Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুঁজিবাজারে বিনিয়োগে সতর্ক হতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১:০১ এএম

পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন হঠাৎই বেড়ে গেছে। এটা একদিকে যেমন আশাব্যঞ্জক, অন্যদিকে তেমনি আশঙ্কাজনক। সূচক ও লেনদেন যখন বাড়ে, ধরে নিতে হবে বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত হয়েছে এবং বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারমুখী হয়েছে। সূচক ও লেনদেন বাড়া বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর। তবে ওই যে কথায় বলে, ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলেও ভয় পায়। অতীতে একাধিকবার পুঁজিবাজার বিপর্যয়ে বিনিয়োগকারীদের সর্বস্বান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতা শঙ্কাও জাগায়। প্রশ্ন ওঠে, এর পেছনে কোনো কারসাজি নেই তো? বিশ্লেষক ও অভিজ্ঞজনদের মতে, অর্থনীতিতে এমন কোনো সুলক্ষণ নেই যাতে এভাবে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেন বেড়ে যেতে পারে। তারা মনে করছেন, কয়েক দিনে যে রকম সূচক ও লেনদেন বেড়েছে সেটা স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত নয়। কোনো মতলব নিয়ে ‘খেলোয়াড়রা’ মাঠে নেমেছে কি না সেটা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। অতীতে খেলোয়াড়দের নানামুখী কারসাজির কারণে পুঁজিবাজারে সূচক ও লেনদেনে অস্বাভাবিক উল্লম্ফন ঘটে। বিনিয়োগকারীরা এটা দেখে, বুঝে, না বুঝে বিনিয়োগে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। এরপর স্বল্প দিনের ব্যবধানে বাজারের অতি স্ফীত বেলুন ফুটো হয়ে নুইয়ে পড়ে। বিনিয়োগকারীদের হাতে হারিকেন উঠে যায়। মাঝখান থেকে খেলোয়াড়রা তাদের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে সটকে পড়ে। তাদের কারসাজির শিকারে পরিণত হয়ে মাঝারি ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা পথে বসে গেলেও এর কোনো বিচার বা প্রতিকার হয়নি।  তাই যখনই পুঁজিবাজারে তেজীভাব দেখা যায়, তখন সর্বাগ্রে অতীতের ট্র্যাজেডির কথাই মনে করে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তারা অবশ্য বলেছেন, সূচক ও লেনদেন বাড়াটা স্বাভাবিক। এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেছেন, সরকার, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জসহ বিভিন্ন মহলের নানা উদ্যোগের ফলে অর্থনীতির অগ্রগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাজার ভালো একটি জায়গায় অবস্থান নিয়েছে। সূচক ও লেনদেন যে পর্যায়ে গেছে তাতে ভয়ের কিছু নেই। এ অবস্থাকে ঝুঁকিপূর্ণ বলা যাবে না। তবে তারা বিনিয়োগকারীদের সতর্ক করে দিয়ে এ-ও বলেছেন, ধারদেনা, বউয়ের গয়না, জমি বিক্রি করে কেউ বাজারে বিনিয়োগ করবেন না। কেবল তারা বাজারে আসুন যাদের উদ্বৃত্ত অর্থ রয়েছে। তাও আবার উদ্বৃত্ত অর্থের পুরোটা বিনিয়োগ করবেন না। কারণ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ ও প্রতিটি শেয়ারের অপর নাম ঝুঁকি। একথা বলাই বাহুল্য, দেশে বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ ও সুযোগ কম। এই কম সুযোগও সংকুচিত হয়ে আসছে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় আছেন। সঞ্চয়পত্র ছাড়া তাদের স্বল্পপুঁজি বা অর্থ বিনিয়োগের তেমন কোনো জায়গা নেই। এমতাবস্থায় তাদের পুঁজিবাজারমুখী হওয়া অস্বাভাবিক নয়। ব্যাংকে আমানতের সুদের হার কমে যাওয়াতেও অনেকে বিকল্প হিসেবে পুঁজিবাজারে অর্থলগ্নী করতে আগ্রহী হয়ে উঠতে পারেন। দীর্ঘদিন ধরে শেয়ারের মূল্য অমূল্যায়িত অবস্থায় থাকার কারণেও অনেকে এদিকে ঝুঁকতে পারেন। এই সঙ্গে এ-ও বলা দরকার নতুন নতুন কোম্পানি পুঁজিবাজারে আসছে। সরকার আরো ২১টি কোম্পানিকে পুঁজিবাজারে আনতে উদ্যোগে নিয়েছে বলে জানা গেছে। বাজার চাঙ্গা হওয়ার এবং সূচক ও লেনদেন বাড়ার এটাও অন্যতম কারণ হতে পারে।
পুঁজিবাজার চাঙ্গা হলে, সূচক ও লেনদেন বাড়লে অর্থনীতির জন্য তা ইতিবাচক বলেই বিবেচিত। তবে এই চাঙ্গা হওয়াটা যেন কৃত্রিম না হয়, সূচক-লেনদেনের উল্লম্ফন যে কারসাজিজাত না হয় সেটাই দেখার বিষয়। বলা হয়ে থাকে, পুঁজিবাজারে অন্তত ১১ ধরনের কারসাজি হয়ে থাকে। এর কোনোটি বর্তমান বাজারকে প্রভাবিত করেছে কি না, সেটা দেখা দরকার বৈ কি! অনেক সময় দেখা যায়, বাজারে দাম বাড়াতে লেনদেন পর্যায়ে একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যোগসাজশ হয়। এই প্রক্রিয়ায় দাম বাড়ে এবং বিনিয়োগকারী বিভ্রান্ত হয়ে বিনিয়োগে ঝুঁকে পড়ে। দেখা যায়, এই প্রক্রিয়ায় অনেক দুর্বল শেয়ারও চাঙ্গা হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত পরিণতি হয় দুঃখজনক। কাজেই যে কোনো কারসাজির ব্যাপারে বিনিয়োগকারীদের সতর্ক ও সচেতন থাকার বিকল্প নেই। বিনিয়োগের আগে সংশ্লিষ্টদের অবশ্যই কোথায় বিনিয়োগ করছেন সেটা ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। যে কোম্পানির শেযার, সেই কোম্পানির হাল-অবস্থা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা লাভ করতে হবে। বুঝেশুনে ও সতর্ক হয়ে বিনিয়োগ করলে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সাময়িকভাবে লোকসানও হতে পারে। ব্যবসায়ে লাভ-লোকসানের ব্যাপার স্বাভাবিক। তবে আর যা-ই হোক, পুঁজিবাজারে জুয়া খেলার কোনো অবকাশ নেই। বিনিয়োগকারীদের এ ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন ও সতর্ক হতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুঁজিবাজার

২৪ নভেম্বর, ২০২২
১০ নভেম্বর, ২০২২
১১ অক্টোবর, ২০২২
২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন