মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : মুক্তবাজার নীতি থেকে সরে এসে রক্ষণশীল অর্থনীতি প্রণয়ন করে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক তৈরির ওপর জোর দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এশিয়ার অর্থনৈতিক পরাশক্তি চীন ও মার্কিন সীমান্তবর্তী মেক্সিকোর সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধের আভাস দিয়েছে হোয়াইট হাউস। বিশ্লেষকরা মনে করেন, ট্রাম্পের এই বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিনিদের ভাগ্য বদলাবে না, বরং তা আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে। বিশ্ববাজারে ভয়াবহ টানাপড়েন সৃষ্টি হতে পারে। এতে বাস্তব সামরিক যুদ্ধের আশঙ্কা বেড়ে যাবে বলেও মনে করছেন কোনও কোনও বিশ্লেষক।
অভিষেক ভাষণে সংরক্ষণশীল নীতির মধ্য দিয়ে আমেরিকানদের ভাগ্য উন্নয়নের স্বপ্নকে সামনে নিয়ে এসেছেন ট্রাম্প। সমাজের ভয়াবহ হতাশাজনক অর্থনৈতিক চিত্রই ট্রাম্পের এই সংরক্ষণশীলতা প্রচারের সুযোগ তৈরি করেছে। সম্প্রতি হাফিংটন পোস্ট লিখেছে, অর্থনৈতিক বৈষম্যকে ওবামা তার সময়ের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলেছিলেন, অথচ সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি তেমন কিছুই করেননি। প্রচারণা থেকে অভিষেক বক্তৃতা পর্যন্ত এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপন্নতাকেই পুঁজি করেছেন ট্রাম্প।
বার্কলের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার এক হিসাব অনুযায়ী, গত আট বছরে ১ শতাংশ পরিবার এই সময়ে অর্জিত সব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ৫২ শতাংশের সুফল করায়ত্ত করেছে। ২০০৮-এর মন্দার কারণে বাকি ৯৯ শতাংশ মানুষ যে অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলেন, এত দিনে তার দুই-তৃতীয়াংশের কম তা পুনরুদ্ধারে সক্ষম হয়েছেন। সে মন্দার ঝড়ে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ঋণ শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় প্রায় এক কোটি মানুষ বসতবাড়ির মালিকানা হারান। এমনকি ২০১৫ সালেও ১১ লাখ পরিবারের ঋণের কারণে বসতবাড়ি নিলামের মুখে ছিল। শপথ গ্রহণের পর শুক্রবারের অভিষেক ভাষণে নতুন বাণিজ্য কৌশল সম্পর্কে ধারণা দেন ট্রাম্প। মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুরক্ষার ওপর জোর দেন তিনি। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন ট্রাম্প। ট্রাম্পের সেই অভিষেক ভাষণের পর থেকেই উদ্বেগ শুরু হয় বিশ্ববাজারে। সোমবার বিশ্ববাজারে লেনদেন শুরুর পর থেকেই চীন-ভারতসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ে। এর আগের সপ্তাহটি বিশ্ব পুঁজিবাজারের জন্য ছিল ভয়াবহ হতাশার। ব্রিটেনের এফটিএসই ১.২ শতাংশ দরপতন হয়। ডো জোনস-এর দর নেমে যায় ১.১ শতাংশ। নিকির দর ০.৮ এবং সেনস্যাক্স-এর দর ০.৭ শতাংশ নেমে যায়। ট্রাম্পের বক্তৃতার ধারাবাহিকতায় ২১ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে একটি শক্ত ও ন্যায্য চুক্তির কথা বলা হয়। মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি এবং লাখ লাখ মানুষের চাকরি ফিরে পেতে এই চুক্তিকে কাজে লাগাতে চান তিনি।
ট্রাম্পের শপথের কিছু সময় পর দেওয়া হোয়াইট হাউসের ওই বিবৃতিতে বলা হয়, যেসব দেশ বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং আমেরিকান কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অভিষেক বক্তৃতা আর হোয়াইট হাউসের বিবৃতির পরপরই ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত বাণিজ্য নীতির সঙ্গে সাজুয্য রেখে মেক্সিকো ও কানাডার সঙ্গে নাফটা চুক্তি পুনমূল্যায়ন-এর কাজ শুরু হয়েছে বলে জানা যায়। এই প্রতিবেদন তৈরির সময় মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন-এর খবর থেকে নাফটা পুনর্মূল্যায়নের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওদিকে ঘোষিত বাণিজ্য নীতির বিপরীতে পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে চীন। ট্রাম্পের শপথের আগেই তারো ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোকে বলেছিল তাদের সঙ্গে থাকতে।
এদিকে, দায়িত্ব নেওয়ার পর ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র সঙ্গের আসন্ন বৈঠকে নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টা নিতে পারেন বলে আভাস দিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ। অন্যান্য ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমও ট্রাম্প-থেরেসা বৈঠককে রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে।
বিশ্বব্যাংকের সাবেক পরিচালক এবং নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ মনে করেন, যদি বাণিজ্য যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, ট্রাম্প জিতেও যেতে পারেন! কেননা রফতানির জন্য চীন যুক্তরাষ্ট্রের ওপর যতটা নির্ভরশীল, অন্য কারও ওপর ততটা নয়। বিবিসি, রয়টার্স, ওয়েবসাইট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।