পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নাছিম উল আলম : ব্যয়বহুল সেচ, সার ও বালাই ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি ধানের দর পতনে চলতি মৌসুমে দেশের প্রধান খাদ্য ফসল ইরি-বোরো আবাদে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়নি। দক্ষিণাঞ্চলের ১১টি জেলাসহ সারা দেশে ৪৮ লাখ হেক্টরের লক্ষ্যমাত্রা থেকে ১.৪০ লাখ হেক্টর কম জমিতে এবার বোরো আবাদ নিয়ে কিছুটা দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল মহল। গত বছর দেশে ইরি-বোরোর আবাদ হয়েছিল ৪৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। চলতি মৌসুমে তা ৪৬ লাখ ৬০ হাজার হেক্টর অতিক্রম করেনি। ১৫ মার্চকে ইরি-বোরো আবাদ সম্পন্ন করার চূড়ান্ত সময় ধরা হয়ে থাকে। তবে এর পরেও পুরো এক সপ্তাহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় ইরি-বোরো আবাদের তথ্য সংগ্রহ করেছে ডিএই’র ব্লক সুপারভাইজারগণ। কিন্তু এর পরেও চূড়ান্ত আবাদের সময়সীমার পরেও প্রকৃত আবাদ ৪৭ লাখ হেক্টরের অনেক নিচে। ফলে ইরি-বোরো থেকে চলতি মৌসুমে দেশে ১ কোটি ৯০ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য অর্জন নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল থেকে ‘আবাদ কম হলেও উৎপাদনে তার খুব প্রভাব পড়বে না’ বলে জানান হয়েছে। ধান উৎপাদনে গত কয়েক বছর যাবত বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশ্বে ৪র্থ। তবে বোরো আবাদ থেকে এত বিপুল পরিমান জমি বাদ পরার ফলে দেশের খাাদ্য নিরাপত্তায় কিছুটা হলেও বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে বলে শঙ্কিত ওয়াকিবহাল মহল।
চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ ঘাটতির পেছনে ডিএই-সহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল মহল থেকে ডাল, গম ও তেল বীজ আবাদে কৃষকদের আগ্রহ বৃদ্ধিকে অন্যতম কারণ বলে দাবী করা হলেও তার সাথে সম্পূর্ণ একমত নন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদগণ। তাদের মতে চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে সামান্য কছু বেশী জমিতে ডাল ও গম আবাদ হলেও তা সারা দেশে সমভাবে বৃদ্ধি পায়নি। কৃষক ও কৃষিবীদদের মতে ডিজেলে ভর্তুকি না দেয়া-সহ উৎপাদিত ধানের সঠিক দাম না পাবার কারনেই কৃষকগন ইরি-বোরো আবাদে আগ্রহ ধরে রাখতে পারছেন না। যেখানে প্রতিমন ইরি-বোরার উৎপাদন ব্যায় ৬শ টাকার কাছাকাছি সেখানে ধানের দর ৬শ টাকার কম-বেশী। গত কয়েক বছরের বেশীরভাগই ধানের দর ছিল সাড়ে ৫শ থেকে পৌনে ৬শটাকার মধ্যে।
চলতি রবি মৌসুমে দেশের ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরা আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারন করে কৃষি মন্ত্রণালয়। আর অবাদকৃত এ জমি থেকে ১কোটি ৯০লাখ টন চাল প্রপ্তির হিসেবও করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদকৃত জমির পরিমাণ ১.৪০ লাখ হেক্টর কম হওয়ায় উৎপাদনের লক্ষ্যে পৌঁছান দুরূহ হয়ে পড়তে পারে। এত বিপুল পরিমান জমিতে আবাদ কম হওয়ায় উৎপাদন ঘাটতি অন্তত ৫লাখ টনে পৌঁছতে পারে বলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষিবিদদের আশঙ্কা থাকলেও ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে প্রকৃত লক্ষে পৌছান সম্ভব হতে পারে বলে দাবী করছেন। তবে এর পরেও ওয়াকিবাহাল মহল দেশের প্রধান খাদ্য ফসল আবাদে এ বিপুল পরিমান ঘাটতিকে খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কিছুটা হলেও সতর্ক বার্তা বলে মনে করছেন।
চলতি মৌসুমে দেশের দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলাতেও ইরি-বোরোর আবাদ লক্ষমাত্রায় পৌছান সম্ভব হয়নি। বরিশার বিভাগের ৬টি জেলায় ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮ হেক্টরে লক্ষমাত্রার বিপরিতে প্রকৃত আবাদ হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬শ হেক্টরের মত। বৃহত্বর ফরিদপুরের ৫টি জেলায় লক্ষমাত্রা ছিল ১ লাখ ৮৬ হাজার ১৩ হেক্টর। কিন্তু বাস্তবে আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৬৪ হাজার হেক্টরেরও কম জমিতে। ফলে দক্ষিনাঞ্চলের ১১টি জেলা থেকে চলতি মৌসুমে যে প্রায় ১২লাখ টন ইরি-বোরো চাল পাবার লক্ষ নির্ধারিত রয়েছে, তা অর্জন নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। অথচ গত প্রায় ৪দশক ধরে দেশের খাদ্য চাহিদা মেটান সহ খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে ইরি-বোরোর ভ’মিকা অনশিকার্য।
কৃষি সম্প্রসারন অধিদফতরের মতে ১৯৫০-৫১ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে উৎপাদন হত মোট ৬২ লাখ টন চাল । সে সময় বীজ ও সব ধরনের অপচয় বাদে চালের নীট প্রাপ্তি ছিল ৫৬ লাখ টনের কাছাকাছি। ৪ কোটি ২১ লাখ জনসংখ্যার দৈনিক মাথাপিছু ৪৫৪ গ্রাম হিসেবে তখন খাদ্য শষ্যের প্রয়োজনীয়তা ছিল ৬৭ লাখ ৩০ হাজার টন। ১৯৬৮ সালে দেশে ‘আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-‘ইরি’ উদ্ভাবিত উফশী জাতের ধানের আবাদ শুরু হয়। ফলে ১৯৭৫সালে চালের উৎপাদন ১.০৭কোটি টনে উন্নীত হয়। ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪১ হাজার টনে। যার মধ্যে ওই সময়ে বোরো ধান থেকে চালের প্রাপ্তি ছিল ১কোটি ৮৭লাখ টনের মত। চলতি মৌসুমে বোরো থেকে ১কোটি ৯০লাখ টন চাল প্রাপ্তির আশা থাকলেও সে লক্ষে পৌঁছান নিয়ে যুক্তিসংগত সন্দেহ রয়েছে। বোরো ধান দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তিতে পরিণত হয়েছে ইতোমধ্যে।
কিন্তু বোরা উৎপাদনে যে ডিজেল ও সার অন্যতম প্রধান ইন্ধন শক্তি তার মূল্যকে সম্পূর্ণ অযৌক্তিক বলে মনে করছন কৃষকগন। এখনো গোটা এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই সেচ ব্যায় সর্বাধীক। ডিজেলের মূল্যও সর্বোচ্চ পর্যায়ে। গত প্রায় এক দশকে দেশে ডিজেলের মূল্য প্রায় দ্বিগুন বৃদ্ধির পরেও ধানের দর বাড়েনি। এমনকি গত দু বছরে আন্তর্জাতিক বাজারে গোটা বিশ্বে জ্বালানীর দর প্রায় এক-তৃতীয়াংশে নেমে এলেও আমাদের দেশে তার কোন প্রভাব পরেনি। বরং প্রতিমন বোরো ধানের উৎপাদন ব্যায় ৬শটাকার ওপরে ওঠার পরেও ধানের দর ৬শটাকার নিচেই থাকছে। উপরন্তু একই ধানের সেচÑআবাদের ক্ষেত্রে সরকারী দুই ধরনের নীতিমালা কৃষকদের অনেকটাই বিপাকে ফেলছে। ২০০৩সাল থেকে বোরো আবাদে সেচযন্ত্রে ব্যবহৃত বিদ্যুতে সরকার ২০ভাগ করে ভতর্’কি দিয়ে আসছে। কিন্তু সেসময় ডিজেল চালিত সেচ যন্ত্রের ক্ষেত্রে একই ধরনের ভতর্’কি প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও তা কার্যকর হয়নি। ২০০৭সালে একবার ডিজেল নির্ভর সেচাবাদে কৃষকদের প্রতি শতাংশে সরকার আড়াইশ টাকা করে নগদ প্রনোদনা দেয় হলেও পরবর্তিতে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। অথচ দেশের গোটা সেচাবাদে ব্যবহৃত সেচযন্ত্রের সিংহভাগই ডিজেল চালিত। উপরন্তু বিদ্যুতের চেয়ে ডিজেল চালিত সেচযন্ত্রে ব্যায় প্রায় দ্বিগুণ।
চলতি মৌসুমের দেশে যে প্রায় ৪৬.৬০লাখ হেক্টর জমিতে সেচাবাদ হয়েছে, তাতে প্রায় ২০লাখ গভীর ও অগভীর নলকুপ সহ লো-লিফট পাম্পসমূহ ব্যাবহৃত হচ্ছে। যার মধ্যে প্রায় ১৭লাখই ডিজেল চালিত নানা ধরনের সেচযন্ত্র। আর ভর্তুকি পাচ্ছে, মাত্র ৩ লাখের মত বিদ্যুৎ চালিত সেচযন্ত্র। এছাড়াও সনাতন পদ্ধতির পা চালিত ও হাতে ডেঙ্গা পদ্ধতির আরো লক্ষাধীক অযান্ত্রিক পদ্ধতিতে জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।
সরকারী পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমাদের দেশে ধান উৎপাদনের মোট ব্যায়ের ২৮%ই সেচ ব্যয়, যা এ উপ-মহাদেশের মধ্যে সর্বাধিক। অথচ ভিয়েতনামে তা মাত্র ৬%, থাইল্যান্ডে ৮%, ও ভারতের মরুপ্রবন পাঞ্জাবে ১৩%। এর পরেও আমাদের দেশে ধানের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৪.২টন। যা চীন, জাপান ও কোরিয়াতে ৬টন থেকে সাড়ে ৬টন পর্যন্ত। তবে সাম্প্রতিককালে দেশে হাইব্রীড জাতের ধান আবাদের মাধ্যমে উৎপাদন সাড়ে ৬টনে উন্নীত হলেও এর সার ও বালাই ব্যাবস্থাপনা যথেষ্ঠ ব্যায়বহুল। ফলে হাইব্রীড জাতের ধান আবাদেও কৃষকদের লাভবান হবার সম্ভনা ক্ষীন। চলতি মৌসুমে দেশে হাইব্রীড জাতের বোরো ধান আবাদের লক্ষমাত্রাও অর্জিত হয়নি বলে জানা গেছে। ৮লাখ টন আবাদ লক্ষমাত্রার বিপরীতে চলতি মৌসুমে দেশে হাইব্রীড জাতের ধান আবাদ হয়েছে ৭লাখ হেক্টরেরও কম জমিতে। দেশে হাইব্রীড জাতের বীজ উৎপাদন প্রযুক্তিও কৃষক পর্যায়ে হস্তান্তর না হওয়ায় অতি উচ্চ মূল্যে তা সংগ্রহ করতে হয়। পাশাপাশি ব্যায় বহুল সার ও বালাই ব্যাবস্থাপনার কারনেও অতি স্পর্ষকাতর হাইব্রীড ধান আবাদে কৃষকদের আশাব্যঞ্জক আগ্রহ সৃষ্টি হয়নি এখনো।
উল্লেখ্য, আমাদের দেশে বোরো ধান সামগ্রিকভাবে ইতোমধ্যেই প্রধান খাদ্য ফসল হিসেবে স্থান করে নিয়েছে। ১৯৬৮ সালে ‘আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ইরি’ থেকে উচ্চ ফলনশীল-উফশী জাতের ধান ‘আই আর-৮’ বীজ সংগ্রহ করে প্রথমবারের মত বোরো ধান আবাদের কার্যক্রম শুরু হয়। সেসময় থেকেই আমাদের কৃষকদের কাছে ঐসব ধান ‘ইরি’ হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭০ সালে ‘বাংলাদেশ ধান গবেষনা ইনস্টিটিউট-ব্রি’ প্রতিষ্ঠিত হবার পরে এপর্যন্ত প্রায় ৬৬টি বিভিন্ন ধরনের ইনব্রীড ও হাইব্রীড জাতের ধান বীজ উদ্ভাবন করেছে। যার মধ্যে ৩০টির মত ইনব্রীড ও হাইব্রীড জাতের বোরো ধানের বীজ রয়েছে। এমনকি ২০০৮-০৯ সালে দেশে উচ্চ ফলনশীল-উফশী ধানের ৭৫ ভাগই আমাদের ‘ব্রি’ উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ হয়েছে। এমনকি দেশে বর্তমানে মোট ধানের ৮৭-৯০ভাগই ব্রি উদ্ভাবিত উফশী জাতের ধান আবাদ হচ্ছে বলে জানা গেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।