পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
অবশেষে ব্যাটারিচালিত রিকশা-ভ্যানের রাজধানীতে চলাচল নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। চালকরা তিন চাকার এই যানবাহনের নাম দিয়েছেন ‘পঙ্খিরাজ’। ২০১৭ সালে রাজধানীতে ব্যাটারিচালিত রিকশা (পঙ্খিরাজ) বন্ধে হাইকোর্ট নির্দেশনা দেন। কিন্তু সর্বোচ্চ আদালতের সেই নির্দেশনা উপেক্ষা করে বিভিন্ন অলিতে-গলিতে চলছে এই ব্যাটারিচালিত রিকশা। এখন রাজধানীর মূল সড়কেও এই রিকশা চলাচল করতে দেখা যায়। যার ফলে যানজট ও লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ছোট-বড় দুর্ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এই বাহনে চড়ে দুর্ঘটনায় হাত-পা হারিয়েছেন অসংখ্য মানুষ। গতকাল সচিবালয়ে এক বৈঠকের পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, রাস্তায় ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান চলাচল বন্ধের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে আদেশ জারি করা হবে। তিনি বলেন, আমরা দেখেছি হাইওয়েগুলোতেও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলে আসছে। প্যাডেলচালিত রিকশাকে যারা ইঞ্জিন দিয়ে রূপান্তর করেছেন, সেই সব রিকশা-ভ্যান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
রাজধানীর শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, জুরাইন, মাতুয়াইল, মৃধাবাড়ী, রায়েরবাগ, মোহাম্মদবাগ, ধোলাইপাড়, কদমতলী, খিলগাঁও, বাসাবো, রামপুরা, বনশ্রী, মাদারটেক, মান্ডা, ডেমরা, পুরান ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরলে অনেক মানুষ চোখে পড়বেÑ যাদের কারো হাত ভাঙা, কারো পা ভাঙা। এই মানুষগুলো কার্যত ব্যাটারিচালিত রিকশায় চড়ে দুর্ঘটনায় এসব অঙ্গ হারিয়েছেন। কারণ প্যাডেলচালিত রিকশায় ব্যাটারি লাগানোয় রিকশার গতি বেড়ে যায়। কিন্তু প্যাডেলচালিত রিকশার গতির চেয়ে দ্বিগুণ গতি হওয়ায় ছোট যানবাহনগুলো অহরহ দুর্ঘটনায় পড়ে। ফলে যাত্রীদের এভাবে ছোট দুর্ঘটনায় অঙ্গ হারাতে হয়। শুধু তাই নয়, প্যাডেলচালিত রিকশার চেয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার গতি বেশি হওয়ায় পথে অন্যান্য যাবনহানের জন্যও দুর্ঘটনার কারণ হয়। রাজধানী ঢাকা শহরের আশপাশের গ্রাম ও শহরের মহল্লাগুলোতে প্রায় অভিন্ন চিত্র। প্রতিটি মহল্লায় ব্যাটারিচালিত রিকশা দৌরাত্ম বেড়ে গেছে।
এ ছাড়াও রাজধানীতে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মতে, বর্তমানে ঢাকায় চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তারপরও প্রায়ই লোডশেডিং হয়, যার মূল কারণ রিকশার ব্যাপাটি চার্জের অবৈধ সংযোগ। প্রতিটি রিকশা বৈদ্যুতিক খরচ বাবদ মাস প্রতি গুনতে হয়Ñ ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা। আর এই সকল বৈদ্যুতিক লাইন অবৈধ হওয়ায় লোডশেডিংয়ে ভুগতে হয় নিয়মিত বিদ্যুৎ বিল প্রদান করা গ্রাহকদের। অথচ টাকা নেয় বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মরতরা। নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ সংযোগ বন্ধ করা হলেও আবারো তা চালু হয়ে যায়। স্থানীয় রিকশা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর অলিতে-গলিতে চলাচল থাকলেও শুধু ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেই ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা লাখের বেশি। আর রাজধানীজুড়ে এ ধরনের ব্যাটারিচালিত রিকশার সংখ্যা ২ লাখেরও বেশি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নগর ভবনে এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নুর তাপস ‘ব্যাটারিচালিত কোনো যান আর সড়কে চলবে না ঘোষণা দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা ওই ঘোষণার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়ে গেছে।
অনুসন্ধান করে জানা গেছে, ‘পঙ্খিরাজ’ নামে পরিচিত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা রাজধানীর মানুষের জীবনকে সহজ করার বদলে কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো জটিল সমস্যার সৃষ্টি করছে। নিয়ন্ত্রণহীন গতি এবং চালকদের বেপরোয়া আচরণ এবং হর্নের মাধ্যমে শব্দদূষণের কারণে বেশ সমালোচিত এই যানবাহনের কদর বেড়েছে দ্রুতযান ও ভাড়া কম হবার কারণে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আদালতের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও স্থানীয় ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ছত্রছায়ায় রাজধানীতে এখনো চলমান, এই রিকশাগুলোর নিয়ন্ত্রণ ‘মহাজনদের’ হাতে। স্থানীয় থানা পুলিশ মাসোহারা চাঁদা নিয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করতে দিচ্ছেন।
গতকাল সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ইজিবাইক যথেষ্ট পরিমাণ এসে গেছে। ছোট ছোট গলিতে এগুলোর চলার কথা ছিল, প্রথমে সেভাবেই আসছিল। কিন্তু এরা সর্বত্র বিচরণ করছে। কমিশনার (ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার) জানিয়েছেন, ১৩ হাজার মোটরচালিত রিকশা-ভ্যান আমরা ধ্বংস করেছি। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যাতে তারা তাদের নির্দিষ্ট স্থান থেকে বের হতে না পারে। হাইওয়েতে কিংবা বড় রাস্তায় না আসতে পারে। ক্রমান্বয়ে আমরা এটাও বন্ধ করে দেব। তিনি আরো বলেন, সড়ক পরিবহন সেক্টরে শৃঙ্খলা জোরদারকরণ এবং দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। যেই কমিটির ১১১টি সুপারিশ ছিল। পরে এ বিষয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বেশ কিছু সুপারিশ বাস্তবায়নে পথে, অল্প কিছু বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করব, আমরা সেই বিষয়ে কর্মপন্থা নির্ধারণ করেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি সারা দেশে রিকশা-ভ্যানের মধ্যে মোটর লাগিয়ে রাস্তায় চলছে। শুধু সামনের চাকায় ব্রেক, পেছনের চাকায় কোনো ব্রেক নেই বা ব্যবস্থা থাকলেও তা অপ্রতুল। সেগুলো যখন ব্রেক করে যাত্রীসহ গাড়ি উল্টে যায়। এই ধরনের দৃশ্য আমরা দেখেছি। প্যাডেলচালিত রিকশাকে যারা ইঞ্জিন দিয়ে রূপান্তর করেছেন, সেই সব রিকশা-ভ্যান বন্ধ করার সিদ্ধান্ত আজকের সভায় নেয়া হয়েছে।
ইজিবাইক, নছিমন, করিমনের জন্য দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলোর বিষয়ে কী সিদ্ধান্তÑ জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, নছিমন, করিমন, ভটভটি বিভিন্ন শহরে অটোরিকশা চলছে। আমরা সব জায়গায় যানবাহনের ব্যবস্থা করতে পারিনি। গ্রাম-গ্রামান্তরে সুন্দর রাস্তা হয়ে গেছে। হাঁটা কিংবা সাইকেল, মোটরসাইকেল, রিকশা ছাড়া পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। সেজন্য নছিমন, করিমন পণ্য পরিবহন কিংবা যানবাহনের বিকল্প হিসেবে কাজ করছে। এটা নিয়েও আলোচনা হবে। খুব শিগগিরই এটাকে পরিমিত করা এবং ফাইনালি বন্ধ করা যায় কি-নাÑ সেটা নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা সেখানেও কাজ করব।
সভায় সংসদ সদস্য এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান, সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মো. মসিউর রহমান রাঙা, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ, টাস্কফোর্সের অন্যান্য সদস্যরা সশরীরে ও ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।