Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কচুরিপানার জটে পক্ষকাল ধরে নরসিংদী নদীবন্দর অচল

ভৈরব নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন বন্দরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নরসিংদীর মেঘনায় কচুরিপানার তীব্র জটের সৃষ্টি হয়েছে। শহরের দুই দিক থেকে কম-বেশি ৮ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৃষ্ট এই কচুরি জটের কারণে দেশের অষ্টম বৃহত্তম নদীবন্দর নরসিংদী অচল প্রায় হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১০/১২ দিন ধরে নদীপথে চলাচলকারী হাজার হাজার পাওয়ারলুম শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। তারা নদীর পাড় দিয়ে কয়েক মাইল পথ হেটে কর্মস্থলে যাওয়া আসা করছে। এ অবস্থায় লোকজন সঠিক সময়ে কর্মস্থলে পৌঁছতে পারছে না। ভৈরব নদীবন্দরসহ দেশের বিভিন্ন নদী পথের সাথে নরসিংদীর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন প্রায় হয়ে পড়েছে। লঞ্চ, স্টিমার ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাগুলো ২/৩ ফুট পুরো জট কেটে দীর্ঘ সময়ে বন্দরে আসছে এবং একইভাবে আবার বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। এতে প্রতিদিন একটি নৌযানকে নরসিংদী বন্দর ছেড়ে যেতে এবং পুনরায় নরসিংদী বন্দরে পৌঁছতে সময় লাগছে কমবেশি ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা বেশি। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ নৌপথে মালামাল পরিবহন বন্ধ প্রায় হয়ে গেছে। নরসিংদী নদী বন্দর থেকে বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী কয়েকশ’ স্পিডবোট বন্ধ হয়ে গেছে।
জানা গেছে, এসব ভাসমান কচুরিপানার উৎস হচ্ছে নরসিংদীর ৪৫ কিলোমিটার মেঘনার দুই ধারে স্থাপিত ধনাঢ্য ব্যক্তিদের অবৈধ মাছের ঘের। রায়পুরা, নবীনগর, বাঞ্ছারামপুর ও নরসিংদীর চরাঞ্চলের এক শ্রেণীর রাজনৈতিক নেতা, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি মেম্বার ও লাঠিয়াল সর্দাররা মেঘনা দখল করে দুই পারে ঘের সৃষ্টি করে। প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে সমতল এলাকা থেকে আম গাছ, জাম গাছসহ বিভিন্ন গাছ-গাছালী ডালপালা কেটে এসব ঘের সৃষ্টি করে। এর উপর কচুরিপানা আটক করে চারদিকে বাঁশ দড়ি দিয়ে বেঁধে কচুরিপানাগুলো আটকে রাখে। পুরো বর্ষা জুড়ে তারা এসব ঘের কেটে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরে বিক্রি করে। পক্ষান্তরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় নদী এবং নদীপাড়ের মানুষসহ লক্ষ লক্ষ সাধারণ মানুষ। ছোট ছোট মাছের ঘেরের কারণে মেঘনার দুই ধারে সৃষ্টি হয় অসংখ্য ডুবোচর। এসব চর পরতে পরতে ৪৫ কিলোমিটার মেঘনার অধিকাংশ এলাকাই এখন সংকীর্ণ খালে পরিণত হয়েছে। এসব বেআইনী ঘের অপসারনে কেউ এগিয়ে আসছে না। হাজার হাজার ঘেরের কচুরিপানা বাতাসের তোড়ে এসে জমা হয় নরসিংদী নদীবন্দর এলাকায়। এভাবেই নরসিংদী নদীবন্দরের দুই পাড়ে কমবেশী ১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রতিবছর কচুরিপানার তীব্র জট সৃষ্টি হয়। এবছর আগাম বর্ষা শুরু হবার কারণে মার্চ মাস থেকেই মাছের ঘের থেকে কচুরিপানাগুলো ভেসে বন্দরের হাড়িধোয়া ও আড়িয়ালখা’র মোহনায় তীব্র জটের সৃষ্টি করে। এরপর ক্রমান্বয়ে দক্ষিণ পূর্ব দিকে নলবাটা, চম্পকনগর হয়ে পশ্চিম ও দক্ষিণ পশ্চিম দিকে নাগরিয়াকান্দী পর্যন্ত দীর্ঘ ৮ কিলোমিটার এলাকায় তীব্র জটের সৃষ্টি করে। ২০০৫-৬ সালে নরসিংদীর তৎকালীন জেলা প্রশাসক (বর্তমানে রেল সচিব) মোঃ ফিরোজ সালাহ উদ্দিন পুলিশ নিয়ে সরকারি স্পিড বোট নিয়ে মেঘনায় অভিযান চালিয়ে সকল অবৈধ মাছের ঘের ভেঙে দেয়। মেঘনা নদীর নাব্যতা রক্ষা ও এলাকার জনগণের স্বার্থে তিনি ভৈরব থেকে নরসিংদীর চরভাসানিয়া পর্যন্ত একটি মাছের ঘেরও আস্ত রাখেননি। যার ফলে দীর্ঘ কয়েক বছর কচুরিপানার জট সৃষ্টি হয়নি। ঘেরগুলো ভেঙে দেয়ার কারণে কয়েক বছর মেঘনায় মাছের আধিক্য বেড়ে যায়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক ফিরোজ সালাহ উদ্দিন নরসিংদী থেকে বদলী হয়ে যাবার পরই রাজনৈতিক নেতা, চেয়ারম্যান, মেম্বার ও লাঠিয়াল সরদারসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তারা পুনরায় মেঘনা দখলে নিয়ে দুই পাড়ে মাছের ঘের স্থাপন শুরু করে। এ ব্যাপারে মেঘনা অববাহিকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কচুরিপানা জটের কথা লিখে প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষকে জানান দিচ্ছে। কিন্তু কেউই সাধারণ মানুষের কথায় কর্ণপাত করছে না। দীর্ঘ প্রায় পক্ষকালব্যপী সৃষ্ট গণমানুষের এই দুর্ভোগ লাঘবে কেউ এগিয়ে আসছে না। যার ফলে নদীবন্দরে জলযানের নিবিঘ্ন চলাচল এবং মানুষের দুর্ভোগ নিরসন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অচল

১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯
৪ জানুয়ারি, ২০১৯
১৪ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ