Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ওদের খবর কেউ নেয়নি

দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জনের মৃত্যু

| প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম



স্টাফ রিপোর্টার : দেশের উত্তরের জনপদ দিনাজপুরে বয়লার বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছে ১৩ জন। দগ্ধ শরীর নিয়ে রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দুই ডজন মানুষ। এক সপ্তাহ আগে এ ঘটনা ঘটলেও কেউ তাদের খবর নেয়নি। মিল মালিক এবং সরকার কোনো পক্ষই নিহতদের পরিবারের খোঁজ নেয়নি। ক্ষতিপূরণ,  আর্থিক সহায়তা দূরের কথা সমবেদনা পর্যন্ত জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি কেউ। হাসপাতালে যারা চিকিৎসাধীন রয়েছে তাদের মধ্যে আতঙ্ক কে জানে এবার কার পালা? লাশের মিছিলে আর কত প্রাণ যোগ হবে শেষ পর্যন্ত কেউ জানে না। প্রতি মুহূর্তে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায় সময় পার করছেন নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা এই বুঝি খবর এলো সংসারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির মৃত্যুর। নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম।
সঙ্গে রয়েছে পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম মানুষটির অকাল মৃত্যুতে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তা। ১৯ এপ্রিল দিনাজপুর জেলা সদর উপজেলার গোপালগঞ্জ শেখহাটি এলাকায় যমুনা অটোরাইস মিলে ঘটে ভয়াবহ বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা। ওই ঘটনায় অগ্নিদগ্ধ হয় ২৮ জন। পরে ২৪ এপ্রিল রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনোরঞ্জন রায় (৩৬) নামের একজন। এ নিয়ে এই ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জন। খবরে প্রকাশ অগ্নিদগ্ধদের মধ্যে ২১ জনকে উদ্ধার করে প্রথমে নেয়া হয় দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিক্যাল কলেজ। সেখান থেকে আশঙ্কাজনক ১৯ জনকে পাঠানো হয় রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। গত রোববার পর্যন্ত সেখানে (রংপুরে) মারা যায় ১২ জন। এরা হলেন, মকছেদ আলী, মো. আরিফ, অঞ্জলী বালা, রুস্তম আলী, রনজিৎ বসাক, সফিকুল ইসলাম, উদয় চন্দ্র, দেলোয়ার হোসেন, দুলাল চন্দ্র, মুকুল মিয়া, মো. মুন্না ও মো. রিপন। রংপুর মেডিক্যালে চিকিৎসাধীন ৭ শ্রমিকের মধ্যে ৬ জনের অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে সেখানকার চিকিৎসকরা। এদের মধ্যে তিনজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। গত সোম-মঙ্গলবার সরেজমিনে সদর উপজেলার চেহেলগাজী ইউনিয়নের উত্তর ভাবনীপুর ও আশপাশের গ্রামগুলো ঘুরে সাংবাদিকরা দেখেছেন নিহতদের পরিবারগুলোতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের আহাজারীতে এলাকার পরিবেশ হয়ে উঠেছে ভারি। প্রতিদিন কোনো না কোনো বাড়িতে চলছে নিহতদের রুহের মাগফিরাত কামনায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিল। হতাহতের স্বজনদের অভিযোগ, যমুনা অটোরাইস মিলের মালিক সুবল ঘোষ এক সপ্তাহেও তাদের কোনো খোঁজ-খবরই নেননি। নিহত শ্রমিক মোকছেদ আলীর পুত্র মতিউর রহমান অভিযোগ করেছেন, ক্ষতিপূরণ বা সাহায্য দূরের কথা, ঘটনার পর তাদের শোকাহত পরিবারের একটি বারও খবর নেননি মিল মালিক। অথচ ত্রুটিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ মিলে কাজ করিয়ে তার বাবার প্রাণটি কেড়ে নিয়েছে মিল মালিক সুবল ঘোষ। নিহত রুস্তম আলীর পুত্র সেলিম হোসেন জানান, তাদের পরিবারটি তার বাবার আয়ের উপর চলত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন চোখে অন্ধকার দেখছেন। পরিবারের ৩ জনের মৃত্যুতে পুলিয়াপাড়ার জহির উদ্দিনের বাড়িতে কান্না যেন থামছেই না। নিহত মোকছেদ আলীর পুত্র মতিউর রহমান ক্রটিপূর্ণ ও জরাজীর্ণ মিলে কাজ করিয়ে মিল মালিক তার বাবার প্রাণ কেড়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন। দিনাজপুর চাতাল ও চালকল শ্রমিক সহায়তা কমিটির (চাসক) আহŸায়ক সাইফুর রাজ চৌধুরী ও সদস্য সচিব মজিবর রহমান জানিয়েছেন, ত্রুটিপূর্ণ বয়লারের বিষয়ে মিল মালিকদের বারবার অভিযোগ করা হলেও তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতি পূরণেরও দাবি জানান। এতোগুলো প্রাণ ঝরে গেল বয়লার বিস্ফোরণে; অথচ প্রশাসনও নীরব। রানা প্লাজায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে; হাওরের দুর্গত মানুষের দিকে তাকানো হচ্ছে; অথচ দিনাজপুরে ১৩টি প্রাণ ঝরে গেল বয়লার বিস্ফোরণে সেদিকে তাকানোর কেউ নেই? তাহলে কি চালকলের বয়লারে কাজ করে প্রাণ হারানো শ্রমিকরা মানুষের পর্যায়ে পড়ে না? প্রসঙ্গ তুলতেই এক বাম নেতা বললেন, কোথাও ১০ থেকে ১২টা কুকুর হঠাৎ মারা গেলে তারও খোঁজ নেয়া হয়; সৎকার করা হয়। অথচ এতগুলো মানুষ মারা গেলো তাদের খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন কেউ মনে করছে না?



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ