Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আতিথ্য পেতে এত বড় প্রতীক্ষা?

শিহরিত মুশফিক ষ বাংলাদেশের হয়ে ব্যাট ধরলেন কোহলী

| প্রকাশের সময় : ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

শামীম চৌধুরী, হায়দারাবাদ (ভারত) থেকে : বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার সমর্থক ছিল ভারত। আইসিসি’র ভেতরে, বাইরে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদার জন্য জোর লবিং করেছে বিসিসিআই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের বন্ধু পরিচয়ে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর বাংলাদেশের অভিষেক টেস্টে তারাও ইতিহাস। গত ১৬ বছরে ভারতের বিপক্ষে ৫টি সিরিজে ৮টি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। অথচ দ্বি-পাক্ষিক সফরসূচীতে ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলতে অপেক্ষা করতে হচ্ছে ১৬ বছর ২ মাস ২৯ দিন! ২০১০ সালে’র ১০ নভেম্বরে টেস্ট অভিষেকের পর ভারতের মাঠে টেস্টে এই প্রথম আতিথ্য পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ আজ থেকে অনুষ্ঠেয় হায়দারাবাদ টেস্টে। হায়দারাবাদ টেস্টটি তাই গণ্য হচ্ছে ঐতিহাসিক টেস্টে, ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলী পর্যন্ত এই টেস্টকে সামনে রেখে রোমাঞ্চিত। ভারতের মাটিতে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজের ভবিষ্যৎ দাবিটা জোরালো করতে বাংলাদেশ দলও এখন এই টেস্ট থেকে নিচ্ছে শিহরন, ভারতকে চমকে দেয়া পারফরমেন্সে উপেক্ষার জবাব দিতে প্রস্তুত বাংলাদেশ দল।
শুধু বাংলাদেশের বিপক্ষেই নয়, পাকিস্তান এবং জিম্বাবুয়ের অভিষেক টেস্টেও অংশীদার ভারত। তবে ভারতের মাটিতে দ্বি-পাক্ষিক সিরিজে টেস্ট খেলতে এতো বড় প্রতীক্ষার প্রহর গুণতে হয়নি অন্য কোন প্রতিপক্ষকে। ১৯৩২ সালে টেস্টে অভিষিক্ত হওয়া ভারত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্ট খেলার সুযোগ পেতে অপেক্ষা করেছে ১৫টি বছর, তবে ভারতের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম আতিথ্য পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ৮ বছর। লর্ডসে ভারতের অভিষেক টেস্টের অংশীদার ইংল্যান্ড, ১৯৩২ সালে সেই ইতিহাসের অংশ নেয়া ইংল্যান্ড ১১ মাস পর পেয়েছে ভারতের মাটিতে প্রথম আতিথ্য এবং সেটাই ভারতের মাটিতে প্রথম টেস্ট আয়োজনে ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব ইংল্যান্ডের। মুম্বাইয়ের জিমখানা গ্র্যাউন্ডে ম্যাচ দিয়ে তাও আবার তিন ম্যাচের সিরিজ। নিউজিল্যান্ডের ভাগ্য একটু বেশিই ভাল। কারণ, ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ আগে খেলেছে ভারতের মাটিতে, ১৯৫৫-৫৬ মওশুমে, ফিরতি সিরিজও খেলেছে তারা ভারতের মাটিতে ১৯৬৫ তে। ভারততে আতিথ্য দিয়েছে তারা ১৯৬৮ তে। প্রথম সিরিজটি ৫ ম্যাচের, পরের ২টি সেখানে ৪ ম্যাচের। পাকিস্তানের অভিষেক টেস্টে অংশীদার ভারত। ভারতের মাটি থেকেই টেস্ট যাত্রা শুরু হয়েছে পাকিস্তানেরÑ ১৯৫২ সালের অক্টোবরে দিল্লীতে। প্রথম টেস্ট সিরিজটিই আবার ৫ ম্যাচের! ২ বছর ৩ মাস পর ভারতকে আতিথ্য দিয়েছে পাকিস্তান (১৯৫৫ সালে), তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র টেস্ট ভেন্যু ঢাকা স্টেডিয়ামে (বর্তমানে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম)। বর্ণবৈষম্যের কারণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট খেলতে ভারত অপেক্ষা করেছে বছরের পর বছর। ১৯৯২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর দ.আফ্রিকা ক্রিকেট দল ভারত সফরে অপেক্ষা করেছে ৪ বছর। ভারতকে আতিথ্য দেয়ার আগেই ভারতে আতিথ্য পেয়েছে শ্রীলংকাÑ১৯৮২ সালে। ভারতকে আতিথ্য দিয়েছে তারা ৩ বছর পর! ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট দলও আগে পেয়েছে ভারতে অতিথ্য, প্রথম সিরিজটিই ৫ ম্যাচের। ৫ বছর পর ভারতকে আতিথ্য দিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের মতো জিম্বাবুয়েরও টেস্ট অভিষেক ভারতের বিপক্ষে, ১৯৯২ সালে। হারারেতে ১ ম্যাচের ওই টেস্ট সিরিজের পর ভারতের মাটিতে প্রথমবারের মতো আতিথ্য পেতে জিম্বাবুয়েকে অপেক্ষা করতে হয়েছে মাত্র ৫ মাস, ভারতের বিপক্ষে ফিরতি টেস্টের  মাঝে মাত্র ৪টি ম্যাচ খেলার অতীত জিম্বাবুয়ের!
আইসিসি’র প্রথম ফিউচার ট্যুর প্রজেক্টে (এফটিপি) (২০০১-৬) ভারতের মাটিতে টেস্ট সিরিজ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশ দলের। ২০০৬ সালে পূর্ব নির্ধারিত সেই সিরিজটি দিওয়ালী উৎসবের অজুহাতে বাতিল করে বিসিসিআই। ভারত ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিলে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে সর্বশেষ ২টি তে ভারতের মাটিতে খেলার আগ্রহের পরিবর্তে বিসিসিআই’র প্রস্তাবে বাংলাদেশ বরং দিয়েছে ভারতকে আতিথ্য। বাংলাদেশ দলকে আতিথ্য দিয়ে আর্থিকভাবে লাভের সম্ভাবনা তেমন নেই বলে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে আতিথ্য দিতে এতোদিন কম বাহানা করেনি বিসিসিআই। চলমান ৯ বছর মেয়াদী এফটিপিতে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশ পেয়েছে বরাদ্দ মাত্র ২ টেস্ট, ৬ ওয়ানডে। ২০১৪ সালে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজের পর ২০১৫ সালে ৩ ওয়ানডে, ১ টেস্ট ম্যাচের সিরিজ। ওই সিরিজে যে একটি টেস্ট ছিল অবশিষ্ট, সেই টেস্টটি গড়াচ্ছে অবশেষে, ৩ বছর পর। গত বছরের আগস্টে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের ভারত সফর নির্ধারিত থেকেও বিসিসিআই দেয়নি বিসিবিকে গ্রীন সিগন্যাল। সফরটি ৬ মাস পিছিয়ে এ বছরের ফেব্রুয়ারীতে তা আয়োজনের ঘোষণা বিসিসিআই’র সর্বশেষ সভাপতি অনুরাগ ঠাকুর দিয়েও অনিশ্চয়তার আবর্তে পড়েছিল একমাত্র টেস্টটি! সুপ্রিম কোর্টের আদেশে বিসিসিআই’র ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে অনুমতি ছাড়া অর্থ উত্তোলন করা যাবে না বলে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন টেস্ট আয়োজনে প্রয়োজনীয় অর্থের যোগান চেয়ে বিসিসিআই’কে চিঠি দিয়ে পড়ে বিপত্তিতে। পরবর্তীতে এই টেস্ট আয়োজনে হায়দারাবাদ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন আগ্রহ প্রকাশ করলে ৮ ফেব্রুয়ারীর পরিবর্তে ৯ ফেব্রুয়ারী টেস্ট আয়োজন চূড়ান্ত হয়েছে। হায়দারাবাদ টেস্টের সকল প্রস্তুতি হয়েছে সম্পন্ন।
সম্প্রতি ওয়ানডে, টি-২০তে ভারতকে প্রচ- ঝাঁকুনি দেয়ায় ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার দাবি রাখে বাংলাদেশ তা মনে করছেন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলীÑ ‘মাত্র ক’দিন আগেই আমি জানতে পারলাম বাংলাদেশ দল ভারতে খুব বেশি সফর করেনি। আমরা বাংলাদেশে বেশ ক’বার গিয়েছি, কিন্তু এবারের আগে ওরা দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ খেলতে আসেনি। সেদিক থেকে অবশ্যই এটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দুই দলের জন্যই শুধু নয়, দুই দেশের জন্যও এটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত। ভারতে এসে খেলতে পারাটা বাংলাদেশের জন্যও দারুণ হবে। কারণ, ক্রিকেটের জন্য ভারত দারুণ জায়গা। ওরা উপভোগ করবে। এটা একটা বিশেষ উপলক্ষ্য, এটা এমন একটা সময়ে হতে যাচ্ছে যখন আমি অধিনায়ক। তাই আমার জন্যও দিনটি বিশেষ কিছু।’ ভারতের মাটিতে টেস্ট খেলার প্রতীক্ষাটা বড় হলেও সঠিক সময়ে ভারতে টেস্ট খেলতে এসেছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ দলের হেড কোচ হাতুরুসিংহেÑ ‘বাংলাদেশ এখন বড় দলগুলোর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ভাল করা এখানে একটা ফ্যাক্টর হতে পারে। সঠিক সময়ে আমরা এখানে খেলতে এসেছি। হোমে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে  ভাল খেলেছি, নিউজিল্যান্ড সফরেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।’
প্রতীক্ষার প্রহর এতো লম্বা বলেই অন্য এক শিহরন অনুভব করছেন বাংলাদেশ টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর  রহিমÑ ‘টেস্ট খেলুড়ে দেশ হিসেবে এমন ঘটনা আশ্চর্যজনকই বটে। দেশে এবং দেশের বাইরে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট খেলার স্বপ্ন সবারই থাকে। দেশে দেশের বাইরে ভারতের বিপক্ষে খেলা আমাদের জন্য একটা বড় উপলক্ষ্য। অনেক দিন পর এমনটা হচ্ছে বলে আমাদের দলের সবাই এখন শিহরন অনুভব করছে। বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দলের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পেয়ে আমরা আমাদের স্কিল প্রদর্শন করতে চাই।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ