নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : ডাম্বুলায় ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচেই স্বাগতিকদের ঘুরে দাঁড়ানোর সর্বাত্মক চেষ্টা দেখেছে হাতুরুসিংহের শিষ্যরা। সেই ম্যাচে স্বাগতিক দলের ৩১১ স্কোর ছিল বড় ধরনের সতর্ক সঙ্কেত। ম্যাচটি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ায় ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচটি বরং স্বাগতিক দলকেই ফেলে দিয়েছিল চাপে। গত ৬ বছরে নিজেদের মাঠে জয়হীন ওয়ানডে সিরিজ কাটেনি, এই পরিসংখ্যানও চোখ রাঙিয়েছে শ্রীলংকা দলকে। অথচ, এই সিরিজের শেষ ম্যাচকে সামনে রেখে প্রথম ম্যাচে হাতুরুসিংহের জয়ের তুষ্টি একটু বেশিই যেনো আত্মতুষ্টিতে ভুগিয়েছে বাংলাদেশ দলকে! দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন টানা ৬টি ওয়ানডে সিরিজের ট্রফি। পাকিস্তানের মতো দলকে ৩-০তে হোয়াইট ওয়াশের কৃতিত্বের রূপকার এই শ্রীলংকান কোচ। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট বাংলাদেশ দলকে পাইয়ে দেয়ার মতো কৃতিত্ব আছে তার কোচিং প্রোফাইলে। অথচ, ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে অনভিজ্ঞ শ্রীলংকার বিপক্ষে ৯০ রানের জয়টিকেই বাংলাদেশে কোচিং অধ্যায়ের সেরা জয় বলে মিডিয়ায় নিজের আত্মতৃপ্তির কথা জানিয়েছেন হাতুরুসিংহে। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং-ডাম্বুলায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচে নাকি বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা তাকে বিস্মিত করেছেন। ওই ম্যাচে বাংলাদেশ ক্রিকেটারদের শরীরি ভাষায় মুগ্ধতার কথাও জানিয়েছেন তিনি! শ্রীলংকার বিপক্ষে এই প্রথম ট্রফি জয়ের হাতছানি যখন বাংলাদেশ দলের, তখন এই আত্মতুষ্টিই সংক্রমিত করেছে বাংলাদেশ দলের উপর।
বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিজ্ঞদের নিয়ে একাদশ সাজানো বুদ্ধিমানের কাজ। এই আইডিয়া থেকে লংকান ক্রিকেটের প্রধান নির্বাচক সিরিজের শেষ ২ ম্যাচে দলে ফিরিয়ে এনেছিলেন ওয়ানডেতে বাজে পারফরমেন্সে দলের বাইরে থাকা পেস অল রাউন্ডার তিসারা পেরেরা, পেস বোলার কুলাসাকেরা, অফ স্পিনার দিলুরুয়ান পেরেরা এবং লেগ স্পিনার সেকুগে প্রসন্নকে। তা দেখেও দলে শেষ ম্যাচের একাদশে পরিবর্তন আনেননি হাতুরুসিংহে। বরং এই চার অভিজ্ঞ ক্রিকেটারের কাছেই শেষ ম্যাচে হেরেছে বাংলাদেশ।
এমনকি বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে মুস্তাফিজ ওভারপ্রতি ৭.৫০ রান খরচ করে শ্রীলংকা ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে এনেছেন ছন্দে, তারপরও ওই ম্যাচে মুস্তাফিজুরের বোলিংকে দিয়েছেন বাহাবা! প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের দারুণ ফিল্ডিংয়ে যে শরীরি ভাষা নিয়ে করেছেন গর্ব হাতুরুসিংহে, সিরিজের শেষ ম্যাচে তা বিসর্জন দিয়েছে তার শিষ্যরা! ফলো থ্রুতে মাশরাফি গুনাতিলাকার দেয়া রিটার্ন ক্যাচ করেছেন ড্রপ। ৫ রানে লাইফ পেয়ে সেই গুনাতিলাকা ইনিংস টেনে নিয়েছেন ৩৪ পর্যন্ত। তরুণ ক্রিকেটার মোসাদ্দেকে অভিভুত হাতুরুসিংহে এদিন দিয়েছেন ভীষণ পীড়া। ওয়ানডে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি (৮০) তিসারার বাংলাদেশের বিপক্ষে-২০১৪ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের হাতের মুঠো থেকে জয় কেড়ে নিয়েছে এই টেল এন্ডার। ডাম্বুলায় ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৫৫ রানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে দিয়েছিলেন পূর্বাভাস এই ব্যাটসম্যান। সেই তিসারা পেরেরাকে মাত্র ৪ রানের মাথায় রান আউটে ফিরিয়ে দেয়ার সহজতম সুযোগ হাত ছাড়া করেছেন মোসাদ্দেক! বোলারস এন্ডে তার ওই ব্যর্থতার মাশুল দিয়েছে বাংলাদেশ দল শেষ ম্যাচে। ৪ রানে কাঁটা পড়তে পড়তে বেঁচে যাওয়া তিসারা থেমেছেন ফিফটি পূর্ণ করে (৪০ বলে ৫২)! যে শটে সিঙ্গলে সন্তুষ্ট থাকার কথা, বাংলাদেশ ফিল্ডারদের ক্যাজুয়াল ফিল্ডিংয়ে সেই শটে নিয়েছেন তিসারা ডাবলস! শেষ পাওয়ার প্লে’র ১০ ওভারে শ্রীলংকার স্কোরটি যোগ হয়েছে ৭৭ রান তিসারার আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের কারণেই।
শেষ ম্যাচে আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের হুংকার দিয়েছিলেন মাশরাফি। এই আক্রমণাত্মক ক্রিকেটের দর্শকে বাংলাদেশর গেম প্লানে চমক দেখাতে চেয়ে বড্ড ভুল করেছেন হাতুরুসিংহে। কলোম্বোর অসহনীয় তাপমাত্রায় যেখানে ক্লান্ত হয়ে পড়ার কথা ফিল্ডিংয়ে, সেখানে টসে জিতে ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত বুমেরাং হয়েছে। বরং পাওয়ার প্লে’র প্রথম ১০ ওভারে আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলে উইকেটহীন ৭৬ রানে বাংলাদেশ বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরিয়েছে শ্রীলংকার দুই ওপেনার। নুতন বলে মাশরাফির পাশে মেহেদী হাসান মিরাজকে দিয়ে আক্রমণ সাজিয়ে সফল টিম ম্যানেজমেন্ট এদিন পরিকল্পনা পাল্টে নুতন বলে মুস্তাফিজুরকে ব্যবহারের নির্দেশনা দিয়েছেন মাশরাফিকে। শ্রীলংকায় বাঁ হাতি ব্যাটসম্যানদের সমাবেশ বলে এই পরিকল্পনা কাজে আসেনি। প্রথম স্পেলে তার অনিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে (৩-০-২৫-০) ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেছে শ্রীলংকা। বোলিংয়ে আগের সেই ধার কমে গেছে বলে সাকিবকে তাঁতিয়ে দিয়ে পেরেছিলেন হাতুরুসিংহে শততম টেস্টে। তবে ওয়ানডে সিরিজে সাকিবের বোলিং হাতুরুসিংহের সেই মন্তব্যকেই যথার্থ বলে প্রকারান্তরে দিয়েছে জানিয়ে। কলোম্বোর সিংহলীজ স্পোর্টস ক্লাবে অতীতের ৬৩ ম্যাচে মাত্র ২ বারই ৩শ’ স্কোরের রেকর্ড আছে। অর্থাৎ এই ভেন্যুতে ২৮০/৯ স্কোর অনেক বড়। এই স্কোর তাড়া করতে যেয়ে দায়িত্বশীল ব্যাটিংকে গুরুত্ব না দিয়ে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক কৌশলই হিতে বিপরীত হয়েছে। ইনিংসের চতুর্থ বলে উইকেট কিপার এবং সিøপের ফাঁক দিয়ে ভাগ্যক্রমে বাউন্ডারি পেয়েও সতর্ক হননি তামীম, কুলাসাকেরার হাতে রিটার্ন ক্যাচটি নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও এভাবে তামীমের (৪) আত্মসমর্পণ,উইকেট কিপারের হাতে সাব্বির (০) নিজেকে সোপর্দ করে, মুশফিকুর (০) শুরুতে ফিরে বাংলাদেশ দলকে ফেলে দিয়েছেন বিপর্যায়ে (১১/৩)। সেখান থেকে ৪র্থ জুটির ৭৭ রানে ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় রনে ভঙ্গ দিয়েছেন সৌম্য, দিলুরুয়ান পেরেরার আউট সাইড অফ ডেলিভারী ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে যেয়ে স্ট্যাম্পিংয়ে কাটা পড়ে (৩৮)। ৩৪তম ফিফটিতে দলের হাল ধরে কভারে সাকিবের (৫৪) ক্যাচ প্র্যাকটিস করে ফিরে আসাও বিরক্তিকর দৃশ্য। ৯ম জুটিতে মিরাজ-তাসকিনের ৬৬ বলে ৫৪ রানে বাংলাদেশ পেরিয়েছে ২শ’। ওয়ানডে অভিষেক ইনিংসেই মিরাজ উদযাপন করেছেন ফিফটি। তাতেই হারের ব্যবধান কমেছে (৭০ রান)। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে গত বছরের আগস্টে ওয়ানডে সিরিজে হতাশ বোলিংয়ে দ.আফ্রিকা সফরের দলে জায়গা না পাওয়া পেস বোলার কুলাসাকেরার প্রথম স্পেলেই (৫-০-২৩-২) ব্যাকফুটে নামিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেরা বোলিংয়ে (৪/৩৭) শ্রীলংকাকে বড় ধরনের লজ্জা থেকে বাঁচিয়েছেন এই পেস বোলার।
শততম টেস্ট জয়ে শ্রীলংকা থেকে দারুণ অর্জনের সফরটি ইতিহাসময় করে রাখার সুযোগ হেলায় হেলায় হাতছাড়া করেছে বাংলাদেশ। এই প্রথম শ্রীলংকার মাটি থেকে সিরিজের ট্রফি জয়ের স্বপ্ন যে পূরণ করতে পারলো না হাতুরুসিংহের শিষ্যরা। ওয়ানডে র্যাঙ্কিং পয়েন্ট বাড়ানোর সুযোগও হাতছাড়া করলো বাংলাদেশ। সেøা ওভার রেটের কারণে মাশরাফির ১ ম্যাচের বহিষ্কারাদেশে আগামী মাসে আয়ারল্যান্ড সফরের প্রথম ম্যাচটি নিয়েও যে দুর্ভাবনায় পড়তে হলো বাংলাদেশকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।