নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে আবুধাবিতে জাভেদ মিয়াঁদাদের ৮ হাজার ৮৩২ রান পেরিয়েই টেস্টে পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানটা নিজের করে নিয়েছিলেন। তখন থেকেই চলছিল হিসেব-নিকেশ, বাজছিল বিদায়ের বিউগলও। তবে যাবার আগে শেষবারের মত কী জ্বলে উঠবে না তার ব্যাট? তিনি তো যেন তেন কেউ নন! ইউনিস খান।
তার বিদায় সিরিজটা বাড়তি উপলক্ষ হয়ে এলো যেন পাকিস্তানের জন্যও। ওয়ানডে, টি-২০ সিরিজ জিতে ক্যারিবীয়ান দ্বীপে এখন রাজত্ব চনমনে এক পাকিস্তানই। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেই দলটিই সিরিজের প্রথম টেস্টে খেলছে জ্যামাইকার কিংস্টনের সাবাইনা পার্কে। তৃতীয় দিনের চা বিরতিতে যাবার আগে মাইলফলক থেকে মাত্র এক রান দূরে ছিলেন উইনিস। ফিরেই রোস্টন চেজকে সুইপ করেই মাইলফলকটা ছুঁয়ে ফেললেন ইউনিস। প্রথম পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের কীর্তি গড়লেন তিনি। মুহূর্তটা ইউনিস উদযাপন করলেন স্মিতহাস্যে, ব্যাট উঁচিয়ে, সতীর্থদের হালকা করতালির মধ্যে। এখন পর্যন্ত টেস্ট ক্রিকেটে ১০ হাজার রানের এই এলিট ক্লাবে যত ক্রিকেটার পা রেখেছেন, তাদের মধ্যে ইউনিসের প্রবেশটাই যেন হলো সবচেয়ে অনাড়ম্বড়ভাবে। সবচেয়ে কম দর্শকের সামনে।
বয়স পেরিয়ে গেছে ৩৯। তবুও তার ব্যাটে চড়েই এখনও টেস্ট জয়ের স্বপ্ন দেখে পাকিস্তান। ক্যারিয়ারের ১৭ বছরে এসে, ২০৮তম ইনিংসে ১০ হাজার রানে পৌঁছলেন ৩৯ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটি খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন, বিদায়বেলায় এ এক অনন্য অর্জন হয়ে থাকল ইউনিসের জন্য।
কতদিনের অপেক্ষা! গত তিন বছর ধরে এমন দিনের অপেক্ষায় ছিলেন ‘ইউনিস’ খান। অবশেষে এলো সেই কাক্সিক্ষত মুহূর্ত। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন ইউনিস। তার এ অর্জনটি উৎসর্গ করেছেন পাকিস্তানের সবাইকে। দুর্লভ এ অর্জনের পর নিজের অনুভ‚তি জানালেন এভাবে, ‘আমি অনেক খুশি। আমার অনুভ‚তি ব্যক্ত করতে পারছি না। পাকিস্তান ক্রিকেটে অনেক সেরা খেলোয়াড় আছে, কিন্তু কেউ এ মাইলফলকে পৌঁছায়নি। তাই শেষ পর্যন্ত এখানে জায়গা করতে পেরে আমি সত্যিই খুব খুশি। এটা শুধু আমার অর্জন নয়, এ রেকর্ড পুরো পাকিস্তানের জন্য।’
পাকিস্তানের টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক ইউনিস। এবার হয়ে গেলেন প্রথম ১০ হাজারি টেস্ট রানের মালিক। এ মাইলফলকের জন্য তিনটি বছর অপেক্ষা করেছেন তিনি, ‘সত্যি বলছি, এ দিনটির জন্য গত তিন বছর ধরে অপেক্ষা কেরছি। এ সময়ে আমি কয়েকবার অবসরের কথা ভেবেছিলাম। কিন্তু তখন আমার ভক্তরা আমাকে উজ্জীবিত রেখেছিল এবং তাদের কারণে আমি এতদূর আসতে পেরেছি।’
১৭ বছর আগে পাকিস্তানের জার্সি পরেছিলেন ইউনিস। তার বিশ্বাস এ মাইলফলক দেশের টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যতের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ, ‘আমি মনে করি এটা পাকিস্তান টেস্ট ক্রিকেটের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। জাভেদ মিয়াঁদাদ, মোহাম্মদ ইউসুফ ও ইনজামাম-উল হকের মতো অনেক লিজেন্ড আমরা পেয়েছি অতীতে। কিন্তু তাদের কেউ এ অর্জন করেনি। এখন আমি সেখানে পৌঁছেছি। পাকিস্তান এখন বলতে পারবে তাদের ক্রিকেটে একজন আছে যে ১০ হাজার টেস্ট রান করতে পেরেছে।’
এমন দিনে ম্যাচের ফলাফলটিও যেন গৌণ হয়ে যায় ক্রিকেটানুরাগীদের কাছে। তবুও ইউনিসের দিনে পাকিস্তানতো আর পিছিয়ে থাকতে পারে না। অভিজ্ঞ এই ব্যাটসম্যানের মাইলফলকে পৌঁছানোর দিনে জ্যামাইকা টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চালকের আসনেই আছে পাকিস্তান। গেলপরশু তৃতীয় দিনের খেলা শেষে অতিথিদের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ২০১ রান। মিসবাহ-উল-হক ও আসাদ শফিক ৫ রানে অপরাজিত। পাকিস্তান এখনও পিছিয়ে ৮৫ রানে। স্বাগতিকদের তিনশ রানের নিচে বেঁধে রাখা দলটির চোখ বড় লিডে। এর ভিতটা তৈরি করে দেন বাবর আজম ও ইউনিস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস : ৯৫ ওভারে ২৮৬ (পাওয়েল ৩৩, হেটমায়ার ১১, চেইস ৬৩, ডাওরিচ ৫৬, হোল্ডার ৫৭*, বিশু ২৮; আমির ৬/৪৪, আব্বাস ১/৬৩, ওয়াহাব ১/৬৬, ইয়াসির ২/৯১) পাকিস্তান ১ম ইনিংস : ৭৮.২ ওভারে ২০১/৪ (আজহার ১৫, শেহজাদ ৩১, বাবর ৭২, ইউনিস ৫৮, মিসবাহ ৫*, শফিক ৫*; গ্যাব্রিয়েল ২/৩৭, জোসেফ ১/৩৫, হোল্ডার ১/৪০)। তৃতীয় দিন শেষে
সংক্ষিপ্ত স্কোর
কীর্তিতে ইউনিস
* টেস্ট ক্রিকেটে এ যাবত ১০ হাজার রানের কীর্তি গড়েছেন ১৩ জন ব্যাটসম্যান। ইউনিস এদের মধ্যে ১৩তম ক্রিকেটার হলেও মাইলফলকে পৌঁছানোর দ্রæততায় তার স্থান ষষ্ঠ। ২১২তম ইনিংসে, ১৯৮৭ সালে টেস্ট ইতিহাসের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রান ছুঁয়েছিলেন ভারতের কিংবদন্তি সুনীল গাভাস্কার। ১৯৯৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার অ্যালান বোর্ডার দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে এই অনন্য অর্জনে নাম লিখিয়েছিলেন। এরপর একে একে এই দলে নাম লেখান আরও ১০ ক্রিকেটার- স্টিভ ওয়াহ, ব্রায়ান লারা, শচীন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, রিকি পন্টিং, শিবনারায়ণ চন্দরপাল, জ্যাক ক্যালিস, মাহেলা জয়াবর্ধনে, কুমার সাঙ্গাকারা ও অ্যালিস্টার কুক।
* ইউনিস দশ হাজার টেস্ট রানের মাইলফলকে পৌঁছেছেন ৩৯ বছর ১৪৫ দিন বয়সে। আগের বয়স্ক ছিলেন শিবনারায়ণ চন্দরপল। প্রাক্তন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যান মাইলফলকে পৌঁছেছিলেন ৩৭ বছর ২৪৫ দিন বয়সে। সুনীল গাভাস্কার, অ্যালান বোর্ডার, স্টিভ ওয়াহও দশ হাজারী ক্লাবে প্রবেশ করেছিলেন ৩৭ বছর বয়সের পর।
* ইউনিস দশ হাজারের মাইলফলকে পৌঁছেছেন ১১৬ টেস্টে। তার চেয়ে কম ম্যাচ লেগেছিল কেবল দু’জনের- ব্রায়ান লারা (১১১ ম্যাচ), কুমার সাঙ্গাকারার (১১৫ ম্যাচ)। ইনিংসের হিসাবে ইউনিস ষষ্ঠ দ্রæততম (২০৮ ইনিংস)। সবচেয়ে দ্রæততম লারা (১৯৫ ইনিংস)।
* ইউনিসের টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যা এখন ৩৪টি, যেটি দশ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর সময়ে যৌথভাবে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সর্বোচ্চ ৩৫টি সেঞ্চুরি ছিল রিকি পন্টিংয়ের। ইউনিসের মতো শচীন টেন্ডুলকার ও গাভাস্কারেরও ছিল ৩৪টি করে সেঞ্চুরি।
* অভিষেকের পর দশ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছাতে ইউনিসের সময় লেগেছে ১৭ বছর ৫৪ দিন। অভিষেকের পর এই মাইলফলকে পৌঁছাতে সবচেয়ে বেশি সময় লেগেছিল চন্দরপলের, ১৮ বছর ৩৭ দিন। স্টিভ ওয়াহর লেগেছিল ১৭ বছর ৭ দিন। সবচেয়ে কম সময় লেগেছে অ্যালিস্টার কুকের।
* ইউনিস ছক্কা হাঁকিয়েছেন ৭০টি- দশ হাজার রানের মাইলফলকে পৌঁছানোর (ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত) সময়ে সবচেয়ে বেশি। লারা ছক্কা মেরেছিল ৬৯টি। সবচেয়ে কম ১০টি কুকের। পাকিস্তানের হয়ে সবচেয়ে বেশি ছক্কার তালিকায় ইউনিসের অবস্থান দুইয়ে। মিসবাহ-উল-হক মেরেছেন সবচেয়ে বেশি ৭৩ ছক্কা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।