Inqilab Logo

শনিবার, ০৮ জুন ২০২৪, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০১ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বোয়ালখালীতে কর্ণফুলীর ভাঙনের কবলে ৫ শতাধিক পরিবার

| প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভেঙে গেছে বেড়িবাঁধ, ঝুঁকিতে বসতবাড়ি, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ, ফসলি জমি হাজারো মানুষের হাহাকার
এম এস এমরান কাদেরী, বোয়ালখালী, চট্টগ্রাম থেকে : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়েছে বোয়ালখালীর চরণদ্বীপের ঘাটিয়ালপাড়ার ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি, স্কুল, মসজিদ ও মাদরাসা। দীর্ঘদিন এখানকার বেড়িবাঁধ সংস্কার না করায় নদীর ভাঙনে বিলীন হতে চলেছে এখানকার ফসলি জমিও। বেড়িবাঁধের সাথে সাথে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পথে একমাত্র সড়কটিও। ফলে জীবন ঝুঁকিতে এলাকার ৫ শতাধিক পরিবারের প্রায় ৫ সহস্রাধিক মানুষ। বর্ষাকালে বন্ধ হয়ে যায় এখানকার ছেলে-মেয়েদের লেখা-পড়া, খেলা-ধুলাসহ সকল বিনোদন। ভিটেমাটি হারানোর আতঙ্কে জিম্মিদশায় দিন কাটছে পূর্ব চরণদ্বীপের ঘাটিয়াল পাড়া এলাকার খেটে খাওয়া এসব মানুষের। কর্ণফুলী নদীর অব্যাহত ভাঙনে একদিকে বিলীন হচ্ছে গ্রামটি। অপরদিকে ছোট হয়ে আসছে বোয়ালখালীর মানচিত্রও।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার কর্ণফুলী তীরবর্তী চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ঘাটিয়ালপাড়া বেড়িবাঁধ ও সড়কটি ভেঙে প্রায় বিলীন হওয়ার পথে। স্থানীয় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে নদীর পাড় ধরে। কর্ণফুলি নদীর বোয়ালখালী অংশের চরণদ্বীপ ঘাটিয়াল পাড়া বেড়িবাঁধটি ভেঙে যাচ্ছে অনবরত। সামান্য যা অবশিষ্ট আছে তা আগামী বর্ষার মধ্যে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা অনেকের। এমাতবস্থায় তাদের মধ্যে এ নিয়ে এখন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করেছে। জারুরি ভিত্তিতে এটি রক্ষায় সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা ।
জানা যায়, বোয়ালখালী উপজেলার চরণদ্বীপ ইউনিয়নের ঘাটিয়াল পাড়া দীর্ঘদিন ধরে কর্ণফুলির ভাঙনে প্রায় কয়েক’শ একর ফসলি জমি, ভিটেবাড়ি এমনকি মসজিদের জায়গাও তলিয়ে গেছে। এ নিয়ে এলাকাবাসী স্থানীয় এমপি, মন্ত্রিসহ জন প্রতিনিধিদের কাছে এবং সরকারের বিভিন্ন দফতরে আবেদন করে আসছেন বার বার। কিন্তু এমপি, মন্ত্রি, চেয়ারম্যান বা নেতারা বিভিন্ন সময় এসে শুধু প্রতিশ্রæতিই দিয়েছেন। তবে এলাকাবাসীর দাবির মুখে আশির দশকে সরকারের আমলে ঘাটিয়াল পাড়ার এ বাঁধটি নির্মাণে এ গিয়ে আসেন তৎকালীন এমপি। পরবর্তীতে ১৯৯৩-৯৪ সালের দিকে তৎকালীন সরকারের সময়ে নদী ভাঙন রোধে বেড়িবঁধ প্রকল্পটির সংস্কার করে ব্রিক সলিন সড়ক নির্মাণের কাজ করেন এবং পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধের আস্বাস দেন জন প্রতিনিধিরা। কিন্তু পরবর্তীতে এ বাঁধের সংস্কার বা স্থায়ী নির্মাণের আর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কোনো সরকার বা জন প্রতিনিধি।
এখানকার এলাকাবাসীরা বলেন, প্রতিবার নির্বাচনের সময় এখানে এসে মন ভুলানো প্রতিশ্রæতি দিয়ে যান জনপ্রতিনিধিরা। এভাবে মিথ্যা প্রতিশ্রুতির মধ্যে জীবন ঝুঁকি নিয়ে প্রায় ২ যুগ পেরিয়ে গেলেও এমপি-মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যান এর কোনো দেখা মেলেনা। তবে গত চার বছর আগে বর্তমান এমপি মঈন উদ্দিন খান বাদল এখানকার ভাঙন কবলিত ঘাটিয়াল পাড়ার এক অনুষ্ঠানে এসে মসজিদে দাঁড়িয়ে খুব শীগ্রই ঘাটিলাপাড়ার ভাঙন রোধে স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণসহ বøক ফেলে কৃষি জমিসহ ঘর-বাড়ি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে বলে প্রতিশ্রæতি দিয়ে যান। কিন্তু দুঃখের বিষয় উন্নত ব্যবস্থা বা যোগাযোগ দূরের কথা, কেন যেন খবরা খবরও নেননি এ চার বছরেও। তারা বলেন স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এসেও যদি এমপি মন্ত্রী, চেয়ারম্যান বা সরকারের এমন হাল হয় তবে কার কাছে যাব জীবন বাঁচানোর ডালা সাজিয়ে, এমন প্রশ্ন এলাকাবাসীর।
ঘাটিয়াল পাড়ার আমির হোসেন, আবুল কালাম, হামিদুল হক, মীর হোসাইন, সাজু আকতার, আবদুল মোতালেব, মরতুজা আলী, ছকিনা বেগম, বাচনী খাতুন, মমতাজ বেগম. ছনোয়ারা বেগম, জাহরা বেগম, মোহাম্মদ শফি ও মৃদুল জলদাশ বলেন, নিজের হাতে গড়েতুলা মরিচ, আলু, মুলা, ষরিষা, ভুট্টা, ফেলং, বেগুনসহ বিভিন্ন শাক-সবজির ক্ষেত নদীতে গেছে। এবার টানতে শুরু করেছে মাথা গোঁজার ঠাঁই সামান্য ভিটে বাড়িটুকুও। এখানকার মানুষের প্রশ্ন এটুকু টিকবে তো?।
বøক ফেলার প্রতিশ্রæতি দিলেও এখনো পর্যন্ত এর কোনো লক্ষণ তাদের চোখে দৃশ্যমান হচ্ছেনা।
সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় এ প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় চরণদ্বীপ ইউসি উচ্চ বিদ্যালয়ের মো. নুরুল ইসলাম ফাহিম ও মুনতাহা নামের দু’শিক্ষার্থীর। তারা জানান, সামান্য বৃষ্টি হলেই বাঁধটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠে। এসময় আমাদের স্কুলে যাতায়াত খেলা-ধুলা সবই বন্ধ হয়ে যায়।
বোয়ালখালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ মো. আতাউল হক বলেন, ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডে এ বিষয় জানানো হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বোয়ালখালী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ