Inqilab Logo

রোববার, ২৬ মে ২০২৪, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৭ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

রূপকথার মহাকাব্য রচয়িতা বার্সা

| প্রকাশের সময় : ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) মাঠ থেকে ৪-০ গোলে হেরে আসার পর বার্সেলোনা সমর্থকদের মন কেমন ছিল? অতি আশাবাদীরা বাদে প্রথম লেগ শেষে শেষ ষোলতেই নিশ্চয় প্রিয় দলের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ যাত্রার যবনিকা দেখছিলেন সবাই। ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসেই যে চার গোলের ঘাটতি পুরণ করে ঘুরে দাঁড়ানোর কোন নজির নেই। স্বয়ং উয়েফার গবেষণাতেও সম্প্রতি বের হয়ে আসেÑ ‘বার্সার ঘুরে দাঁড়ানোটা অসম্ভব’।
কিন্তু তাত্ত্বিক বিচার বলছিলÑ ‘সম্ভব’। এই সম্ভবের পক্ষে বাজি ধরার লোকও কিন্তু কম ছিল না। সেটা বার্সাকে উজ্জিবিত করতে হোক আর যে কারণেই হোক। ক্যাম্প ন্যু’য়ের সাবেক সেনা দানি আলভেস সেই দিনই বলেছিলেন এই অবস্থা থেকে যদি কোন দল ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে হল বার্সেলোনা। আলভেসের কথায় তাল মিলিয়েছিলেন পিএসজি কোচ-খেলোয়াড়রাও, তা প্রতিপক্ষকে সম্মান করে হোক আর কথার কথাতেই হোক। আশ্চর্যের বিষয় হল, সেই ‘অসম্ভব’কেই সম্ভব করে ছাড়ল স্প্যানিশ চ্যাম্পিয়নরা। পিএসজিকে ৬-১ গোলে উড়িয়ে দুই লেগ মিলে ৬-৫ ব্যাবধানে এগিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে আসরের পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ঠিক যেন রুপকথাকেও হার মানানো মহাকাব্যিক কোন উপাখ্যান।
কে ছিলেন সেই রূপকথার মহাকাব্যের মহানায়ক? পরশু রাতে নিন্দ্রাহীন থেকে যারা সেই রূপকথার সাক্ষী হতে পারেননি তাদের মানসপটে নিশ্চয় খেলে যাচ্ছে একটি নামÑ লিওনেল মেসি। কিন্তু না, আর্জেন্টিনা অধিনায়ক এদিন ছিলেন পার্শ চরিত্রে; শুধু নায়ক বললে কম হবে, মহানায়কের ভুমিকায় ছিলেন এদিন নেইমার। আগের দিনই টুইটারে যিনি জানিয়েছিলেন, ‘আমাদের জেতার সম্ভবনা যদি থাকে ১ শতাংশ, তাহলে আমার বিশ্বাস থাকবে ৯৯ শতাংশ।’ সমর্থকদের অভয় দিয়ে ব্রাজিলিয়ান তারকা আরো জানিয়েছিলেন, ‘ভয় কি, আমি একা দুই গোল করে দেব।’
কিন্তু কই? ম্যাচের বয়স ৮৭ মিনিট হয়ে গেল, স্কোরবোর্ডের কোথাও তো নেইমারের নাম নেই! ক্যাম্প ন্যু’র সমর্থকদের যখন গ্রাস করেছে ৩-১ গোলে পিছিয়ে থাকার হতাশা। স্বপ্ন পূরণে তখনও চায় তিন গোল! দৃশ্যপটে আসতে ঠিক এই সময়কেই বেছে নিলেন বার্সা ‘নাম্বার-ইলেভেন’। বক্সের বাঁ প্রান্ত থেকে নিখুঁত ফ্রি-কিকে করলেন নিজের প্রথম গোল, যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে সুয়ারেজের কল্যাণে পাওয়া পেনাল্টি থেকে দ্বিতীয়টি, যোগ করা সময়ের পঞ্চম মিনিটে সার্জি রবার্তোর সেই ক্যাম্প ন্যুকে উত্তাল সমুদ্রে পরিণত করা ঐতিহাসিক গোলেও থাকল নেইমারের সহায়তা। ফলাফল? ইউরোপিয়ান ফুটবলের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম ঘুরে দাঁড়ানোর নজির গড়ে টানা দশম বারের মত শেষ আটে বার্সেলোনা।
রূপকথার কাব্য রচনার শুরুটা তৃতীয় মিনিটে লুইস সুয়ারেজের হেডারের মাধ্যমে। বিরতির আগে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার ব্যাকহিল নিজেদের জালে পাঠিয়ে দেন কুরজাওয়া। বিরতি থেকে ফিরেই পেনাল্টি থেকে স্কোর লাইন ৩-০ করে স্বপ্নটা আরো উজ্জ্বল করেন মেসি। খেলাটা অতিরিক্ত সময়ে নিতে করতে হবে আর মাত্র এক গোল। কিন্তু ৬১তম মিনিটে এডিনসন কাভানির গোল যেন শেল হয়ে বুকে বেঁধে কাতালান সমর্থকদের। স্কোর লাইন ৩-১! তার মানে সমীকরণ মেলাতে বার্সাকে তখন করতে হবে আরো তিন তিনটি গোল! মেসি-নেইমার-সুয়ারেজদেরও যেন দেখালো কিছুটা আশাহতের মত। ওদিকে ফরাসি চ্যাম্পিয়ন শিবিরে ‘এবার আর কেউ ঠেকাতে পারবেনা’ ধরনের উল্লাস।
বদলি খেলোয়াড় রবার্তোর করা সেই তিন নম্বর গোলটিও তাই কালান সমর্থকদের জন্য হাজির হয় বাঁধনহারা এক উল্লাসের মাত্রা নিয়ে। গ্যালারি থেকে এক সমর্থকের প্লাকার্ডে লেখা ভেসে উঠল টিভি ক্যামেরায়। তাতে লেখাÑ ‘হ্যাঁ, আমরা পারি’। দলের ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডার ইভান রাকিটিস বললেন, ‘দলটি বার্সা বলেই এটা সম্ভব’। উপাখ্যানের মহানায়ক নেইমার এটাকে বিবেচনা করেছেন ‘নিজের জীবনের শ্রেষ্ঠতম ম্যাচ’ হিসাবে। বার্সা কোচ লুইস এনরিকে যেন ভাষাই হারিয়ে ফেলেন নিজের অভিব্যাক্তি প্রকাশে, ‘আজ রাতে যা ঘটল তা বর্ণানা করার মত ভাষা আমার জানা নেই। নাটক নয়, ম্যাচটিকে কেবল ভৌতিক সিনেমার সাথেই তুলনা করা যায়। কোচ কিংবা খেলোয়াড় হিসাবে ক্যাম্প ন্যু-তে আমি অনেক ম্যাচই দেখেছি, খেলেছি। কিন্তু বিশ্বাস করুণ এমন অভিজ্ঞতা আমার কখনো হয়নি। আমি একটা জিনিস দিয়েই এটাকে সজ্ঞায়িত করতে চাই। খেলোয়াড়দের যেমন বিশ্বাস ছিল তারা পারবে, তেমনি সমর্থকরাও আস্থা রেখেছিল খেলোয়াড়দের প্রতি।’
আর ইতিহাস গড়া সেই গোলদাতা রবার্তোর অনুভতিটা সেসময় কেমন ছিল? ‘আমি আমার সবটুকু এর পিছনে ঢেলে দিয়েছিলাম। আমরা এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম। আর সমর্থকরা এমনভাবে গলা ফাটাচ্ছিল যেন আমরা মাঠে দশজন খেলোয়াড় বেশি নিয়ে খেলছি।’
পিএসজিও যে সুযোগ পায়নি তা নয়। কাভানি ও অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া সহজ দুটি সুযোগ নষ্ট করেন। দুইবার পেনাল্টি তারাও পেতে পারতেন বলে অভিযোগ করেন কোচ উনাই এমেরি, ‘আমাদের স্কোরলাইন ৩-২ করার সুযোগ এসেছিল। এরপর রেফারি সিদ্ধান্তগুলো আমাদের ক্ষতি করেছে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে আমরা যা আদায় করেছিলাম মাত্র দুই মিনিটেই তা শেষ হয়ে গেল।’
এক নজরে ফল
বার্সেলোনা ৬ : ১ পিএসজি
(দুই লেগ মিলে ৬-৫-এ এগিয়ে বার্সা)
ডর্টমুন্ড ৪ : ০ বেনফিকা
(দুই লেগ মিলে ৪-১ এ এগিয়ে ডর্টমুন্ড)



 

Show all comments
  • Jamil ১০ মার্চ, ২০১৭, ১২:৫৬ এএম says : 0
    really they are boss
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বার্সা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ