Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

প্রতিটি বিদেশ সফরে অংশগ্রহণ চায় সংসদীয় কমিটি

| প্রকাশের সময় : ১৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পঞ্চায়েত হাবিব : অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী, সচিবসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতনদের বিদেশে ভ্রমণ বিলাসে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে সংসদীয় কমিটিতে। কমিটির সদস্যরা দিনের পর দিন ধর্না দিয়েও বিদেশে যেতে পারছেন না। অর্থ মন্ত্রণালয় টাকা ছাড় দিচ্ছে না এমন অজুহাতে তাদের সফরে না নিলেও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ঠুনকো উছিলায় ঘুরে আসছেন বার বার।
জাতীয় সংসদ ভবনে গতকাল মঙ্গলবার যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ নিয়ে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করে মন্ত্রণালয়ের প্রতিটি সফরের ক্ষেত্রে কমিটি সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি চাওয়া হয়েছে। বৈঠকে উপস্থিত যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার ও উপ-মন্ত্রী আরিফ খান জয়কে তুলোধুনো করতেও ছাড়েননি সদস্যরা। পরে তাদের উপস্থিতিতেই কমিটি দুটি সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমটি হচ্ছেÑ যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে এখন থেকে প্রতিটি তালিকায় সংসদীয় কমিটির সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরে কোনো ইভেন্টে প্রধানমন্ত্রীকে রাখা হলে সেখানে কমিটির সদস্যদের আমন্ত্রণ জানাতে হবে। শিগগিরই এ সিদ্ধান্তের বিষয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠির মাধ্যমে অবহিত করারও সিদ্ধান্ত নেয় কমিটি।
কমিটির সভাপতি মো. জাহিদ আহসান রাসেলের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, উপ-মন্ত্রী আরিফ খান জয়, গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, নাহিম রাজ্জাক, মো. নুরুল ইসলাম তালুকদার এবং বেগম আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
বৈঠকে উপস্থিত সংসদ সচিবালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বিদেশে একের পর এক ভ্রমণ বিলাস এবং কমিটির সদস্যদের বিদেশে না নেয়ার বিষয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন বেশ কয়েকজন সদস্য। তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ভেন্যু পরিদর্শন করে অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে কিছুদিন আগেও তিন সচিব অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করে এসেছেন। স্থাপনা তৈরির আগেই যুব ও ক্রীড়া সচিব কাজী আখতার উদ্দিন আহমেদ, মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ওমর ফারুক, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, পরিষদের সহকারী পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) সুকুমার সাহার অস্ট্রেলিয়া সফরের কোনো যৌক্তিকতাই নেই। উল্লেখিত এ চার কর্মকর্তা পূর্বাচলে প্রস্তাবিত স্টেডিয়াম নির্মাণ উপলক্ষে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ও সিডনিতে গিয়েছিলেন সেখানকার অত্যাধুনিক স্থাপনাগুলো দেখতে। প্রায় ৩৮ একর জায়গার উপর পূর্বাচলে তৈরি করা হবে অত্যাধুনিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম। কিছুদিন আগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) পূর্বাচলের জায়গা বরাদ্দ করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে। রাজউকের বরাদ্দের চিঠি পাওয়ার পরই ক্রীড়া প্রশাসন প্রথম কাজ হিসেবে বেছে নিয়েছে বিদেশ ভ্রমণ। তারা ৭ ফেব্রæয়ারি অস্ট্রেলিয়া গিয়ে ফিরেছেন ১৪ ফেব্রæয়ারি। কমিটির সদস্যরা বলছেন, পূর্বাচলে শুধু ক্রিকেট স্টেডিয়াম হবে নাকি পাশপাশি ফুটবলের ব্যবস্থাও থাকবে; তা এখনো ঠিক হয়নি। সরকার চাচ্ছে দুই খেলারই ব্যবস্থা থাকুক। অথচ ভেন্যু দেখতে দুই খেলার সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। যারা গেছেন তারা ভেন্যুর কী বুঝবেন?
কমিটির সদস্যরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিদেশে গিয়ে স্থাপনা পরিদর্শন নতুন নয়, অতীতেও গেছেন অনেকে। কিন্তু তা কোনো কাজেই লাগেনি। সরকারের অর্থ ব্যয় করে শুধু ভ্রমণবিলাসই হয়েছে। অথচ কমিটির পক্ষ থেকে বিদেশ সফরের কথা বলা হলেই আইন দেখানো হয়। অর্থ সঙ্কট দেখানো হয়। তারা বলেন, ক্রীড়া স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য জার্মানি ও যুক্তরাজ্য ভ্রমণে ৯ এমপিকে পাঠানোর জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ উদ্যোগ নিলেও পরে ভেস্তে দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
২০১৫-১৬ অর্থবছরে বিদেশে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ খাতে সরকার ক্রীড়া পরিষদকে চার কোটি ২৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছিল। ওই খাতে প্রায় সোয়া কোটি টাকা অব্যবহƒত রয়েছে। সেই টাকা খরচ করে ক্রীড়া স্থাপনা পরিদর্শনের জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যদের জার্মানি ও যুক্তরাজ্য পাঠানোর চেষ্টা করা হয়। জার্মানি সফরের জন্য প্রতিনিধি দলে রাখা হয়েছিল সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান জাহিদ আহসান রাসেল, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয়, কবিরুল হক, মাহবুব আলী এবং সংসদীয় স্থায়ী কমিটির একান্ত সচিব ফকরুল ইসলামকে। আর যুক্তরাজ্যগামী প্রতিনিধি দলে ছিলেন গোলাম ফারুক খন্দকার প্রিন্স, নাহিম রাজ্জাক, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, নুরুল ইসলাম তালুকদার এবং আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী। সফরের খরচ মেটানোর জন্য বিদেশে ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের খাত থেকে টাকা চেয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় সাফ জানিয়ে দিয়েছে, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ছাড়া এ খাতের অর্থ অন্য কোনো খাতে ব্যয় করা যাবে না। যে কারণে বাতিল হয়ে যায় ক্রীড়া স্থাপনা পরিদর্শনের নামে এমপিদের যুক্তরাজ্য ও জার্মানি সফর। এর পরে আরও বেশ কয়েকবার উদ্যোগ নিলেও আর হয়নি। কমিটির সদস্যরা এর জন্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলদেরকে দায়ী করে এখন থেকে প্রতিটি বিদেশ সফরের ক্ষেত্রে তাদের অন্তর্ভুক্তি চেয়ে মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে গতকালের বৈঠকে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর বাস্তবায়নাধীন ‘কর্মসংস্থান ও আন্তকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পের’ মোট বরাদ্দ ও উপজেলাভিত্তিক বিভাজন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি সম্পর্কে আলোচনা, ১০০টি উপজেলায় মিনি স্টেডিয়াম নির্মাণের সর্বশেষ অবস্থা এবং বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হয়। কমিটি গাজীপুর শহীদ বরকত স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ আগামী ৩০ এপ্রিলের মধ্যে শেষ করার জন্য নিয়মিত মনিটরিং কার্যক্রম পরিচালনা করার সুপারিশ করে। কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদারকরণ প্রকল্পটিকে আরো গতিশীল করার জন্য যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে একটি কর্মশালা করার সুপারিশ করা হয়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রতিটি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ