পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
হাইকোর্টের নির্দেশনা মানছে না পুলিশ : প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা
নূরুল ইসলাম : নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার দাপট থামছে না। হাইকোর্টের নির্দেশনা অমান্য করে মহাসড়কসহ রাজধানীর অলিগলিতে দেদারছে চলছে। ডিএমপি সদর দফতরের ট্রাফিক বিভাগ থেকে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা যাতে না চলে সে বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেয়া আছে। সেই নির্দেশনা মানছে না পুলিশ। নিষিদ্ধ এ যানের নেপথ্যে রয়েছে স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রভাবশালীরা। যারা দু’হাতে কামিয়ে নিচ্ছেন টাকা। আর এই টাকার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। জীবন হারাচ্ছে মানুষ। অনেকে আবার পঙ্গুত্ব বরণ করছে। শুধু তাই নয়, নিষিদ্ধ যানবাহনগুলোর ব্যাটারি চার্জ করা হয় চুরি করা বিদ্যুত দিয়ে। এতে করে বিদ্যুৎ সঙ্কটে একদিকে রাজধানীবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছে অন্যদিকে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।
সারা দেশের ২১টি মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নছিমন, করিমন, চাঁদের গাড়িসহ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার পর মহাসড়কগুলোতে ইজিবাইকসহ থ্রি হুইলার চলাচল বন্ধ থাকে। হাইওয়ে পুলিশের তৎপরতায় সে সময় মহাসড়কে দুর্ঘটনাও অনেকটা কমে যায়। কিন্তু এ সুফল মাত্র কয়েক মাস স্থায়ী হয়। আবার আগের মতোই মহাসড়কে চলতে থাকে নিষিদ্ধযানগুলো। এখন দেশের সবগুলো মহাসড়কেই ইজিবাইক চলাচল করে। বরং এখন মোটরচালিত রিকশা যোগ হয়েছে। গত ২৫ জানুয়ারি এ বিষয়ে হাইকোর্ট একটি আদেশ জারি করে। ওই আদেশে দেশের ১০টি জেলার মহাসড়কে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়। কিন্তু হাইকোর্টের সেই নির্দেশনাও এখন আর কার্যকর হচ্ছে না। এতে করে চলতি বছর জানুয়ারি থেকে একের পর এক দুর্ঘটনায় বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে।
শুধু মহাসড়ক নয়, নিষিদ্ধ ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশায় রাজধানী এখন সয়লাব। নগরীর প্রতিটি এলাকায় এখন এগুলো ছড়িয়ে পড়েছে। নিষিদ্ধ এসব যানবাহনের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে রাস্তায় আর হাঁটাই যায় না। পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে যানজট লেগে থাকছে। সকালে সন্তানদের স্কুলে দিতে গিয়ে অভিভাবকরা পড়ছেন মহাবিপাকে। রিকশা ফেলে পায়ে হেঁটে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। তাতে শিশু শিক্ষার্থীরা হাঁপিয়ে উঠছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীর প্রতিটি থানা এলাকার অলি-গলিতে এখন ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার ছড়াছড়ি। এগুলো চলাচলে বাধা না দেয়ায় দিন দিন সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নগরীর যাত্রাবাড়ী, কদমতলী, শ্যামপুর, বাসাবো, কদমতলা, মাদারটেক, হাজারীবাগ, মিরপুর-১, ১০, বিমানবন্দর, দক্ষিণখান, উত্তরখান, বনশ্রী, আজিমপুর, মোহাম্মদপুর, আদাবর, রামপুরা, খিলগাঁও, সিপাহীবাগ, বনশ্রী, বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা, মেরাদিয়াসহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ হাজার হাজার ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা চলাচল করে। নগরীর শ্যামপুর, কদমতলী ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় হাজার হাজার ইজিবাইক ও মোটরচালিক রিকশা চলাচল করে। কদমতলী থানা এলাকায় ইজিবাইকের বেশ কয়েকটি রুট চালু আছে। এর মধ্যে রায়েরবাগ ও মোহাম্মদবাগ রুটে চলাচল করে কমপক্ষে আড়াই হাজার ইজিবাইক ও রিকশা। রায়েরবাগের এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে ডিউক ও সেলিম এবং মোহাম্মদবাগে নিয়ন্ত্রণ করে লিটন ও তার দুই ভাই। প্রতিদিন এখানে ইজিবাইক প্রতি ৩০ টাকা রিকশা প্রতি ২০ টাকা হারে চাঁদা তোলা হয়। এলাকাবাসীর হিসাব মতে, শুধু এই দুই রুট থেকেই মাসে তিন লাখ টাকার বেশি চাঁদা ওঠে। এছাড়া বড়ইতলা থেকে বিক্রমপুর প্লাজা, পোস্তগোলা থেকে পাগলা, ধোলাইরপাড় থেকে শনিরআখড়া, জুরাইন মেইন রাস্তা থেকে মুরাদপুর হয়ে কোদারবাজার পর্যন্ত আছে একটি করে রুট। জানা গেছে, মুরাদপুর মাদ্রাসা রোডের এই রুট নিয়ন্ত্রণ করে স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের বডিগার্ড মাসুম। প্রতিটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন দেড়শ’ টাকা করে চাঁদা তোলে মাসুম। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তিন হাজারেরও বেশি ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশার ব্যাটারির চার্জ দেয়ার জন্য মুরাদপুর এলাকাতেই আছে কয়েকটি গ্যারেজ। যেগুলোতে অবৈধ বিদ্যুতের সংযোগ নেয়া আছে বিদ্যুৎ বিভাগের স্থানীয় প্রকৌশলীতে ম্যানেজ করে। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় বিদ্যুৎ চুরির নেপথ্যে নাসির ও তার সিন্ডিকেটের লোকজন। ব্যাটারিচালিত রিকশা তৈরি করা হয় পাটেরবাগ, দনিয়া, রায়েরবাগ, ডেমরা, কাজলা, ভাঙাপ্রেসসহ বিভিন্ন এলাকায়। দনিয়া এলাকায় হু হু করে বাড়ছে ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা। ভুক্তভোগীদের মতে, দনিয়া এলাকার অবস্থা দেখে মনে হয় না এটা রাজধানী শহর। মনে হয় কোনো মফস্বল শহরে বাস করছি আমরা। এসব যানবাহনের কারণে মানুষ চলাচলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। সকালে শিশুরা স্কুলে যাওয়ার সময় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয় একই সাথে মানুষ লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা ভোগ করছে। গত বছর ২৮ মার্চ দনিয়া গোয়ালবাড়ী মোড়ে ইজিবাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিল যুথি নামের এক এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তার বাবা স্থানীয় হোমিও চিকিৎসক আব্দুল আজিজ। সন্তান হারানোর বেদনা ভুলতে পারেননি এখনও। আলাপকালে বললেন, ভাই মার্চ মাসে আমার মেয়েকে হারিয়েছি। সামনের ২৮ তারিখে মেয়েটার মৃত্যুবার্ষিকী। মেয়েটা বেঁচে থাকলে এতোদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তো। ডাক্তার আজিজের দুঃখ তার মেয়ে ইজিবাইক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করার পরেও দনিয়া এলাকায় ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করেনি। বরং দিন দিন এর সংখ্যা বেড়ে ভয়ানক আকার ধারণ করেছে। এখন দনিয়া এলাকার প্রধান সমস্যা এই ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশা। জানা গেছে, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নাম ভাঙিয়ে কদমতলী থানা কমিউনিটি পুলিশের সাধারণ সম্পাদক নিয়ন্ত্রণ করছে পুরো কদমতলী থানা এলাকার মোটরচারিত রিকশার নিয়ন্ত্রণ। জানতে চাইলে কদমতলী থানা পুলিশের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমরা অসহায়। লাখ লাখ মানুষকে অসহায় বানিয়ে একজন ব্যক্তি কি করে অবৈধ ব্যবসা করছে? এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারেননি পুলিশের আরেক কর্মকর্তা।
আলাপকালে ইজিবাইক ও মোটরচালিত রিকশার চালকরা জানান, গোপন চাঁদার মাধ্যমে চলে এসব যানবাহন। এ টোলের পরিমাণ স্থানভেদে ভিন্ন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা থেকে শুরু করে দেড়শ’ টাকা চাঁদা নির্ধারণ করা আছে এলাকাভেদে। নগরীর মিরপুর ১০ নং গোলচক্কর থেকে ইজিবাইক, প্রাইভেট সিএনজি ও চ্যাম্পিয়ন নামের কিছু বাস চলাচল করে। ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে চাঁদা দিয়ে চলছে এসব অবৈধ যানবাহন। স্থানীয়রা জানান, এই এলাকায় প্রায় ২০০টি চলাচল করে। এর মধ্যে কিছু চলে ১০ নং গোলচক্কর থেকে মিরপুর ১৪ হয়ে ভাষানটেক এবং কিছু মিরপুর ১৪ হয়ে কচুক্ষেত পর্যন্ত চলাচল করে। এছাড়া শতাধিক প্রাইভেট সিএনজি ও চ্যাম্পিয়ন বাস রুট পারমিট ও চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই চলাচল করে। মিরপুর ১১ নং সেকশনের পল্লবী মিডটাউন শপিং মলের সামনে থেকে রূপনগর আবাসিক এলাকা পর্যন্ত চলাচল করে প্রায় একশ’ ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় সরকারদলীয় কয়েকজন নেতা। মিরপুর ১ নম্বর থেকে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় চলে ১০০-১৫০টি ইজিবাইক। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন। তার নিয়োগকৃত লাইনম্যানরা প্রত্যেক ইজিবাইক থেকে টাকা আদায় করে।
রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছ থেকে বনশ্রী হয়ে সিপাহীবাগ চলাচল করে ৭০টির মতো ইজিবাইক। এছাড়া বেশকিছু লেগুনা চলাচল করে। যেগুলোর কোনো বৈধ কাগজপত্র নেই এবং সেগুলোর ফিটনেসও নেই। লেগুনাগুলো রামপুরা টিভি সেন্টারের কাছ থেকে বনশ্রী হয়ে মাদারটেক প্রজেক্টের মুখ পর্যন্ত যায়। একজন ইজিবাইক চালক জানান, বাইক চলাচলের জন্য তারা প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দেন। এ টাকা সিপাহীবাগের এক নেতা তাদের কাছ থেকে নেয়। এ ছাড়া তারা মাসে ২০০ টাকা করে ট্রাফিক পুলিশকে দিতে হয়। সবুজবাগ থানার খিলগাঁও বিশ্বরোড থেকে বাসাবো হয়ে মাদারটেক, নন্দীপাড়া ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় দেড়শ’ ইজিবাইক চলাচল করে। প্রত্যেকটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ২০ টাকা করে চাঁদা নেয়া হয়। ঢাকা বিমানবন্দর রেলস্টেশনের পাশে আশকোনা এলাকায় কয়েকশ’ ইজিবাইক চলাচল করছে। স্থানীয়দের মতে, এখানে ইজিবাইকের সংখ্যা ৫ শতাধিক। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে আশকোনা হয়ে বউড়া ও হলান পর্যন্ত চলাচল করে ২০০টির মতো ইজিবাইক। বিমানবন্দর রেল ক্রসিং থেকে দক্ষিণখান ও কাঁচকুড়া পর্যন্ত চলাচল করে ৩শ’ ইজিবাইক। এই এলাকায় ইজিবাইক চালানোর জন্য প্রতিদিন ৩০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চালকরা জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ইমরানের লোকজন এই টাকা তোলে। ইমরান হলেন দক্ষিণখান ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের ভাতিজা। শুধু তাই নয়, এই এলাকায় ইজিবাইক নামানোর সময় ১৬শ’ টাকা করে দিতে হয়। নিষিদ্ধ এসব ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হচ্ছে না কেনÑ এমন প্রশ্নের জবাবে বিআরটিএ এর সচিব শওকত আলী বলেন, অভিযান তো চলেই। তবে লোকবল সঙ্কটের কারণে সব এলাকায় এক সাথে অভিযান চালানো যায় না। তিনি বলেন, পুলিশ ইচ্ছা করলে এই যানগুলো বন্ধ করতে পারে। কারণ এগুলো বন্ধের জন্য হাইকোর্টের নির্দেশনা আছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।