Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

৩৭শ কোটি টাকা লুটপাটে দায়ী পাঁচ ডেপুটি গভর্নর

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ অক্টোবর, ২০২২, ১১:৩৩ এএম

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড (আইএলএফএসএল) থেকে অবৈধভাবে জামানতবিহীন ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আইএলএফএসএল শুধু ভারতে কারাবন্দি প্রশান্ত কুমার হালদার (পি কে হালদার) এবং তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামেই নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিআইএফসি থেকে বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর (অব.) মান্নান ও তার প্রতিষ্ঠান নিয়ে গেছে ৬০০ কোটি টাকা। বছরের পর বছর ধরে এই লুটপাটের ঘটনা ঘটলেও নিশ্চুপ হয়ে ছিলেন প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অনিয়ম ও জড়িতদের খুঁজে বের করতে হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন সাত সদস্যের কমিটির দুটি আলাদা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে ৫ জন সাবেক ডেপুটি গভর্নরসহ ২৪৯ কর্মকর্তাকে এই লুটপাটের জন্য দায়ী করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের যোগসাজশ ছাড়া এত বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করা সম্ভব ছিল না বলে মনে করেন তদন্তকারীরা। এতে দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণসহ ১৩ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরেক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ের লুটপাটের তদন্ত এখনো চলছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে জমা দেওয়া মোট প্রায় ১২শ পৃষ্ঠার দুই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নজিরবিহীন এই লুটের ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির মোট সম্পদের তুলনায় দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় দ্বিগুণ। আইএলএফএসএলের মোট সম্পদ ৪ হাজার ৫৯৮ কোটি টাকা। আর বর্তমানে দায়ের পরিমাণ ৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। ভারতে কারাবন্দি আলোচিত পি কে হালদার এবং তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া হয়েছে ৩ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। আর বিএফআইসির মোট সম্পদ ৯২৭ দশমিক ২৯ কোটি টাকা হলেও প্রতিষ্ঠানটির দায় ১ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৯৬ কোটি টাকা। এ প্রতিষ্ঠান থেকে মেজর (অব.) আব্দুল মান্নান ও তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে নেওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে এভাবে লুটপাট ও আত্মসাতের সময় আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির পরিচালনা পর্ষদে যারা ছিলেন তারা সবাই ছিলেন পি কে হালদার ও মেজর (অব.) মান্নানের নিজস্ব লোক। তারা বিভিন্ন ব্যাংক, অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে আমানত সংগ্রহ করেছে। এরপর এসব টাকা ঋণের নামে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে কোনো প্রকার জামানতবিহীনভাবেই ছাড় দিয়েছে। এমনকি নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নামসর্বস্ব ও কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামেও ঋণ দিয়েছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে এই লুটপাটের জন্য প্রধানত নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগকে দায়ী করা হয়েছে। এতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে ২০০৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকারী ৩ জন ডেপুটি গভর্নর, ৬ জন নির্বাহী পরিচালক, ১১ জন মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও ১৫ জন উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) এবং বিভিন্ন পর্যায়ের আরো ১২৪ জন কর্মকর্তাকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, নির্বাহী পরিচালকসহ মোট ৫১ জনকে দায়ী করা হয়েছে। এ ছাড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন বিভাগের দুজন ডেপুটি গভর্নর, ৮ জন নির্বাহী পরিচালক, ৫ জন জিএমসহ মোট ২৯ জন কর্মকর্তার নাম এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সংঘটিত আর্থিক অনিয়ম ও অবৈধ কর্মকাণ্ড রোধ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগে এবং পরিদর্শনের দায়িত্ব সম্পাদনকারী বিভাগে সংশ্লিষ্ট সময়ে সিদ্ধান্ত প্রদানকারী পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যেকেই যার যার ক্ষমতা ও পদমর্যাদার ক্রমানুপাতে কর্মকালের ব্যাপ্তিভেদে দায়ী।’

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুঁজিবাজারে

১১ অক্টোবর, ২০২২
২২ সেপ্টেম্বর, ২০২২
৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ