Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

মাঠ পর্যায়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির অভাবে দক্ষিণাঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ ও উৎপাদন সম্ভব হয়নি এখনো

| প্রকাশের সময় : ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

নাছিম উল আলম : দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপক‚লীয় এলাকা জুড়ে আম’সহ বিভিন্ন মওসুমী ফলের গাছ মুকুলে ভরে গেছে। পৌষের মধ্যভাগ থেকে গাছে যে মুকুলের আগমন শুরু হয়েছিল, এখন তা সব গাছেই ভরে উঠছে। দক্ষিণাঞ্চলে এখনো বাণিজ্যিকভাবে আমের আবাদ ও উৎপাদন শুরু না হলেও ক্রমে এর প্রসার ঘটছে। তবে আমসহ বিভিন্ন ফলদ এবং বনজ গাছের চারা ও কলম-এর বাণিজ্যিক উৎপাদনে দক্ষিণাঞ্চল ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষস্থান দখল করেছে। বরিশালের বানরীপাড়া, পিরোজপুরের নেসারাবাদ, কাউখালী ও সদর উপজেলাসহ এ অঞ্চলের কয়েকটি উপজেলা থেকে সারা দেশেই ফলদ ও বনজ গাছের চারাÑকলম সরবারহ হচ্ছে।
দেশের উপকূলভাগের ৪৭ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ইতোমধ্যে যে প্রায় সোয়া ২ লাখ হেক্টর নতুন লবনাম্বুজ বনভ‚মি সৃষ্টি করা হয়েছে তবে উপকূলের একটি বড় অংশেই বিভিন্ন ফলজ জাতের গাছও রোপন করা হয়েছে। কিন্তু এর আবাদ পরবর্তী সুষ্ঠু পরিচর্যা আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর নয়। এখনো বন বিভাগসহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কাছে দক্ষিণাঞ্চলে ফলদ গাছের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণ খুব একটা গুরুত্ব লাভ করেনি। মাঠ পর্যায়ে খামারীদের কাছে এসব ফলদ গাছের আবাদ ও আধুুনিক পরিচর্যা প্রযুক্তি এখনো খুব একটা হস্তান্তর হয়নি। অথচ দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৩০ভাগ এলাকাই দেশের উপকূলীয় এলাকায়। অথচ দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮%-এরই বসবাস ৭১০কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলীয় এলাকা জুড়ে। এ অঞ্চলে সৃষ্ট বিশাল বনভূমির একটি অংশ জুড়ে নানা ফলদ গাছ থাকলেও তা খুব একটা পরিকল্পিত ও আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর নয়।
স্বাদ, গন্ধ ও পুষ্টিমানে বৈচিত্রের ফল আম অন্য যেকোন ফলের সাথেই তুলনাহীন। পাকা আমে প্রচুর পরিমাণে ‘ভিটামিন-এ’ এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে। এমনকি কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে আমে ‘ভিটামিন-এ’র পরিমাণ অন্য যেকোন ফলের চেয়ে বেশী। ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট-বারি’র মতে আমাদের দেশের ৫ লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে বছরে আড়াই লাক্ষাধিক টন নানা জাতের আম উৎপাদিত হচ্ছে। বারি ইতোমধ্যে বেশ কিছু উচ্চ ফলনশীল ও সুমিষ্ট আমের জাতও উদ্ভাবন করেছে। এরমধ্যে ‘বারি আমÑ১’ বা ‘মহানন্দা’ জাতের আমের আকৃতি প্রায় গোলাকার। এ জাতের আম গাছে প্রতিবছরই নিয়মিত ফল দেয়। যার প্রতিটি গাছে ৭শ’ থেকে ৮শ’ পর্যন্ত আম উৎপাদন হয়ে থাকে। এছাড়া ‘বারী আম-২’ এবং ‘বারি আম-৩ বা আম্রপালি’ ইতোমধ্যে সারা দেশে যথেষ্ঠ গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেছে। ‘বারি’ আরো বেশ কিছু উন্নত জাতের সুমিষ্ট আমের জাত উদ্ভাবন করেছে। তবে এসব আমের চারা ও কলম দক্ষিণাঞ্চলের মাঠ পর্যায়ে খুব একটা সহজলভ্য নয়। বরিশাল ও পটুয়াখালীতে বারি’র দুটি হর্টিকালচার নার্সাারি থেকে কিছু উন্নত ও সুমিষ্ট আমের চারা ও কলম পাওয়া গেলেও তা কৃষকদের কাছে সহজলভ্য করার কোন উদ্যোগ নেই। বাঙালীর কাছে আম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল হিসেবে সদুর অতীতকাল থেকেই সমাদৃত। রসালো ও সুমিষ্ট এ ফল-এর উৎপাদন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ছোয়ায় যথেষ্ঠ উন্নত হলেও দক্ষিণাঞ্চলে সে ধরনের পরিবর্তন আসেনি। বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা ও পিরোজপুরের বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর আম গাছ থাকলেও তা পরিকল্পিত ও বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নয়। তবে সাম্প্রতিককালে পিরোজপুরের কাউখালী, মঠবাাড়ীয়া, নেসারাবাদ, বরিশালের বানরীপাড়া এবং পটুয়াখালীর কলাপাড়া ও গলাচিপা ছাড়াও বরগুনার আমতলী এলাকায় সীমিতাকারে আমের বাণিজ্যিক আবাদ শুরু হয়েছে। তবে দক্ষিণাঞ্চলে আম’সহ ফলদ গাছ পরিচর্যার বিষয়ে সাধারণ কৃষকসহ গৃহস্থের লোকজন এখনো কৃষি সম্প্রসারণ কর্মীদের তেমন কোন সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বরিশাল বিভাগীয় সদরে আজ পর্যন্ত সরকারি কোন নার্সারি স্থাপিত হয়নি। নগরীর উপকন্ঠে রহমতপুরে একটি নার্সারি থাকলেও তা বেশীরভাগ মানুষেরই অজানা। পাশাপাশি নগরীর লাকুঠিয়া এলাকায় একটি বিক্রয় কেন্দ্র থাকলেও সেখানে তেমন কোন গাছই পাওয়া যাচ্ছে না। যা এ নগরবাশীর কাছেও অনেকটা অজানা।
এব্যাপারে বারি’র বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, তারা উন্নতজাত ও তার আবাদ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেও মাঠ পর্যায়ে তার সম্প্রসারণ দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই’র। তবে ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল এ লক্ষে তাদের প্রচেষ্টার কথা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে পিরোজপুরসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় আমের পাশাপাশি মাল্টা আবাদ ও উৎপাদনে যথেষ্ট সাফল্যের কথাও জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল।
তবে সব বাধাÑপ্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করেও দক্ষিণাঞ্চলে আমসহ বিভিন্ন ফলদ গাছের আবাদ সম্প্রসারণ হচ্ছে। প্রতিবছর বরিশাল বিভাগীয় সদরসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে বৃক্ষ মেলা উদযাপিত হয়। যেখানেও বিভিন্ন ধরনের ফলদ গাছের চারা ও কলম বিক্রি করছে বেসরকারি নার্সারিগুলো।
দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের মধ্যে গাছ রোপনের একটি সহজাত প্রবনতার কথাও জানিয়েছেন কৃষি বিজ্ঞানীগণ। এখন তাদের কাছে আধুুনিক আবাদ ও পরবর্তী পরিচর্যা প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে পারলে আমসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের উৎপাদনে আশাতীত সাফল্য লাভ সম্ভব বলে মনে করছেন মহলটি।
বন বিভাগ এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকা আম ছাড়াও দেশীয় সব ধরনের ফলদ গাছ-এর আবাদ ও সুমিষ্ট ফল উৎপাদনের উপযোগী। ২০০৩-০৪ সালে সরকার দেশে ১ কোটি নারকেল চারা রোপনের যে কর্মসূচি গ্রহণ করে তার আওতায় বন বিভাগ, বিএডিসি ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর প্রায় ৬৫ লাখ নারকেল চারা বিতরণ করেছিল। যার ৫০ ভাগেরও বেশী রোপন করা হয় উপক‚লীয় জেলাগুলোতে। কিন্তু এসব নারকেল গাছ রোপন থেকে শুরু করে তার পরবর্তী পরিচর্যাও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি নির্ভর ছিলনা। ফলে ঐসব নারকেল গাছ থেকে আশাব্যঞ্জক উৎপাদন না আসলেও তা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থায় যথেষ্ঠ অবদান রাখতে শুরু করেছে ইতোমধ্যে। কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে দক্ষিণাঞ্চলে আম’সহ সব ধরনের ফলদ গাছ আবাদ ও ফল উৎপাদনে একটি পাইলট প্রকল্প গ্রহণ করে পরবর্তীতে তা সমগ্র এলাকায় ছড়িয়ে দেয়া যেতে পারে। যার সুফল হবে সুদুর প্রসারি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মাঠ

১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ