Inqilab Logo

শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে উত্তেজনা অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠছে

| প্রকাশের সময় : ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : চীনের বাণিজ্য নীতির সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। একইসঙ্গে দেশটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য আমদানিতে শাস্তিমূলক ট্যারিফ আরোপেরও হুমকি দিয়েছেন তিনি। শপথ গ্রহণের পর নতুন বাণিজ্য কৌশল সম্পর্কেও ধারণা দেন ট্রাম্প। এতে তিনি মার্কিন নাগরিকদের চাকরির সুরক্ষার ওপর জোর দেন। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ১২টি দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নেওয়ার কথাও বলেন ট্রাম্প। এক কথায় অন্যান্য দেশের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলেন আলোচিত এই ব্যবসায়ী কাম রাজনীতিক। ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন ঘোষণাকে ট্রাম্পযুগে নাটকীয় পরিবর্তনের সূচনা হিসেবে দেখছে চীন। এমনটাই বলছে দেশটির ক্ষমতাসীন দল কমিউনিস্ট পার্টির মুখপাত্র গ্লোবাল টাইমস। পত্রিকাটি লিখেছে, ট্রাম্প হয়তো বিশ্বমঞ্চে যুক্তরাষ্ট্রের কর্পোরেট স্বার্থ সামনে রেখে তার বিদেশ নীতিকে সাজাবেন। ভাবাদর্শ বা রাজনৈতিক মূল্যবোধকে নিষ্প্রভ করেই হয়তো তিনি এটা করবেন।
চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমটির সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, চার বছরকে সামনে রেখেই যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে সংঘাত এবং চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যে উত্তেজনার বিষয়টি অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প প্রশাসন নিঃসন্দেহে তার সদর দরজা এবং বিশ্বজুড়ে অগ্ন্যুৎপাত তৈরি করবে। এখন চীনের পালা কখন আসে সেটা দেখার প্রতীক্ষা। ট্রাম্পের অভিষেকের প্রাক্কালে অবশ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সুরেই কথা বলেছে চীনা সরকার এবং দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র হুয়া চানিং। তিনি বলেন, বিরোধিতা বা শত্রুতার চেয়ে উভয় পক্ষেরই বরং উচিত বন্ধু ও অংশীদার হয়ে থাকার চেষ্টা করা।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বন্ধুত্বের কথা বললেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। চীনের অভ্যন্তরীণ সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলোতে ট্রাম্পের অভিষেক বক্তব্য সরাসরি প্রদর্শনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। দেশটির নেতাদের আশঙ্কা ছিল, ট্রাম্প হয়তো তার ভাষণে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের আক্রমণ করে বসতে পারেন। বেইজিং-এর স্বঘোষিত একজন ট্রাম্পভক্ত সাংবাদিক শিয়ং টং। চীনা টেলিভিশনগুলো ট্রাম্পের অভিষেক ভাষণ সম্প্রচার না করায় ঘরে বসে ইন্টারনেটেই এটা দেখেন তিনি। ৩২ বছরের শিয়ং টন বলেন, ধনকুবের ট্রাম্প হোয়াইট হাউসের চাবি পাওয়ায় তিনি আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়েন। তার ভাষায়, ট্রাম্প একজন চমৎকার মানুষ। শিয়ং টং বলেন, ট্রাম্প বেশ বাস্তববাদী। তাকে ধন্যবাদ। বিশ্বে একটি ইতিবাচক দিক শিরোনাম হতে যাচ্ছে। লোকজন এখন আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী হবেন। এর ফলে স্টক মার্কেটে শেয়ারের দাম বাড়বে। রিপাবলিকান পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ মিল রয়েছে বলে মনে করেন সাংবাদিক শিয়ং টং। তার ভাষায়,তারা উভয়েই কঠোর পরিশ্রমী। তারা দুর্দান্ত মানুষ। শিয়ং টং বলেন, আমি ট্রাম্পের একজন ভক্ত। অন্যরা তার সম্পর্কে কি ভাবলো সেটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার ধারণা, ট্রাম্পও এমন। হোয়াইট হাউস থেকে ট্রাম্প যদি বেইজিং-এর জন্য চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রাখেন তাহলে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক বাহিনীকে শক্তভাবে মোকাবিলা বা রুখে দেওয়া নিয়েও চিন্তিত নন শিয়ং টং। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যদি আমরা লড়াই শুরু করি; তাহলে তাদের হারিয়ে আমরাই জিতবো। তারা আমাদের দক্ষিণ চীন সাগরে হস্তক্ষেপের সাহস করবে না। ট্রাম্পের অভিষেকের পর অবশ্য হোয়াইট হাউসের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, যেসব দেশ বাণিজ্য চুক্তি ভঙ্গ করছে এবং আমেরিকান কর্মীদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিবৃতিতে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট (নাফটা)-এর কথাও উঠে আসে। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো’কে নিয়ে এ সংগঠন যাত্রা শুরু করেছিল। তবে বিবৃতিতে বলা হয়, ট্রাম্প আরেকটি চুক্তিতে আবদ্ধ হতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। বিবৃতিতে বলা হয়, দীর্ঘ সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্রকে এমন বাণিজ্য চুক্তিতে বাধ্য করা হচ্ছে যাতে দেশের কঠোর পরিশ্রমী নারী-পুরুষদের বদলে ওয়াশিংটনের অভিজাতদের স্বার্থ সংরক্ষিত হয়েছে। এর ফলে কর্মঠ লোকজনের শহরগুলো দেখতে পেলো তাদের ফ্যাক্টরিগুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ভালো বেতনের চাকরিগুলো অন্যত্র চলে যাচ্ছে। আমেরিকানরা একটা বড় রকমের বাণিজ্য ঘাটতির মুখে পড়ে।
হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক প্রবৃদ্ধি বাড়াতে একটি শক্ত ও ন্যায্য চুক্তি’র কথা বলা হয়েছে। মার্কিন অর্থনীতির উন্নতি এবং লাখ লাখ মানুষের চাকরি ফিরে পেতে এই চুক্তিকে কাজে লাগানো হবে। আর এই কৌশলের শুরুটা হবে টিপিপি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের মাধ্যমে। এটা নিশ্চিত করা হবে যে, নতুন যে কোনও বাণিজ্য চুক্তি হবে আমেরিকান কর্মীদের স্বার্থে। নাফটা’য় স্বাক্ষরকারী দেশগুলো যদি আমেরিকান কর্মীদের জন্য ন্যায্য চুক্তি প্রত্যাখ্যান করে তাহলে প্রেসিডেন্ট নাফটা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহারের ঘোষণা দেবেন। ট্রান্স প্যাসিফিক পার্টনারশিপ (টিপিপি) চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র স্বাক্ষর করলেও ওয়াশিংটন এখনও চুক্তিটি অনুসমর্থন করেনি। এশিয়ার ক্রমবর্ধমান শক্তি চীনকে মোকাবিলায় এটা ছিল ওবামা প্রশাসনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক বুনিয়াদ। ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অবস্থানে উদ্বিগ্ন এ চুক্তির প্রবক্তারা। কারণ বহু আলোচনার পর এ চুক্তি  স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এখন চুক্তি অকার্যকর হয়ে পড়লে সেটা বরং এ অঞ্চলে চীনের অর্থনীতিকেই আরও সমৃদ্ধ করবে। বৃহস্পতিবার চীন বলেছে, দুই দেশ আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বাণিজ্য সংক্রান্ত যে কোনও বিষয় নিষ্পত্তি করতে পারে। তবে চীনের একটি পত্রিকা সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ট্রাম্পের যে কোনও বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিশোধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হতে পারে মার্কিন বাণিজ্য খাত। দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চীন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ