Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পবিত্র হজ বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক -খুৎবা পূর্ব বয়ান

শামসুল ইসলাম | প্রকাশের সময় : ১৭ জুন, ২০২২, ৬:০২ পিএম | আপডেট : ৬:০৪ পিএম, ১৭ জুন, ২০২২

পবিত্র হজ আল্লাহর প্রতি প্রেম নিবেদন ও বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক। যাদের ওপর হজ ফরজ হয়েছে তাদের দ্রুত হজ পালনই উত্তম। পবিত্র হজের শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর প্রেম মহব্বত অর্জনে ও পরকালে জান্নাত লাভে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণে পরস্পরে কলহ বিবাদ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে ইসলাম দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে নিষ্ঠার সাথে সকলকে কাজ করতে হবে। আজ বাদ জুমা খুৎবা পূর্ব বয়ানে পেশ ইমাম এসব কথা বলেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি মো.রুহুল আমিন আজ জুমার বয়ানে বলেন, বিত্তশালী সকল নরনারীর ওপর হজ ফরজ করা হয়েছে। স্বচ্ছল ব্যক্তিদের হজ পালনে দেরি করা উচিৎ নয়। খতিব বলেন, হজে মাবরুর যাদের নছিব হবে তারা জান্নাতি। খতিব বলেন, হজ ফরত হলে দ্রুত হজযাত্রার নিবন্ধন করুন। তিনি বলেন, রাসূল (সা.) বলেছেন,কারো ওপর হজ ফরত হলে সে যদি হজ না করে মারা যায় তা’হলে সে ইহুদি নাসারা হয়ে মারা গেলো না কী হয়ে মারা গেলো তা’আমার দেখার বিষয় নয়।
ঢাকার মিরপুরের ঐতিহ্যবাহী বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খতিব মুফতি আব্দুর রহীম কাসেমী জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, পবিত্র হজ আল্লাহর প্রতি প্রেম নিবেদন ও বিশ্ব মুসলিমের ঐক্যের প্রতীক। প্রতি বসর হজের মওসুমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হজব্রত পালনে লাখো মুসলমান মাতা পিতা স্ত্রী পুত্র ভাই বোন ও ঘর বাড়ী সহায় সম্পত্তি ছেড়ে, সাদা কাপড়ে ইহরাম বেঁধে, অশ্রুশিক্ত নয়নে বিদায় জানায় আত্মীয় স্বজন পাড়াপ্রতিবেশকে। আল্লাহর প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে সবকিছু ত্যাগ করে প্রেমিকের ঘর বাইতুল্লাহর জিয়ারতে উপস্থিত হন। খাওয়া দাওয়ার প্রতি থাকেনা কোন আগ্রহ, থাকেনা আরাম আয়েশের কোন চিন্তা। এরা তো আল্লাহর প্রেমে মগ্ন। এরা তো আল্লাহর মেহমান। মুখে শুধু প্রেমাস্পদের নাম ও তালবিয়্যাহ “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাশারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ান নে'মাতা লাকা ওয়াল মূলক, লাশারিকা লাকা লাব্বাইক'। কখনো কাবাতুল্লাহর চতুরপার্শ্বে চক্কর মারতে থাকে, চক্করের পর মাকামে ইব্রাহিমে দুই রাকাত নামাজ আদায়ে সিজদায় মাথা লুটিয়ে দেয় মহান প্রভূর তরে। দুই হাত তুলে প্রেম নিবেদন করতে থাকে আল্লাহর দরবারে, মহান বিধাতা প্রেমিকের কাছে। নিজের অপরাধ স্বীকার করে এবং ভবিষ্যতে অপরাধ না করার অঙ্গীকার করে, মুলতাজামকে জড়িয়ে ধরে, কাবার চৌকাঠে মাথা ঠুকিয়ে প্রেমাস্পদের জন্য চিৎকার করতে থাকে, হাজরে আসওয়াদে চুম্বন দেওয়ার চেষ্টা ও সাফা মারওয়ার মাঝে ছোটাছুটি করে, জমরাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করে, তাও আবার একবার নয়, একস্থান থেকে নয়, তিন তিনবার তিন স্থান থেকে। আরাফার ঐতিহাসিক ময়দানে সারা দিন অবস্থান করে সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে চলে যান মুজদালিফার ময়দানে খোলা আকাশের নিচে। এত কিছুর পরও তার মনে তৃপ্তি আসে না। আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মনের তৃপ্তি ও ইব্রাহিমি ত্যাগের চেতনায় পশু কোরবানি করে, বিনিময় যদি পাওয়া যায় স্থায়ী শান্তির জায়গা জান্নাত, তাহলেই তো এই প্রেম ও কোরবানি সার্থক হবে মনে করে। লাখো মানুষের একই আওয়াজ, একই চিন্তা, একই উদ্দেশ্য ও একই গন্তব্য। শুধুই আশা আকুতি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালে শান্তি। জান্নাত লাভ। এ যেন এক আল্লাহ প্রদত্ত অনুভূতি, যা ভাষায় ব্যক্ত করা অসম্ভব। এখানে নেই কোন ভেদাভেদ, নেই কোন মারামারি হানাহানী, ঝগড়া বিবাদ, রাজনৈতিক ঝঞ্ঝা, আরব আজম সবাই এক, সবাই মুসলমান। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের বাণী ”মুসলমান পরস্পরে ভাই ভাই” এর এক উজ্জল দৃষ্টান্ত। সবাই যেন এক মায়ের এক পিতার সন্তান। কি ঐক্য, কত মিলমিশ , এ এক জান্নাতি পরিবেশ।
খতিব পবিত্র হজ্বের শিক্ষা নিয়ে আল্লাহর প্রেম, মহব্বত অর্জনে ও পরকালে জান্নাত লাভে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ অনুসরণে পরস্পরে কলহ বিবাদ দূর করে ঐক্যবদ্ধভাবে কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে ইসলাম, দেশ, জাতি ও মানবতার কল্যাণে নিষ্ঠার সাথে সকলকে কাজ করার আহবান জানান। ঢাকার মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী আজ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ানে বলেন, মসজিদ ভিত্তিক ছবাহী মক্তব বা সকালবেলার কোরআন শিক্ষার আসর ইসলামী ঐতিহ্যের অংশ। ধর্মীয় জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে মক্তব হচ্ছে মুসলমানদের প্রথম পাঠশালা এবং কোরআনে কারিম শিক্ষার প্রাথমিক স্তর। আমাদের বাচ্চাদের নীতি নৈতিকতা এবং ইসলামী সংস্কৃতি শেখারও অনন্য মাধ্যম এই মক্তব। এই মক্তবগুলোর পরিচর্যা করা দরকার। কারণ, মক্তব টিকে থাকলেই আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের ঈমান আমল ঠিক থাকবে। ধর্মীয় চেতনাবোধ তাদেরকে অপরাধমুক্ত জীবন গঠনে উৎসাহিত করবে। আজকে দিকে দিকে স্কুল কলেজ পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের মাঝে ইসলামের প্রতি দরদ এবং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি ভালোবাসার কলিজা ঠান্ডা করা যে দৃশ্য দেখা যায়, এটা ধরে রাখতে হলে মক্তব পরিচর্যার বিকল্প নেই। খতিব আরও বলেন, আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, "আমি আমার বান্দাদের মাঝে তাদেরকে সেই কিতাবের (কোরআন) উত্তরাধিকারী করেছি, যাদেরকে পছন্দ করে মনোনীত করেছি।" (সূরা ফাতির-৩২)। সুতরাং উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রতিটি মানুষের কোরআনের জ্ঞানার্জন করা ফরজ। হযরত উসমান (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীসে রাসূল (সা.) কোরআন পাঠের অত্যাধিক গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, "তোমাদের মধ্যে সে-ই উত্তম, যে কোরআন নিজে শিখে এবং অন্যকে শিখায়।" (বোখারী-৫০২৮)। ঢাকার শেওড়াপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মুফতি সিফাতুল্লাহ রহমানি আজ জুমার বায়ানে বলেন, রাসূল (সা.) শুধু মুসলমানদের নবী নন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে "আপনি বলে দিন, হে মানবমন্ডলী তোমাদের সবার প্রতি আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল সুতরাং তোমরা বিশ্বাস স্থাপন করো আল্লাহর উপর, তাঁর প্রেরিত উম্মি নবীর উপর তোমরা তাঁর অনুসরণ করো। আশা করা যায় তোমরা সঠিক পথপ্রাপ্ত হবে।" (সূরা আ'রাফ,১৫৮)।
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সেরা মহামানব। সকল ভালো গুনের অধিকারী। করুণার প্রতিচ্ছবি, দয়ার আঁধার, পরোপকারি। মুসলিম, অমুসলিম সকলের হক্ব আদায়কারী, আমানতদার, বিশ্বস্ত, সর্বোত্তম উন্নত চরিত্রের অধিকারী এককথায় বলতে গেলে পবিত্র কোরআনের সকল গুণ অর্জনকারী মহান সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ রাসূল। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে- "আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী। " (সুরা আল ক্বলম,০৪)
উল্লেখিত আয়াতগুলোর আলোকে গোটা মানবজাতির দায়িত্ব হলো মহান আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখার পাশাপাশি প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের সকল বিষয় এবং গুণাবলীর প্রতিও সুদৃঢ় বিশ্বাস রেখে নিজেদের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- "আপনি বলে দিন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো তাহলে আমাকে অনুসরণ করো, যাতে আল্লাহও তোমাদিগকে ভালোবাসেন এবং তোমাদের পাপ মার্জনা করে দেন।'(সূরা আলে-ইমরান,৩১) সুতরাং, কোনো অবস্তাতেই প্রিয় নবিজির কোনো বিষয় নিয়ে কটূক্তি করা সমালোচনা করা সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ, ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ এবং লা'নতের উপযুক্ত।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ