নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : দিনটাকে শ্রীলঙ্কা বিশেষভাবে উদযাপন করতেই পারে। ঠিক যেমনটা করেছিল ১৯৯৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর, যেদিন টেস্ট ক্রিকেটে অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম হারিয়েছিল তারা। ক্যান্ডির সেই লঙ্কান দলে ছিল অরবিন্দ ডি সিলভা, অর্জুনা রানাতুঙ্গা, সনাথ জয়সুরিয়া, মাহেলা জয়াবর্ধনে, মুত্তিয়া মুরালিধরন, চামিন্দা ভাসের মত সময়ের সেরা সেরা সব খেলোয়াড়। তেমনি একটা দিন ফিরিয়ে আনতে লঙ্কানদের অপেক্ষা করতে হয়েছে প্রায় দেড় যুগ। পেল্লেকেলের এই জয়ী দলে নেই গ্রেটদের কেউই, তবে ১০৬ রানের এই জয় নতুন গ্রেট তৈরীর একটি বার্তা তো বটেই। কুসল মেন্ডিসের সেই ১৭৬ রানের চোয়ালবদ্ধ ইনিংসটা অন্তত এই বার্তাই দেয়।
১৯৯৯ সালে ক্যান্ডির সেই জয়ী দলের সাক্ষী হয়ে এই দলে আছেন একমাত্র রঙ্গনা হেরাথ। ২১ বছর বয়সী সেদিন ড্রেসিং রুমে অপেক্ষারত ছিলেন টেস্ট ক্যাপ মাথায় চড়ানোর। পরের মাসেই গলে টুপিটা মাথায় ওঠে তার। ১৭ বছর পর ৩০০ উইকেট শিকারি এই বোলারের মাথার চুল যখন বিবর্ণ হতে শুরু করেছে, সেই তিনিই হয়ে থাকলেন এই জয়ের অন্যতম পার্শ্ব নায়ক। প্রথম ইনিংসে ৪৯ রানের খরচায় ৪ উইকেটের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৪ রানে ৫ উইকেট নিয়ে এবারের জয়ে হয়ে থাকলেন মাঠের সাক্ষী।
কুমার সাঙ্গাকারার মত গ্রেট খেলোয়াড়ের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নেই কোন জয়। সাঙ্গা ও মাহেলার অবসর লঙ্কান ক্রিকেটে একটা যুগের সমাপ্তিরেখাই টেনে দেয়। এরপরও টেস্ট র্যাংকিংয়ের ৭ নম্বরে অবস্থানকারী দলটি ১ নম্বর দলের কাছ থেকে জয় ছিনিয়ে এনেছে একঝাঁক তরুণের দৃঢ়তায়। কুসল মেন্ডিসের মাত্রই এটি সপ্তম টেস্ট। অজি বোলারদের সুইং বৈচিত্র্যে লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা যখন দিশেহারা তখন এক প্রান্তে চোয়ালবদ্ধ হয়ে গ্রেট খেলোয়াড়ের মত দাঁড়িয়ে ছিলেন ২১ বছর বয়সের সদ্য কৈশোর পেরুনো এই তরুণ। চেহারায় এখনো স্কুল-বালকের ছাপ স্পষ্ট। এই বালকই ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ড ইনিংস গড়ে ম্যাচের ভাগ্য একাই টেনে নেন নিজেদের দিকে। দলের আরেক তরুণ অভিষিক্ত লক্ষণ সান্দাকানের ৭ উইকেট প্রাপ্তিটাই বা কম কিসে।
শ্রীলঙ্কার এই জয় যে শুধু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তা নয়, প্রকৃতির বিপক্ষেও (বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতা)। শেষ বিকেলে স্টিভ ও’কেফি ও পিটার নেভিলের অনন্য এক জুটি ছিল অস্ট্রেলিয়ার শেষ লড়াই। নবম উইকেটে দু’জন গড়েন ১৭৮ বলের জুটি। জুটির হিসাবটা বলেন হিসেবে হওয়ার কারণ এসময় তাদের ব্যাট থেকে আসে মাত্র ৪ রান! এর মধ্যে টানা ১৫৪ বল কোন রানই আসেনি। ব্যক্তিগত ১১৫ বলে ৯ রান করে ফেরেন নেভিল। এরপর ’৯৮ বলে ৪ রানে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে হেরাথের বলে ও’কেফির বোল্ড হওয়ার মাধ্যমে শেষ হয় সফরকারী ইনিংসের। চা বিরতি তখনও প্রায় ২০ মিনিট দূরে। লঙ্কানরা ম্যাচ জিতে নেয় ১০৬ রানে। অধিনায়ক হিসেবে প্রথম হারের স্বাদ পান স্টিভেন স্মিথ।
ইতিহাস যতবারই এই ম্যাচটার কথা স্মরণ করবে ততবারই ঘুরে ফিরে আসবে ঐ একটি নামÑ কুসল মেন্ডিস। স্বাগতিকরা ১১৭ রানে অল-আউট হওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৬ রানে হারালেন ২ উইকেট। প্রতিপক্ষকে ব্যাটে পাঠাতে তখনও তাদের করতে হবে ৮০ রান। এমন মুমূর্ষু অবস্থায় কি অসাধারণভাবেই না দেখা দিলেন কুসল মেন্ডিস নামের এই ভবিষ্যত তারকা। অথচ প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে এটি তার মাত্রই দ্বিতীয় শতক! তার ব্যাটই অস্ট্রেলিয়াকে ছুড়ে দেয় ২৬৮ রানের পাহাড়! পাহাড়ই তো, উপমহাদেশে যে ২০০ পেরুনো লক্ষ্যে তাদের জয় মাত্র একটি!
অজি অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথও লঙ্কানদের জয়ের পুরো কৃতিত্ব দিলেন এই ভবিষ্যত তারকাকেই, “সম্পূর্ণ কৃতিত্বটাই কুসলের। তার ১৭৬ রানের ইনিংসটাই ম্যাচের ভাগ্য ঘুরিয়ে দিয়েছে।” আর জয়ী দলের অধিনায়ক এঞ্জেলো ম্যাথিউস তো কুসলের ইনিংসটাকে ‘ইনিংস অব দ্যা ইয়ার’ খ্যাতিই দিয়ে দিলেন।
হাতে ৭ উইকেট আর ৮৩ রান নিয়ে শেষ দিন শুরু করে ক্যাঙ্গারুরা। মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই তা হয়ে যায় ৭ উইকেটে ১৪১। পঞ্চম উইকেটে মার্শের সাথে অধিনায়ক স্মিথের করা ৪৩ রানের জুটিটা হয়তো কিছুটা আশা দেখাচ্ছিল তাদের। কিন্তু ৩ রানের ব্যবধানে ৩ উইকেটের পতন সেই আশার বাতিটা নিভিয়ে দেয়। সর্বোচ্চ ৫৫ রান আসে স্মিথের ব্যাট থেকে। ৩ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসেও হেরাথকে সঙ্গ দেন সান্দাকান। আগামী ৪ আগস্ট ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে ৩ ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টিতে মাঠে নামবে শ্রীলঙ্কা।
শ্রীলঙ্কা : ১১৭ ও ৩৫৩
অস্ট্রেলিয়া : ২০৩ ও ১৬১ (বার্নস ২৯, স্মিথ ৫৫; হেরাথ ৫/৫৪, সান্দকান ৩/৪৯)।
ফল : শ্রীলঙ্কা ১০৬ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ : কুসল মেন্ডিস।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।