পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ২০ মিনিটের দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৩০ তলা ভবনের ১৪ তলায় অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট প্রচেষ্টা চালিয়ে রাত ১০টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুন লাগার কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের জন্য ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগীয় উপ-পরিচালকের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। আগুন লাগার সঠিক কারণ জানা না গেলেও ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেছেন, আমরা ধারণা করছি শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। তিনি বলেন, আগুনের স্থানে ইউপিএস দেখেছি। আগুনের সাথে ইলেকট্রনিক্সের সংযোগ থাকতে পারে। ১৪ তলায় বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের জিএম-এর রুম থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এর উপরের তলায় রয়েছে দেশের সব সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মনিটরিং দফতর। নিচের তলাতে রয়েছে ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের মত গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ। আগুন লাগার পরপরই অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান, গভর্নর ফজলে কবীর, ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মো. রাজী হাসানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত হন। অর্থমন্ত্রী আগুন লাগার সম্ভাব্য কারণ এবং ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। এখন দেখার বিষয়, গঠিত তদন্ত কমিটি কত দ্রæত আগুন লাগার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন দাখিল করে এবং তা প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো একটি ব্যাংকে আগুন লাগার বিষয়টি সহজভাবে দেখার সুযোগ নেই।
দেশের অর্থনৈতিক ভাÐারের কেন্দ্র বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়টিতে যে যথাযথ মনিটরিংয়ের অভাব রয়েছে, তা এ ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এর আগে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে অর্থ চুরি হয়ে যাওয়ার মতো বড় ধরনের ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে তোলপাড় হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। কিছু অর্থ ফেরত পাওয়া গেলেও, বাকি অর্থ ফেরত পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসছে। গতকালই একটি পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, রিজার্ভ চুরির সঙ্গে জড়িতরা ঢাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। এর সাথে ব্যাংকের কেউ কেউ জড়িত থাকতে পারে। সন্দেহভাজন বা জড়িতরা যদি মুক্ত থাকে, তখন যে কোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য তা অমঙ্গল বৈ মঙ্গল নয়। এমন এক পরিস্থিতিতে ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ একটি তলায় আগুন লাগা নিয়ে জনমনে নানা সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, বাংলাদেশ ব্যাংক একটি সুরক্ষিত এলাকা। এর ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও সুরক্ষিত। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা থেকে শুরু করে, এর আভ্যন্তরীণ সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকার কথা। তা সত্তে¡ও এমন এক সময় আগুন লেগেছে, যখন ব্যাংকের দিনের সামগ্রিক কার্যক্রম শেষ এবং পরপর তিনদিন ছুটি রয়েছে। এমন হতো অফিস চলাকালীন এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, তাহলে বিষয়টিকে নিছক দুর্ঘটনা বলে গণ্য করা যেত। যেহেতু অফিস ছুটি হয়ে অনেকটা সময় পরে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে, তাই এ নিয়ে জনমনে সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। এ ঘটনা নাশকতা কিনা, তার জবাবে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বলেছেন, এটি তদন্ত কমিটি বলতে পারবে। বিষয়টি তিনি সরাসরি নাকচ করেননি। ফায়ার সার্ভিসকে ধন্যবাদ দিতে হয় এ জন্য যে, অগ্নিনির্বাপক দলগুলো দ্রæততম সময়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছে। আগুন ছড়িয়ে পড়লে কী অপূরণীয় ক্ষতি হতো, তা কল্পনাও করা যায় না। আমরা এখনও জানি না, আগুনে গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র কতটা পুড়েছে এবং ক্ষতি হয়েছে। যতটুকুই পুড়–ক না কেন, তাতে যদি গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়ে থাকে, তবে তার ক্ষতিও কম হওয়ার কথা নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর একটি ভবন। এর নিরাপত্তার সর্বোচ্চ পদক্ষেপ গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। ভবনের ভেতর-বাইরে কোনো ধরনের ত্রæটি থাকা সমীচিন নয়। আমরা দেখছি, ব্যাংকটিকে কেন্দ্র করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। রিজার্ভ চুরির মতো বড় ঘটনা ঘটার পর আগুন লাগার মতো ঘটনা ঘটলো। দুটি ঘটনার মধ্য দিয়ে ব্যাংকটির নিরাপত্তার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। এক ধরনের আস্থাহীনতারও জন্ম দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যদি এ ধরনের নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তবে মানুষের মধ্যে আস্থার ঘাটতি দেখা দেয়া স্বাভাবিক। আমরা মনে করি, এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ভবনের নিরাপত্তা নিশ্চিতে নিয়মিত মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ন্যূনতম দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, এ ধরনের আশঙ্কামুক্ত রাখতে হবে। আগুন লাগার ঘটনা নিয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, প্রকৃত তথ্য ও কারণ উদঘাটন করে তাদের যথাসময়ে প্রতিবেদন দাখিল এবং তা প্রকাশ করতে হবে। আমরা দেখেছি, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় তদন্ত কমিটি ঘটিত হলেও, তা আলোর মুখ দেখেনি। এ ধরনের প্রবণতা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাংকে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং তা জানার অধিকার দেশের মানুষের রয়েছে। এখানে কোনো ধরনের লুকোচুরি গ্রহণযোগ্য নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।