Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চীন ভারত ও পাকিস্তানকে একসঙ্গে আনাই সিপিইসির লক্ষ্য

শি জিনপিংয়ের ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতি

| প্রকাশের সময় : ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কাই জু, ইকনোমিক টাইমস : চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিইসি) চীনা রাজধানীর একটি গেম-চেঞ্জিং প্যাকেজ এবং তাতে বিনিয়োগ ও ঋণ বাবদ চীন ৫৫ বিলিয়ন ডলার দেবে। তবে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সূচিত ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ নীতির ইউরেশিয়ান বাজারের অংশ হিসেবে চীন, ভারত ও পাকিস্তানকে একসঙ্গে আনাই হচ্ছে এর চূড়ান্ত লক্ষ্য।
ভারতীয়রা এ উদ্যোগের অপছন্দনীয় নামের পিছনে অশুভ সামরিক সুর শুনছে। পাকিস্তান ও চীনের কোনো যৌথ প্রচেষ্টার ব্যাপারে ইতোমধ্যে অস্বস্তি বোধ করা ভারতের কাছে এ প্রকল্প কারাকোরামের মধ্য দিয়ে বেলুচিস্তানের গোয়াদর বন্দর থেকে ক্ষুদে মহাদেশের আকারের জিনজিয়াং পর্যন্ত ভারত মহাসাগর ও চীনের মধ্যে সেতু রচনায় যোগাযোগ রেখার একান্ত পরিচয় বহন করছে।
সিপিইসিকে একটি হুমকি গণ্য করে ও ভারতের দাবিকৃত এলাকা দিয়ে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে ভারত ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ প্রকল্প থেকে দূরে রয়েছে। ২০১৬ সালে তার স্বাধীনতা দিবস বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বালুচিস্তান আন্দোলনের প্রতি তার সমর্থন ব্যক্ত করেন। এর ফলে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীর ও গিলগিট-বাল্টিস্তান, সিপিইসি রুটের শেষপ্রান্ত বিদ্রোহীদের তৎপরতায় বিপর্যস্ত হতে পারে। মোদি ইরানের চাবাহার বন্দর পুনঃসংস্কার ও রেলপথ নির্মাণ কাজ নিয়ে এগিয়ে চলেছেন যে প্রস্তাবকে সিপিইসির জবাব বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে।
একজন প্রতিযোগী হতে চাবাহারের মত আরেকটি অকাঠামো প্রকল্পের প্রতি সমর্থনপুষ্ট হয়ে দিল্লীর কৌশলগত চিন্তা সিপিইসিকে সংকীর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে, ভূরাজনৈতিক ট্রফি থেকে লব্ধ অবস্থানকে অতিরঞ্জিত করে এবং এ উদ্যোগের স্থায়িত্ব ও প্রসারতার প্রশংসা করে না যা পাকিস্তানকে রূপান্তরের ক্ষমতা ধরে। বহুমুখী লাভ
একটি ট্রানজিট রুটের চেয়ে অনেক বেশী সিপিইসির সম্পদের ২৭ বিলিয়ন ডলার কার্যত ১৮টি বিদ্যুৎ প্রকল্প গ্রহণের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। মোট ৫৪ বিলিয়ন ডলার অর্থের বাকি অর্ধেক গোয়াদর বন্দর কমপ্লেক্স এবং ৪টি প্রধান জাতীয় সড়কের প্রকৌশল, সংস্কার বা ৩টি মেইন লাইন রেলওয়ে নির্মাণ, লাহোরে একটি মেট্রো ব্যবস্থা এবং দেশব্যাপী পাইপ লাইন নির্মাণের জন্য।
প্রকল্পের চূড়ান্ত লক্ষ্য শুধু বন্দর ও সড়কের উপর অত্যধিক মনোযোগ হ্রাস করে। চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে পাকিস্তানের রফতানি-উৎপাদনের জন্য স্থিতিশীল বিদ্যুৎ ও লজিস্টিকস।
দিল্লীর কৌশলবিদদের যা জানা নেই তা হচ্ছে সিপিইসির আসল প্রতিযোগী হচ্ছে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া।’ ভারত ও পাকিস্তানের জন্য দীর্ঘমেয়াদী অর্থনৈতিক হিসেব একই রকম। চীনে প্রতি ৭ বছর পর বøু কলারদের বেতন দ্বিগুণ করার কারণে কারখানাগুলো এশিয়ার অন্য দেশে সরে যাচ্ছে অথবা উচ্চ স্বয়ংক্রিয় কারখানা হয়ে চীনে থাকছে।
মাঝারি আয়ের মর্যাদার লক্ষ্যসম্পন্ন ভারত, পাকিস্তান ও অন্যান্য এশীয় দেশের জন্য স্থানান্তরিত উৎপাদন হস্তগত করা গুরুত্বপূর্ণ। শুধু বস্ত্রখাতে চীনের রয়েছে বিশাল প্রাধান্য। তার বার্ষিক রফতানি ২৭৪ বিলিয়ন ডলার। সে তুলনায় দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারী ভারতের বার্ষিক রফতানি ৪০ বিলিয়ন ডলার। যদি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ টেক্সটাইল রফতানির সিংহভাগ নেয় তাহলে শুধু এ খাতেই বর্তমানে ভারতীয় তথ্য-প্রযুক্তি (আইটি) ও বিজনেস প্রসেসিং আউটসোর্সিং (বিপিও) শিল্পে বর্তমানে যে ৩৭ লাখ লোক চাকরিরত তার চেয়ে বেশী সংখ্যক লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারবে।
যাহোক, আইটি কোম্পানিগুলোর অব্যাহত রাজস্ব বৃদ্ধি সত্তে¡ও সরবরাহ কেন্দ্র ও কারখানা নির্বিশেষে দ্রæত স্বয়ংক্রিয় পন্থা গ্রহণ করছে। এ পদ্ধতি পরবর্তী পাঁচ বছরে ভারতে ইতোমধ্যে ছোট হয়ে আসা বিপিও ও আইটি ক্ষেত্রে ৫ লাখ জনশক্তি হ্রাস করবে। ভারতে প্রতি মাসে ১০ লাখ মানুষ কর্মী বয়সে পৌঁছাচ্ছে এবং তাদের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র মাধ্যমে দেখা প্রয়োজন যেমন পাকিস্তানের স্থিতিশীল ভবিষ্যতের জন্য সিপিইসি জরুরী।
সিপিইসি চলমান আগাম ফলদায়ক প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে চলেছে। এ সব প্রকল্প হচ্ছে ২০১৮ সালে সমাপ্য দ্রæত নির্মীয়মান ১২টি বিদ্যুৎ-কেন্দ্র সংশ্লিষ্ট প্রকল্প। সিপিইসি সম্পর্কে না বাচক বক্তারা চীনা পরিকল্পনার ব্যাপারে পাকিস্তানের যোগ্যতা সম্পর্কে যে হতাশা ব্যক্ত করেছেন তা ভুল। ধারণক্ষম নীতি ও উদার চীনভিত্তিক অর্থায়নের সমর্থনে চীনা অবকাঠামো উন্নয়নের গতি ও চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর জন্য লাভজনকতা অন্য কোনো স্বাগতিক দেশে সরিয়ে নেয়া যেতে পারে।
অন্যদিকে ভারত কাক্সিক্ষত অধিক মাত্রায় অগ্রগতি লাভ করছে না। যখন এনডিএ সরকার তাদের পূর্বসূরীর চেয়ে অধিক কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করেছিল এবং কয়লা উৎপাদনের ক্ষেত্রে নির্ধারিত মাত্রায় পৌঁছেছিল, সে তুলনায় এ সরকারের অবকাঠামো উচ্চাকাক্সক্ষার গতিবেগে অপর্যাপ্ততা সুস্পষ্ট।
আর্থিক সমস্যার কারণে স্বল্পস্থায়ী রেলওয়ে নির্মাণ অগ্রগতি ব্যর্থ হবে এবং দক্ষ বিতরণ সংস্কার না হলে অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন সত্তে¡ও বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্নতা বিরাজ করবে। মোদির অপর্যাপ্ত অবকাঠামো নিয়ে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ বেশী দূর যেতে পারবে না। কিন্তু চীনা লজিস্টিক্যাল দক্ষতা দ্বারা পাকিস্তানি উৎপাদন প্রবৃদ্ধি জোরদার হবে।
প্রকৃত প্রতিযোগিতা
দিল্লীর কৌশলবিদ সম্প্রদায় প্রকৃত প্রতিযোগিতা দেখছে না, এটা হচ্ছে, একটি সুযোগ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকার ভুলের ভিত্তি। ভারতের প্রকৃত ভীতিকর চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সিপিইসির বাণিজ্যিক সাফল্য যা শ্রমঘন রফতানি উৎপাদন উত্তরাধিকারী হিসেবে পাকিস্তানকে ভারতের চেয়ে এগিয়ে যেতে সক্ষম করেছে।
ভারতের নিরাপত্তাকে হুমকিগ্রস্ত দেখা এবং ছায়াযুদ্ধের মাধ্যমে নাশকতার কথা বিবেচনা করা দ্বিগুণ ভিত্তিহীন। সিপিইসি সংযম লালন করে এবং তার প্রতিদ্ব›দ্বীর তুলনায় বৃহত্তর সাফল্যের কারণে অর্জিত জাতীয় ইগোর বশবর্তী হয়ে পাকিস্তানের উস্কানি নিরুৎসাহিত করে। তবে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোডের’ প্রতি মনোভাবের কারণে ভারত ইতোমধ্যেই কিছু হারাতে শুরু করেছে। রেল ও বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে ভারত অর্থায়ন ও বিনিয়োগে ৪-৫শ’ কোটি ডলার হারিয়েছে। সিপিইসিকে ‘মেক ইন পাকিস্তান’ বলা হয়ত অযৌক্তিক হবে। এটা চীনের পক্ষ থেকে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’র জন্য সুযোগ ও চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি স্পষ্ট করবে।
*লেখক বেইজিংয়ের একজন কর্পোরেট আইনজীবী



 

Show all comments
  • Alamgir Hossain ৩০ মার্চ, ২০১৭, ১১:৩৫ এএম says : 0
    it's quit impossible
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ