Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিশাহারা নাঙ্গলকোটের কৃষক

ইরি-বোরোর শীষ শুকিয়ে বিবর্ণ হওয়ায়

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) উপজেলা সংবাদদাতা : কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সর্বত্র চলতি ইরি-বোরো ধান ক্ষেতে ব্যাপক হারে ইঁদুর এবং বøাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইঁদুর ইরি-বোরো ধান কেটে সাবাড় করে ফেলছে। পাশাপাশি বøাস্ট রোগের কারণে ধানের শীষ শুকিয়ে ধান গাছ লালছে আকার ধারণ করেছে। কৃষকরা ইঁদুর এবং বøাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে ধানক্ষেত রক্ষায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে ইরি-বোরো ধানের শীষ বের হওয়ার সময় হওয়ায় ইঁদুর কচি ধান কেটে ফেলছে। কৃষকরা ইঁদুর দমনে বিষ টোপ প্রয়োগ এবং বøাস্ট রোগ দমনে বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করেও ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারছেন না। ইঁদুর এবং বøাস্ট রোগের কারণে চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। জানা যায়, নাঙ্গলকোট পৌর সদরসহ উপজেলার বাঙ্গড্ডা, পেড়িয়া, রায়কোট, মৌকারা, ঢালুয়া, দৌলখাঁড়, বক্সগঞ্জ, জোড্ডা, সাতবাড়িয়া, হেসাখাল, আদ্রা, মক্রবপুর ইউনিয়নের কৃষকদের ধানক্ষেত ইঁদুর এবং বøাস্ট রোগের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ইরি-বোরো ধানের শীষ বের হওয়া শুরু হয়েছে। এসময় ইঁদুর কচি ধানের সাদা অংশটুকু চুষে খেয়ে ফেলছে এবং ধানের মাঝামাঝি কেটে ধান ক্ষেতে স্ত‚প করে রাখছে। অন্যদিকে ধানের শীষ বের হওয়ার চার-পাঁচ দিনের মধ্যে বøাস্ট রোগের আক্রমণে ধানের শীষ শুকিয়ে গিয়ে ধান ক্ষেত লালছে আকার ধারণ করছে। এদিকে বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা বøাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় কীটনাশক স্প্রে করতে পারছেন না। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ২ হাজার ৫০৫ হেক্টর জমিতে হাইব্রিড এবং ৯ হাজার ৯৭৫ হেক্টর জমিতে উপশী জাতের ধানের চাষ হয়েছে। সরেজমিনে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের বায়রা গ্রামের কৃষক আবু তাহেরের ৬০ শতক সম্পত্তি, একই গ্রামের কালা মিয়ার ১০২ শতক, দৌলখাঁড় ইউনিয়নের জিনিয়ারা গ্রামের এয়াকুব আলীর ৬০ শতক সম্পত্তি, মৌকারা ইউনিয়নের তিলিপ গ্রামের আইয়ুব আলীর ৩৬ শতক, রহমতউল্লার ৬০ শতক, আবুল হাশেমের ৩০ শতক সম্পত্তি, মাস্টার মাহবুবুল হকের ৪২ শতক সম্পত্তি, বাঙ্গড্ডা ইউয়িনের রামেরবাগ গ্রামের জামালউদ্দিনের ৭২ শতক সম্পত্তি, কাদবা গ্রামের হাছানুজ্জামানের ৭২ শতক, জহিরের ৮ শতক, সোলেমানের ৩০ শতক সম্পত্তি, রামেরবাগ গ্রামের জামালের ৭২ শতক, কামালের ১৩২ শতক, হাসানের ৭৮ শতক, মুকবলের ১৩৮ শতক, রশিদের ৩০ শতক, রফিকের ৭২ শতক, হুমায়ুনের ৩০ শতক, হুমায়ুনের ৩০ শতক, নুুরুল ইসলামের ৩০ শতক, নুরুল আলমের ৪০ শতক, মন্নানের ১২০ শতক, মাস্টার নজির আহমেদের ১২০ শতক সম্পত্তিসহ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ইরি-বোরো ধান ক্ষেতে ব্যাপক আকারে ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। এদিকে, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বøাস্ট রোগেরও ব্যাপক আক্রমণ দেখা দিয়েছে। উপজেলার ঢালুয়া ইউনিয়নের শরফাতলী গ্রামের তাজুল ইসলামের ১৫৬ শতক, বায়রা গ্রামের রমিজ সওদারের ৬০ শতক এবং একই গ্রামের মোহাম্মদ হোসেনের ১০৫ শতক সম্পত্তিতে বøাস্ট রোগের ব্যাপক আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কৃষক তাজুল ইসলামের ১৫৬ শতক সম্পত্তি সম্পূণরূপে আক্রান্ত হয়েছে। কৃষকরা বøাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় বিভিন্ন কীটনাশক স্প্রে করেও ধান ক্ষেত রক্ষা করতে পারছেন না। এদিকে কৃষকরা ইঁদুর দমনে পানির সাথে চুন মিশিয়ে ধান ক্ষেতে চিটাচ্ছেন। এছাড়া শুঁটকি, গম, চাল ভাঁজাতে বিষ মিশিয়ে এবং বিষ টোপ ধান ক্ষেতে প্রয়োগ করে ইঁদুর দমনের চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো অবস্থাতেই ইঁদুর দমন করতে পারছেন না। উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল হাছান আলামিন বলেন, উপজেলা কোথায়ও কম আবার কোথায়ও ব্যাপক আকারে বøাস্ট এবং ইঁদুরের আক্রমণ দেখা দিয়েছে। বøাস্ট এবং ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, লিফলেট বিতরণ, মসজিদের মাইকে ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া এপর্যন্ত ২০টি বাজারে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে। তিনি বøাস্ট রোগের আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় কৃষকদের কীটনাশক ট্রুপার, বøাস্টিন এবং নাটিবো পরিমিত মাত্রায় ধান ক্ষেতে স্প্রে করার পরামর্শ দেন। অন্যদিকে ইঁদুরের আক্রমণ থেকে ধান ক্ষেত রক্ষায় বিষ টোপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইরি-বোরো


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ