পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। তারপরও সারাদেশে লাখ লাখ এসব ঝুঁকিপূর্ণ পরিবহন চলছে। পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং একশ্রেণীর রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতার আশ্রয় ও প্রশ্রয়ে এসব যানবাহন অবাধে চলছে। নিষিদ্ধ করা সত্ত্বেও তা যেমন বন্ধ হয়নি, তেমনি প্রতিদিনই নতুন নতুন ইজিবাইক ও রিকশা নামছে। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, সারা দেশে এখন প্রায় পাঁচ লাখ ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা নির্বিঘেœ চলাচল করছে। শুধু ঢাকা শহরেই রয়েছে লক্ষাধিক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখের সামনে দিয়ে এগুলো চলাচল করলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে অবৈধ কাজটি দীর্ঘদিন ধরে অব্যাহত রয়েছে। এসব ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ও রিকশার ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে প্রতিদিন ৪০০ থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিড থেকে বেরিয়ে হয়ে যাচ্ছে, যা বিদ্যুৎ সংকটকে তীব্র করে তুলেছে। বিদ্যুতের জন্য দেশের মানুষের হাহাকারের শেষ নেই। বিদ্যুতের এই অপচয়ের পাশাপাশি প্রতিদিন দুর্ঘটনাও ঘটছে। নিষিদ্ধ ও ক্ষতিকর এই যানবাহন বন্ধে কোনো উদ্যোগ না থাকায় তা এখন বড় সংকটে পরিণত হয়েছে।
বিশ্বের কোথাও পায়ে চালিত বা বিদ্যুৎচালিত রিকশা দেখা যায় না। কেবল বাংলাদেশেই এই অদ্ভুত পরিবহনটি দেখা যায়। আধুনিক কোনো শহরে বিশেষ করে রাজধানীতে এ ধরনের যানবাহন কল্পনাও করা যায় না। আমরা যদি পার্শ্ববর্তী দেশের কলকাতার দিকে তাকাই, তবে দেখা যাবে রিকশা নামক পরিবহনটির অস্তিত্বই নেই। সেখানে যদি এই পরিবহন তুলে দেয়া যায়, তবে বাংলাদেশের রাজধানী থেকে তা তুলে দেয়া সম্ভব হবে না কেন? রাজধানী রিকশার নগরী হবে এবং মূল সড়ক ও অলিগলি রিকশার দখলে থাকবে এটা কেমন কথা? এটা কি কোনো উন্নয়নের স্বাক্ষর বহন করে? রিকশামুক্ত করার কথা উঠলেই নানা যুক্তি-তর্ক তুলে ধরা হয়। লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানের প্রশ্ন চলে আসে। কথা হচ্ছে, এভাবে আর কতকাল চলবে? আমরা একদিকে প্রভূত উন্নতির কথা বলব, আরেকদিকে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্তরায় এবং শহরের সৌন্দর্য বিনষ্টকারী ধীরগতির রিকশার মাধ্যমে কর্মসংস্থান দেখাবো, এই দ্বৈত নীতি কি গ্রহণযোগ্য? পায়ে চালিত রিকশার এই বিড়ম্বনার পাশাপাশি নতুন উপসর্গ হয়ে দেখা দিয়েছে বিদ্যুৎচালিত ইজিবাইক ও রিকশা। অর্থাৎ পায়ে চালিত রিকশারই এটি এক নতুন সংস্করণ। এটা সবারই জানা, হালকা ও ধীরগতির রিকশা যখন ইঞ্জিনের মাধ্যমে গতিবৃদ্ধি করা হয়, তখন তা দুর্ঘটনায় পড়তে বাধ্য। কারণ বডির ভারসাম্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখেই ইঞ্জিন বসাতে হয়। বর্তমানে যেসব ইঞ্জিনচালিত ইজিবাইক ও রিকশা চলছে, এগুলো পুরোপুরি ভারসাম্যহীন। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটছে। দ্রুত চলতে গিয়ে ভারসাম্য হারিয়ে উল্টে যাচ্ছে এবং মানুষ হতাহত হচ্ছে। কোনো কোনো মহাসড়কে চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনার খবর আমরা পাই। অন্যদিকে শহরের অলিগলি ও সড়কে চলাচলের কারণে যানজটকে আরও তীব্র হচ্ছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, এসব পরিবহন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও প্রশাসনের নাকের ডগার সামনে দিয়ে অবাধেই চলছে। এর কারণ, এগুলোর পেছনের শক্তি ক্ষমতাসীন দলের একশ্রেণীর প্রভাবশালী নেতা ও পুলিশের কিছু সদস্য যোগাচ্ছেন। আবার সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তারাও এগুলো প্রশ্রয় দিয়ে চলেছেন নিজেদের সুবিধার জন্য। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা একটি শ্রেণীর অবৈধ আয়ের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধভাবে এসব পরিবহনের ব্যাটারি চার্জ দিতে গিয়ে একদিকে যেমন বিদ্যুতের ঘাটতি দেখা দিচ্ছে, অন্যদিকে সরকারও বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে।
যা নিষিদ্ধ তা বলবৎ থাকা স্পষ্টতই আইনের লঙ্ঘন। ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা অবাধে চলাচল থেকে বোঝা যায়, আইনের প্রয়োগ নেই। যে পরিবহন নিষিদ্ধ এবং ক্ষতিকারক, তা কিভাবে চলছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে তার জবাবদিহি করা উচিত। আমরা মনে করি, এ অরাজকতা চলতে পারে না। এসব ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত রিকশা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এখানে কোনো ধরনের অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই। জিরো টলারেন্স দেখাতে হবে। যারাই এর পেছনে জড়িত থাকুক না কেন, আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। রাস্তা থেকে এসব পরিবহন তুলে দিতে হবে। ইজিবাইকের আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। এসব অবৈধ পরিবহনের কারণে অলিগলিসহ রাস্তায় যানজট সৃষ্টি, দুর্ঘটনা ঘটবে এবং মূল্যবান বিদ্যুতের অপচয় হবে, তা মোটেই বরদাশত যোগ্য নয়। রাস্তায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং যাতায়াত মসৃণ করতে এসব পরিবহন নিষিদ্ধ এবং পায়ে চালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।