পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
করোনা সংক্রমণ রোধে রাজধানীসহ সারাদেশে চলছে লকডাউন। শুরুতে লকডাউনে কিছুটা ঢিলেঢালা ভাব লক্ষ করা গেলেও পরবর্তীতে তো কঠোর করা হয়। এ সময় অফিস-আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, দোকানপাট এবং বাস, ট্রেন, লঞ্চ-স্টিমার বন্ধ করে দেয়া হয়, যা এখনো বলবৎ আছে। লকডাউনে রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র গণপরিবহন থাকায় স্বভাবতই রাস্তাঘাটে জন ও যান চলাচল কম থাকার কথা। সম্ভাব্য এই বাস্তবতার কিছুটা ব্যতিক্রমই প্রত্যক্ষ করা যাচ্ছে। জরুরি প্রয়োজনের নাম করে মানুষ ঘর থেকে বাইরে বেরিয়ে রাস্তাঘাটে ভিড় বাড়াচ্ছে। অনেকে লকডাউনকে সাধারণ ছুটি বিবেচনা করে গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করছে। রাস্তা ও ফেরীঘাটগুলোতে বিভিন্ন বয়সী মানুষের সমাবেশ থেকে সেটা বুঝা যায়। সড়ক-মহাসড়কে গণপরিবহন না চললেও অন্যান্য যানবাহনের তেমন অভাব নেই। বাস-মিনিবাসের স্থলে ট্রাক, ভাড়ার ট্যাক্সি, মাইক্রো, প্রাইভেট কার, বেবিট্যাক্সি, ব্যাটারি চালিত রিকশা, ভ্যান ইত্যাদি দিব্যি চলাচল করছে। সড়ক দুর্ঘটনাও ঘটছে যখন তখন এবং মানুষ তাতে হতাহত হচ্ছে। ইনকিলাবে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, গণপরিবহন না থাকায় স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে রাজধানীর সড়কগুলো কিছুটা ফাঁকা থাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের দৌরাত্ম্য বেড়ে চলেছে। ‘পঙ্খিরাজ’ নামের অটোরিকশা ও ভ্যান প্রায়ই দুর্ঘটনাও ঘটাচ্ছে। ইতোমধ্যে রিকশা দুর্ঘটনায় দু’জন নিহত হয়েছে। ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে বিস্ফোরণে আরো দু’জন নিহত হয়েছে। সড়ক-মহাসড়কেও সুযোগ পেয়ে ব্যাটারিচালিত তিচক্রযানের সংখ্যা বেড়েছে। নির্মাণ ও কাঠামোগত ত্রুটি থাকার কারণে এসব যান অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। উপরন্ত সড়ক-মহাসড়কে যানজটেরও একটা বড় কারণ। দেখা যাচ্ছে, করোনাকালেও সড়ক-মহাসড়কে হরহামেশা দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে এবং এসব দুর্ঘটনার বেশিরভাগের জন্য ব্যাটারিচালিত অটো, রিকশা, ভ্যান, করিমন, নসিমন, ভটভটি ইত্যাদিই দায়ী।
ব্যাটারিচালিত পঙ্খিরাজসহ সকল অটো, রিকশা ও ভ্যান রাজধানীতে চলাচল নিষিদ্ধ। অনুরূপভাবে সড়ক-মহাসড়কেও এসব যান চলাচল নিষিদ্ধ। ২০১৮ সালে প্রণীত সড়ক পরিবহন আইন ও ১৯৮৩ সালের মোটর ভেহিক্যালস অর্ডিনেন্সে এসব যান অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া হাইকোর্ট ২০১৪ সালে ধীর ও আনস্টেবল যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপের নির্দেশনা দেন। সে মোতাবেক ২০১৫ সালে সব ধরনের তিচক্রযান ও অযান্ত্রিক যান চলাচল দেশের ২২টি মহাসড়কে নিষিদ্ধ করা হয়। গত ২০ জুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সড়ক পরিবহন বিষয়ক টাস্কফোর্সের তৃতীয় সভায় সকল প্রকার ব্যাটারিচালিত অটো, রিকশা, ভ্যান ইত্যাদির চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পরে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত আদেশও জারি করা হয়। আইন, অর্ডিনেন্স, হাইকোর্টের নির্দেশনা ও সর্বশেষ টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত ও আদেশ জারির পরও এসব যানবাহন রাজধানী, বিভিন্ন শহর এবং সড়ক-মহাসড়কে অবলীলায় ও বিনা বাধায় চলাচল করছে। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, এসব যানবাহনের নির্মাণ ও কাঠামোগত ত্রুটি রয়েছে এবং এগুলো অত্যন্ত দুর্ঘটনাপ্রবণ। দ্বিতীয়ত, এসব যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানির জন্য বিশেষভাবে দায়ী এবং গতিশ্লথতাও যানজটেরও অন্যতম কারণ। কাজেই, ত্রুটিপূর্ণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ এবং নানাবিধ ক্ষতি ও বিঘ্ন সৃষ্টিকারী এসব যানবাহন কোনোভাবেই চলাচল করতে পারে না।
প্রশ্ন হলো, তারপরও এসব নিষিদ্ধ ও অবৈধ ঘোষিত যানবাহন চলাচল করছে কীভাবে? পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, এসব যানবাহনের অধিকাংশের মালিক সরকারি দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। অনেকে এসব যানবাহন থেকে নিয়মিত চাঁদা পেয়ে থাকেন। এটা তাদের জন্য একটা ‘সহজ ব্যবসা’, আয়-রোজগারের উপায়। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসব যানবাহন নিষিদ্ধ করার দাবি উঠলে সরকারি দলের কেউ কেউ এর বিরোধিতা করেন এই বলে যে, এটা করা হলে নির্বাচনে তার বিরূপ প্রভাব পড়বে। বলা বাহুল্য, যার সঙ্গে সরকারি দলের লোকদের সরাসরি স্বার্থজড়িত কিংবা রাজনৈতিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার প্রশ্ন বিদ্যমান, তা নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত কঠিন। আলোচ্য ক্ষেত্রে তা প্রমাণিত। কোনো বিষয়ে সরকারি দলের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন থাকলে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীও ওই সমর্থনকে ‘মূল্য’ দেয়, তা জনস্বার্থ ও জনকল্যাণ পরিপন্থী হলেও। এটা আমাদের দেশে বিশেষ ‘কালচারে’ পরিণত হয়েছে। এর পরিবর্তন না হলে শহর ও সড়ক-মহাসড়কে নিষিদ্ধ ও অবৈধ যান চলাচল কখনই বন্ধ হবে না। বিষয়টি সরকারের দৃঢ় রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত দাবি করে। সরকারকে জনস্বার্থে সিদ্ধান্তের দৃঢ়তা প্রদর্শন করতে হবে। আমরা আশা করবো, সর্বশেষ যে আদেশ জারি করা হয়েছে, তা সর্বোচ্চ কঠোরতায় কার্যকর করা হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।