Inqilab Logo

মঙ্গলবার ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মাদ্রিদময় আরেক ফাইনালের প্রতীক্ষা

প্রকাশের সময় : ২৮ মে, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস ডেস্ক : দু’বছর আগে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখানোর দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। কিন্তু উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের স্বপ্নের সেই ফাইনালের শেষ মুহূর্তে সার্জিও রামোসের এক হেড থমকে দিয়েছিল তাদের মহাকাল। স্বপ্নটাকে যেন ছোঁ মেরে কেড়ে নিয়েছিল মাদ্রিদেরই আরেক দল রিয়াল। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো সেই ম্যাচে শেষ দশ মিনিটে আরো তিন গোল করে এক যুগের অপেক্ষা শেষে ‘লা ডেসিমা’ অর্থাৎ দশম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ঘরে তোলে বার্নাব্যু’র দল।
অথচ সেদিনের সেই ম্যাচের নায়ক হতে পারতেন দিয়েগো গোদিনও। তার গোলেই তো ৯৩.৪৮ মিনিট পর্যন্ত এগিয়ে ছিল অ্যাটলেটিকো! কিন্তু ম্যাচের একবারে অন্তিম মুহূর্তে লুকা মড্রিচের কর্ণার কিক রামোসের মাথার ছোঁয়ায় পাল্টে দেয় দৃশ্যপট। দুই বছর পর মিলানের সান সিরো স্টেডিয়ামের ফাইনালে আজ আবারো মুখোমুখী তারা। গোদিনকে কি একটুও তাড়া করে না সেদিনের সেই ঘটনা? সেদিনের সেই হতাশা কি আজও ভুলতে পেরেছেন অ্যাটলেটিকোর কেউ-ই? না পারারই কথা। তবে সেদিনের সেই হতাশাই এখন অ্যাটলেটিকোর শক্তি। শিরোপার পথে ওটাই গ্রিজম্যান-কোকেদের বড় শিক্ষা। ‘সেই শিক্ষাটা আমাদের কাজে লাগাতেই হবে। নিশ্চিত করতে হবে যেন তেমন কিছু আবার না হয়।’ বলেন গোদিন।
এবার আর ব্যর্থ হয়ে ফিরতে চান না দলের ডিয়েগো সিমিওনেও। আবেগ মিশ্রিত কণ্ঠে অ্যাটলেটিকো কোচ বলেন, ‘স্টেডিয়ামে আসার পথে বাসের ভেতর থেকে আমরা অসংখ্য ছেলেমেয়েদের আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখেছি। কোয়ার্টার ফাইনালে বার্সেলোনাকে হারানোর পর তারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখতে শিখেছে, তারা বিশ্বাস করে দিনটি আমাদেরই হবে।’ শুধু আবেগ নয়, বাস্তবতাটাও ভালোই বোঝেন সিমিওনে। তাই তো তাঁর সতর্ক কণ্ঠ জানান দিল, ‘ইতোমধ্যেই আমরা বিশ্বের সেরা তিন দলের মধ্যে দুই দলের মুখোমুখী হয়েছি এবং এখন ফাইনালে আমরা তৃতীয় দলের মুখোমুখী হতে যাচ্ছি। হ্যাঁ এটা ঠিক, তারা বার্সেলোনা ও বায়ার্নের চেয়ে আলাদা, নিজেদের অবস্থানে তারা ভয়ঙ্কর এক দল। পেপে, ভারান, রামোস ও কাসিমিরোদের নিয়ে গড়া শক্তিশালী রক্ষণ মিলে তারা আদোম্য। আমরাও প্রস্তুত থাকব আমাদের খেলাটা খেলার জন্যে। আঙ্গুলিতে ক্রস চিহ্ন মানেই পরিষ্কারভাবে বুঝে নিতে হবে আমরা কি করতে চায়, শুধুই জয়।’
আর রিয়াল? জিদানের শিষ্যরা বিভোর আসরের ১১তম শিরোপা জয়ের স্বপ্নে। নইলে যে গেল মৌসুমের মত এবারো শিরোপা শূন্য থেকেই মৌসুম শেষ করতে হবে লস বøাঙ্কোসদের। স্বপ্ন তারা দেখতেই পারে। নিজেদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দিতে যে একজন স্বপ্নসারথীকে পাশে পেয়েছে তারা। মাত্র ৫ মাস আগেও যে দলকে মনে হচ্ছিল অথৈ সমুদ্রে ভাসমান কান্ডারিহীন এক ভাসমান নৌকা, সেই দলের নৌকাই এখন ভিড়েছে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ঘাটে। সফলতা থেকে মাত্র এক জয় দূরে। দলের ভাগ্য বদলের সেই মহান কান্ডারি হলেন কোচ জিনেদিন জিদান। দলের অধিনায়কের পূর্ণ আস্থা সেই কান্ডারির প্রতি, ‘জিজু (জিনেদিন জিদান) অসাধারণ এক খেলোয়াড় থেকে কোচ হওয়ার পথে কিছু সাথে করে এনেছে। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা আমরা কাজে লাগাতে চেষ্টা করি। কোচ হিসেবে এটাই সে এখন আমাদের সেখাচ্ছে। আমি মনে করি আমাদের দলে দারুণ ভারসাম্য আছে এবং মৌসুমে দলের খারাপ মুহূর্তে সে খেলোয়াড়দের কাছ থেকে ভালেটা বের করে এনেছে।’ খেলোয়াড়দের সাথে ফরাসি তারকার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কই তাদের বদলে যাওয়ার কারণ বলে উল্লেখ করেন রামোস।
ফাইনালের এই ম্যাচকে ঘিরে আলো থাকবে বিশেষ একজনের ওপর, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। অনুশীলনে চোট পাওয়ার পর আজ তাঁর খেলা নিয়ে শতভাগ নিশ্চয়তা আগেই দিয়েছেন তিনি নিজে, নিশ্চিত জিদানও। সেটা সত্যি হলে এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোল (১৭) করা নিজের রেকর্ডটা এবার বাড়ানোর সুযোগ পাবেন রোনালদো। তা থেকে এবার মাত্র এক গোল দূরে রিয়াল তারকা। একই সাথে সুযোগ থাকছে লিওনেল মেসির গড়া সর্বোচ্চ ৫ বার আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার রেকর্ড স্পর্শ করা। তবে পুরো মৌসুম অ্যাটলেটিকো যেভাবে রক্ষণাত্মক ফুটবল খেলে আসছে তাতে গোল পাওয়াটাও আরেক চ্যালেঞ্জ পর্তুগিজ তারকার জন্য।

 অ্যাটলেটিকো জিততে না পারলে শিরোপা ছাড়াই তিনটি ফাইনালে খেলা একমাত্র দল হবে তারা।
 রিয়ালের এটি ২৭তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল, যা আসরের রেকর্ড।
 সিমিওনে জিতলে ১৯৬৫ সালের পর প্রথম ও ইতিহাসে তৃতীয় নন-ইউরোপিয়ান কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের রেকর্ড গড়বেন।
 আসরে তিনবার নগর প্রতিদ্ব›দ্বীর সাক্ষাতে একবারো জেতেনি অ্যাটলেটিকো।
 সব মিলে দু’দলের ২০২ বারের সাক্ষাতে ১০২ বার জিতেছে রিয়াল, ৫১টি জয় অ্যাটলেটিকোর, বাকি ৪৯ ম্যাচ ড্র।
 কোচ জিদানের প্রথম হারের স্বাদ এবারের ঘরোয়া লিগে এই অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে (১-০)। প্রথম লেগের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে।
 সব মিলে শেষ ১০ বারের সাক্ষাতে ৫ বার জিতেছে অ্যটলেটিকো, রিয়াল ১ বার, ড্র চারটি।
 ১৩তম খেলোয়াড় হিসেবে ভিন্ন দুটি দলের হয়ে শিরোপা জয়ের হাতছানি রিয়ালের টনি ক্রুজ ও অ্যাটলেটিকোর ফার্নান্ডো তোরেসের সামনে।
 টানা ১২ ম্যাচে জয় রিয়ালের। সব মিলে ১০ ম্যাচের শেষ তিনটিতে হার অ্যাটলেটিকোর।
 মৌসুমে লিগে মাত্র ১৮ গোল খেয়েছে অ্যাটলেটিকো, ইউরোপিয়ান শীর্ষ লিগে যা সর্বনিম্ন।
 খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা জিতার সুযোগ জিদানের। সেক্ষেত্রে তিনি হবেন এই দলের সপ্তম কোন ব্যক্তি।

ফাইনালে মুখোমুখি
রিয়াল মাদ্রিদ : অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাদ্রিদময় আরেক ফাইনালের প্রতীক্ষা
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ