাকা। নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানটি নির্ধারিত স্থানে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে নিজেদের বিজ্ঞাপন দেবে এবং ১০ বছর দেখাশুনা করবে।
তিনি আরো বলেন, এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল-সবুজ সড়ক। বিদেশ থেকে কোনো অতিথি এলে যেন দেশ সম্পর্কে ভালো একটি ধারণা পান।
ভিনাইল ওয়ার্ল্ড গ্রুপের স্বত্বাধিকারী আবেদ মনসুর বলেন, উন্নত বিশ্ব আমাদের দেশকে স্বল্প আয়ের দেশ বা মধ্য আয়ের দেশ বলে জানে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে যে ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বলছি, তার ধারণা পাবে। বাংলাদেশ সম্পর্কেও তাদের ধারণা পাল্টে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।