পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
মোনা আলামি, দি নিউ আরব : তুরস্ক ২৬ এপ্রিল সকালে ইরাকের শিনজার পর্বতে অবস্থানরত সিরিয়ার কুর্দি গ্রæপগুলোর উপর বিমান হামলা চালিয়েছে। এ বোমা বর্ষণে এক ডজনেরও বেশী লোকের মৃত্যু স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে ইরাকে গোলযোগের বহু ক্ষেত্র রয়েছে যেগুলো মসুলের পতনের পর এক নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করবে।
শিনজার যেভাবে দেখা গেছে, সে রকম এ গোলযোগ ক্ষেত্রগুলো যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে, কয়েকটিতে ইন্ধন যোগাতে পারে ভূ-রাজনৈতিক ও জাতিগোষ্ঠিগত দ্ব›দ্ব, অন্যগুলোতে বিস্ফোরণ ঘটতে পারে ইসলামিক স্টেট (আইএস) গ্রæপের অব্যাহত উপস্থিতির কারণে।
তুর্কি জঙ্গি বিমানগুলো ২৫ এপ্রিল এক দ্বিমুখী হামলায় শিনজার অঞ্চলে কুর্দি জঙ্গিদের উপর বোমাবর্ষণ করে। এদিন তারা উত্তরপূর্ব সিরিয়ায় কুর্দি জঙ্গিদেরও লক্ষ্যবস্তু করে। শিনজার হচ্ছে ইরাকের সাথে সিরিয়া ও তুরস্ক সীমান্তে অবস্থিত পার্বত্য এলাকা যেখানে সংখ্যালঘু ইয়াজিদিরা বাস করে।
তুর্কি বিমান হামলায় কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) ১৮ জন যোদ্ধা নিহত হয়েছে। তুর্কি সামরিকবাহিনীর কথা যে পিকেকের উপস্থিতির কারণে সিনজার সান্ত্রাসী আস্তানায় পরিণত হয়েছে। তবে ইরাকি কুর্দিস্তান কর্তৃপক্ষ এ দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে। তুরস্কের সাথে তাদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে।
সাংবাদিক ও কুর্দি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ভøাদিমির ভ্যান উইলজেনবার্গ ব্যাখ্যা করে বলেন যে শিনজারে আরো অস্থিতিশীলতা দেখা দিতে পারে। তিনি মনে করেন যে পিকেকে ও কেডিপি উভয়েই বৈরী অবস্থানে রয়েছে। তারা কেউই সিনজারে কোনো এলাকার ব্যাপারে ছাড় দিতে অক্ষম।
তুরস্কের সাম্প্রতিক হামলা থেকে দেখা যায়, সিনজার ভূ-রাজনৈতিক দ্ব›েদ্বর কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। কেউ কেউ আন্তঃকুর্দি অবিশ^াসে ইন্ধন দিচ্ছে। তুরস্কের প্রধান শত্রæ পিকেকের সাথে রয়েছে ইয়াজিদি শিনজার প্রতিরোধ ইউনিটের (ওয়াইবিএস) মৈত্রী যারা গত মার্চে কুর্দিস্তান ডেমোক্র্যাটিক পার্টির (কেডিপি) অঙ্গ সংগঠন সিরীয় কুর্দিদের ‘রোজ পেশমার্গা’র সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়।
সিরিয়ার পিকেকে কুর্দিদের সাথে তুরস্কের দ্ব›দ্ব পিকেকে-কে ইয়াজিদি ও ইরাকি পেশমার্গার মধ্যকার উত্তেজনায় জড়িয়ে ফেলে। ২০১৪ সালে আইএসের হামলার সময় ইরাকি পেশমার্গা তাদের পরিত্যাগ করে বরে ইয়াজিদিদের অভিযোগ। বিষয়টিকে আরো জটিল হয়ে ওঠে যখন এরবিলের সূত্রগুলো পিকেকে ও ওয়াইবিএসকে ইরানের ঘনিষ্ঠ শিয়া পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্সের (পিএমএফ) সমর্থনপুষ্ট বলে দাবি করে।
তুজ খুরমাতো শহরেও অনুরূপ ভূরাজনৈতিক হিসাব নিকাশ চলছে। শিয়া ও সুন্নী উভয় মতের ১০ লাখ কুর্দি ও তুর্কমেন অধ্যুষিত শহরটি একটি বিতর্কিত অঞ্চল। কুর্দি প্রশাসন ও বাগদাদ সরকার উভয়েই শহরটিকে তাদের বলে দাবি করে।
কিরকুকের কাছে এবং ইরান সীমান্তের নিকটে অবস্থিত তুজ খুরমাতো শহরে গত বছর পিএমএফ ও কুর্দি পেশমের্গা বাহিনীর মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ ঘটে। সিনজারের মত এখানেও লড়াইটা দ্বিমুখী। একদিকে রয়েছে আরব-কুর্দি দিক, আরেকদিকে ভূরাজনীতি।
কিছু পর্যবেক্ষকের মতে, ইরান সমর্থিত পিএমএফের দিভালা অঞ্চল ও কিরকুকের অংশবিশেষ থেকে সুন্নী আরব ও তুর্কমেনদের বিতাড়িত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এর ফলে ইরান থেকে ইরাক ও সিরিয়া হয়ে লেবানন পর্যন্ত একটি শিয়া বলয় তৈরী হবে। কিন্তু এ ব্যাপারে ইরাকি কুর্দি ও তাদের তুর্কি সমর্থকরা প্রচÐ প্রতিরোধ সৃষ্টি করবে।
ভ্যান উইলজেনবার্গ বলেন, আইএস নির্মূল হওয়ার পর তুজ খুরমাতোর বিতর্কিত এলাকা নিয়ে পেশমার্গা ও শিয়া আধা-সামরিক গ্রæপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ ঘটার সম্ভাবনা আছ্।ে
ইরাকে আরেকটি গোলযোগ ক্ষেত্র হল হাবিজা। সেখানে হুমকি শিনজার ও তুজ খুরমাতোর মত ভূরাজনৈতিক দ্ব›দ্ব নয়, তা হচ্ছে আইএসের অব্যাহত উপস্থিতি।
মসুলের পর হাবিজা। হাবিজা আইএসের একটি শক্তঘাঁটি। এখানে বহু অপরিচিত যোদ্ধা রয়েছে। কুর্দিস্তান আঞ্চলিক সরকারের উপদেষ্টা কর্নেল হাররু শিউট হাবিজাকে সাদ্দামপন্থী ও সরকারবিরোধী মনোভাবের গরম ক্ষেত্র বলে আখ্যায়িত করেন। তবে যৌক্তিক কথা হল, হাবিজা আইএসের আগে থেকেই বছরের পর বছর ধরে বিরোধী ও সন্ত্রাসীদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল ছিল।
সুন্নী প্রধান সাড়ে ৪ লাখ অধিবাসীর শহর হাবিজা সালাহউদ্দিন প্রদেশসহ কায়ারা, কিরকুক ও মসুলের কাছাকছি অবস্থিত।
সামরিক গুরুত্ব সত্তে¡ও হাবিজা দখলের সামরিক অভিযান বিলম্বিত হয়েছে একদিকে কুর্দি আরেক দিকে ইরাকি সৈন্যদের মধ্যে মতবিরোধের কারণে। কর্নেল হাররু বলেন, এখানে যুক্তি হচ্ছে যে ইরাকি সেনাবাহিনী ও পপুলার মোবিলাইজেশন ফোর্স তিনদিক থেকে ও কুর্দিরা আরেক দিক থেকে আক্রমণ করবে।
আইএস যোদ্ধারা অন্যান্যস্থানে হামলা চালানোর জন্য হাবিজাকে ব্যবহার করছে। গত অক্টোবরে তারা এখান থেকে কিরকুক ও তিকরিতে অভিযান চালায়। গত এপ্রিলে তারা কিরকুকে কয়েক দফা আত্মঘাতী বোমা হামলা চালায়।
মসুলের পর ইরাকিবাহিনীর পরবর্তী লক্ষ্য হতে পারে হাবিজা। কিন্তু আইএসের বৃহত্তম ঘাঁটি মসুলের পতন ঘটলেও ইরাকের নিরাপত্তা উদ্বেগের অবসান ঘটবে না। কারণ হাবিজা, শিনজার ও তুজ খুরমাতো ইরাকের স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হিসেবে রয়ে যাবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।