পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
গত নভেম্বরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ সাঁওতাল পল্লীর বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর ঘটনায় তিনজন পুলিশ সদস্য সক্রিয়ভাবে জড়িত ছিল। হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত বিচারিক তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি এবং উক্ত ঘটনার সময়ে দায়িত্বরত আইন-শৃঙ্খলা বহিনীর কতিপয় সদস্য দায়ী। ঘটনার ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ, প্রত্যক্ষদর্শীদের জবানবন্দি ও অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে তদন্ত কমিটি এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে বলে সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে। গত সোমবার এফিডেভিট আকারে হাইকোর্টে প্রতিবেদনটি জমা দেয়া হয়েছে। একটি ইংরেজি দৈনিককে ডেপুটি এ্যাটর্নী জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু জানিয়েছেন, গাইবান্ধার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ এই তদন্ত পরিচালনা করেন। তিনি এক হাজার এক পৃষ্ঠার সংশ্লিষ্ট কাগজপত্রসহ ৬৫ পৃষ্ঠার রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিয়েছেন। আলোচ্য চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রিপোর্ট জমা দেয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন। তবে রিপোর্টে কী রয়েছে তা জানাতে তিনি অস্বীকার করেছেন। সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে প্রকাশিত খবরাদিতে বলা হয়েছে, সাঁওতালদের বাড়ি-ঘরে আগুন লাগানোর বিষয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আল-জাজিরা টেলিভিশনে প্রদর্শিত ভিডিও ক্লিপ পর্যবেক্ষণে দেখা যায় যে কিছু পুলিশ সদস্য এবং দুইজন সিভিল পোশাকধারী ব্যক্তি সাঁওতালদের বাড়ী-ঘরে আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। আরো কিছু পুলিশ সদস্য কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে ছিলেন যারা আগুন লাগানোয় সক্রিয়ভাবে অংশ নেননি। তবে তারা আগুন নেভানোর চেষ্টাও করেননি।
গত ৬ নভেম্বর গোন্দিগঞ্জের রংপুর চিনিকলের জমিতে রোপণ করা আখ কাটাকে কেন্দ্র করে পুলিশ ও চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ হয়। এতে তিন সাঁওতাল নিহত হয়, আহত হয় অনেকে। পরে পুলিশ-র্যাব ওইদিন সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে মিলের জমি থেকে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে। এ ঘটনায় হাইকোর্টে পৃথক রীট করা হয়। এর মধ্যে তিনটি সংগঠনের করা এক রীট আবেদনের শুনানি নিয়ে গত বছরের ১৭ নভেম্বর হাইকোর্ট রুলসহ অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এই ধারাবাহিকতায় ৬ ডিসেম্বর উচ্ছেদের ঘটনায় একটি তদন্ত প্রতিবেদনে সাঁওতালদের বাঙ্গালী দুষ্কৃতকারী উল্লেখ করায় গাইবান্ধার জেলা প্রশাসককে তলব করেন হাইকোর্ট। একই শব্দ ব্যবহার করায় পুলিশ সুপারকেও তলব করা হয়েছিল। ১৪ ডিসেম্বর হাইকোর্টের একই বেঞ্চ সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিও’র ভিত্তিতে গাইবান্ধার মুখ্য বিচারিক হাকিমকে বিষয়টি তদন্ত করে ৩১ জানুয়ারির মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ দায়িত্ব পালনকারী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ কর্মকর্তা, ফার্মের কর্মকর্তা-কর্মচারী, সাংবাদিক, ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতাল ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের সাক্ষ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি গ্রæপ সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের অফিসের ভেতর দিয়ে পশ্চিম দিকে চামগাড়ীবিল নামক স্থানে সাঁওতালদের স্থাপনার দিকে গুলি করতে করতে এগুতে থাকলে সাঁওতালরা তীরছুঁড়ে প্রতিরোধের চেষ্টা করে। তখন নিরাপত্তার অভাবে সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। রংপুর চিনিকলের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণও একই কারণে সাঁওতালদের স্থাপনার কাছে যেতে পারেনি। পুলিশের গুলির আওয়াজে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে সাঁওতালগণ তাদের স্থাপনা ছেড়ে চলে গেলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে গ্রæপটি খামারের ভিতর দিয়ে প্রবেশ করেছিল তারাই চামগাড়ী বিল নামক স্থানে সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনার কাছে গমন করে। পর্যবেক্ষণে দেখাগেছে, চামগাড়ী বিল নামক স্থানে নির্মিত স্থাপনা থেকে সাঁওতালরা চলে যাবার পর আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ওই সময়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ-র্যাব ও ডিবি’র পোশাক পরিহিত সদস্য এবং সাধারণ পোশাকধারী দু’জন (লাল ও সাদা রং-এর শার্ট পরিহিত) ব্যক্তিকে সক্রিয়ভাবে চামগাড়ীবিল নামক স্থানে সাঁওতালদের স্থাপনায় আগুন লাগাতে দেখাগেছে। অপরদিকে, কুয়ামারা, সাহেবগঞ্জ ও হরিণমারি এলাকায় সাঁওতালদের নির্মিত স্থাপনায় কতিপয় লোক আগুন লাগিয়েছে।
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ঘটনার জের ধরে উচ্চতর আদালতের গঠন করা তদন্ত কমিটির রিপোর্টে যে গুরুতর বিষয় উঠে এসেছে তার তাৎপর্যকে চলমান প্রেক্ষিতে খাটো করে দেখার কোন সুযোগ নেই। এটা ভাবতেও কষ্ট হয় যে, যেখানে জনগণের জানমাল রক্ষা করা আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী তথা পুলিশের দায়িত্ব, সেখানে রক্ষক নিজেই যদি ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে তাহলে জনগণ যাবে কোথায়? প্রাসঙ্গিকতায় এটা বলা দরকার, গত কিছুদিনে দেশে তথাকথিত জঙ্গি বানাবার বহু মামলায় দেশের অগণিত নাগরিক হয়রানির শিকার। এসব ঘটনা সম্পর্কে সঠিক তদন্তের দাবি রয়েছে সকল মহলে। বিচারিক তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী আলোচ্য ঘটনা প্রমাণ করেছে যে, পুলিশ নিজেই ঘটনা ঘটিয়ে তার দায় অন্যদের উপর চাপিয়ে দিচ্ছে। এধরনের ঘটনা কেবলমাত্র এই একটি ক্ষেত্রেই ঘটেছে তেমনটা মনে না করাই সঙ্গত। কার্যত, একশ্রেণীর পুলিশের বেপরোয়া হয়ে ওঠার ফলেই সামগ্রিক পরিস্থিতির আমূল নেতিবাচক পরিবর্তন হয়েছে। এসব কারণে উচ্চতর আদালত বেশকিছু নির্দেশনাও দিয়েছেন। আমরা মনে করি, আলোচ্য ঘটনায় প্রকৃত দোষীরা অবশ্যই সাজা পাবে। অন্যদিকে এধরনের প্রতিটি ঘটনার সাথে জড়িত প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করতে প্রতিটি ঘটনারই সুষ্ঠু বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।