নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : গত কয়েক বছরে ঘরের মাঠকে দুর্গে পরিণত করেছিল ভারত। ২০১২ সালের পর থেকে দেশের মাটিতে কোন হার নেই, দেশ-বিদেশ মিলিয়ে টানা ১৯ ম্যাচ অপরাজিত। ওদিকে সর্বশেষ ভারত সফরে ৪-০তে ধবলধোলাই হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ভারতের মাটিতে জয় নেই ২০০৪ সালের সেই গিলক্রিস্ট, ম্যাকগ্রা ও ওয়ার্ন যুগ থেকে, উপমহাদেশেও টানা ৯ ম্যাচে হার! পুনের মহারাষ্ট্র স্টেডিয়ামে সবকিছুই উল্টে গেল মাত্র পৌনে তিন দিনের চিত্রনাট্যে।
অস্ট্রেলিয়া শুধু জিতেছে বললে কম বলা হবে। রিতিমত ভারতকে গুটিয়ে-দুমড়ে-মুষড়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছে বললে একটুও কম বলা হবে না। শুষ্ক, টার্নিং যে পিচ বানানো হয়েছিল ভারতীয় স্পিনারদের জন্য সেই পিচে তাদেরকেই নাস্তানুবুধ করে ছেড়েছে অস্ট্রেলীয় স্পিনাররা। আরো স্পষ্ট করে বললে তাদেরকে নাস্তানুবুধ করেছেন একজন স্টিভ ও’কিফে। রভিচন্দ্রন আশ্বিন আর রবিন্দ্র জাদেজা মিলে যে কয়টি উইকেট নিয়েছেন, ও’কিফে একাই নিয়েছেন তত সংখ্যক। প্রথম ইনিংসে তার ২৪ বলের এক স্পেলেই ১১ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ১০৫ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল ভারত। সেটা যে ‘হুট করে পাওয়া’ ছিল না তার প্রমাণ রেখে পরের ইনিংসেও নিলেন কাকতলীয়ভাবে ঠিক ৩৫ রানে ৬টি। ম্যাচে ৭০ রানে ১২ উইকেট। ভারতের মাটিতে সফরকারী স্পিনার হিসেবে যা রেকর্ড। পেস-স্পিন মিলিয়ে রেকর্ডটা ইয়ান বোথামের, ১০৬ রানে ১৩ উইকেট।
৩২ বছর বয়সীর বলে বোল্ড হওয়ার পর বিস্ময় দৃষ্টিতে মূর্তির মত কিছুক্ষণ পিচের দিকে চেয়ে থাকলেন বিরাট কোহলি। বল পাক খেয়ে বেরিয়ে যাবে। লাইনে গিয়েও তাই ছেড়ে দিলেন বল। কিন্তু তাকে বোকা বানিয়ে বল সোজা এসে আঘাত হানল অফ স্টাম্পে! প্রথম ইনিংসে শূন্য রানে আউট হওয়ার পর এবার ১৩ রানে। ঘরের মাঠে তার এমন ব্যাটিং এই প্রথম। ১৬ রানে ২ উইকেট হারানো ভারত তখন ঘুর দাঁড়ানোর চেষ্টায়। আর কেন? ভারতও গুটিয়ে গেল মাত্র ৩৪ ওভারের মধ্যে। সর্বোচ্চ ৩১ রান আসে চেতস্বর পুজারার ব্যাট থেকে। ৬ জনই দুই অঙ্ক স্পর্শ করতে পারেনি।
ম্যাচ থেকে ভারতের একমাত্র সান্ত¦না হতে পারে প্রথম ইনিংসকে টপকে এবার ১০৭ রান করাটা! ঘরের মাঠে দুই ইনিংস মিলে এত কম রান এর আগে কখনো করেনি ভারত। বিরাট কোহলির ‘অজেয়’ খেতাব পাওয়া ভারত দুই দিন আর দুই সেশনের একটু বেশি সময়ে হারল ৩৩৩ রানে। ঘরের মাটিতে যা তাদের দ্বিতীয় সর্বচ্চ রানের ব্যবধানে হার।
ভারত আসলে ম্যাচ হেরে বসেছিল দ্বিতীয় দিনেই, ৬ উইকেট হাতে নিয়ে যখন অজিদের লিড দাঁড়িয়েছিল ২৯৮ রানে। গতকাল তৃতীয় দিনে মধ্যাহ্ন বিরতির সময় অলআউট হওয়ার আগে তা ফুলে ফেঁপে হয় ৪৪০। তখনই লেখা হয়ে যায় ম্যাচের ভাগ্য। টেস্টে যেখানে চতুর্থ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের রেকর্ড ৪১৮, সেখানে এমন ধুলো উড়া পিচে জয়ের কল্পনা করাটা তো প্রশান্ত সাঁতরে অস্ট্রেলিয়ার ভূমিতে পা রাখার মতই অসাধ্য।
আর এই কাজে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিলেন টেস্টের এক নম্বর ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ। ভারতীয় বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানরা যেভানে নাভিশ্বাস ছেড়েছেন সেখানে ক্যারিয়ারের ১৮তম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন স্টিভেন স্মিথ। ভারতের বিপক্ষে টানা ৫টি শতক হাঁকালেন টানা ৫ টেস্টে। অধিনায়ক স্মিথের ২১ ম্যাচে শতকটি দশম। ৫১তম টেস্টের ক্যারিয়ারে তার রান ৬০.৩৪ গড়ে ৪ হাজার ৮৮৮। আর ভারতের বিপক্ষে ৭ টেস্টে ৮৮.৮৩ গড়ে ১ হাজার ৬৬ রান! এদিনের ২০২ বলে ১০৯ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি চার। সাথে রেনশ, মার্শ, ওয়েড, স্টর্কদের ছোট কিন্তু কার্যকরী ইনিংসে অলআউট হওয়ার আগে ২৮৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় তার দল। স্বাগতিকদের সামনে তখন অভেদ্য ৪৪১ রানের পাহাড়।
সিরিজ শুরু হওয়ার আগের ধারণা পাল্টে পরের ম্যাচগুলোতেও জমজমাট লড়াইয়ের আভাস দিয়ে রাখল অস্ট্রেলিয়া। চার ম্যাচের সিরিজে এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ আছে কোহলিল দলের। তবে প্রথম ম্যাচেই এমন বাজেভাবে হার ঘরের মাটিতে ‘অজেয়’ ভারত দুর্গের পতনকেই নির্দেশ করে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
অস্ট্রেলিয়া : ২৬০ ও ৮৭ ওভারে ২৮৫ (আগের দিন ১৪৩/৪) (স্মিথ ১০৯, মার্শ ৩১, ওয়েড ২০, স্টার্ক ৩০, ও’কিফে ৬, লায়ন ১৩, হ্যাজেলউড ২*; অশ্বিন ৪/১১৯, জাদেজা ৩/৬৫, উমেশ ২/৩৯, জয়ন্ত ১/৪৩, ইশান্ত ০/৬)।
ভারত : ১০৫ ও (লক্ষ্য ৪৪১) ৩৩.৫ ওভারে ১০৭ (বিজয় ২, রাহুল ১০, পুজারা ৩১, কোহলি ১৩, রাহানে ১৮, অশ্বিন ৮, ঋদ্ধিমান ৫, জাদেজা ৩, জয়ন্ত ৫, ইশান্ত ০, উমেশ ০*; স্টার্ক ০/০, লায়ন ৪/৫৩, ও’কিফে ৬/৩৫, হ্যাজেলউড ০/৭)।
ফল : অস্ট্রেলিয়া ৩৩৩ রানে জয়ী।
সিরিজ : চার ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ১-০-তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : স্টিভ ও’কিফে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।