হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
মুনশী আবদুল মাননান : আমাদের দেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তা কিংবদন্তিতুল্য। রাজনৈতিক লক্ষ্য অর্জনে শুধু সচেতনতাই যথেষ্ট নয়, সক্রিয়তাও অপরিহার্য। বস্তুত, মানুষের এই রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তাই এ দেশকে দু’দুবার স্বাধীনতা এনে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে দুটি নির্বাচন নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে। এ দুটি নির্বাচনের একটি অনুষ্ঠিত হয় ১৯৪৬ সালে, অপরটি ১৯৭০ সালে। ১৯৪৬ সালের নির্বাচন ব্রিটিশ ঊপনিবেশিক শাসন থেকে দেশকে মুক্ত ও স্বাধীন করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করে। ওই নির্বাচন শুধুমাত্র একটি নির্বাচন ছিল না, একই সঙ্গে ছিল পাকিস্তানের পক্ষে গণভোট। নির্বাচনে মুসলিম লীগ বিজয়ী হয় এবং সেই বিজয়ের মধ্য দিয়ে মানুষ যে পাকিস্তান চায়, সেটা প্রতিষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পরের বছর ১৯৪৭ সালের ১৪ ও ১৫ আগস্ট উপমহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পাকিস্তানের অংশ হিসাবে তৎকালীন পূর্ববাংলা, আজকের বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
ইতিহাস পাঠকদের অজানা নেই, সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম ও ত্যাগের বিনিময়ে পাকিস্তান অর্জিত হয়। ইতিহাসবিদদের অনেকেই জোরের সঙ্গে দাবি করেন, উপমহাদেশে মুসলমানদের স্বতন্ত্র আবাসভূমি বা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সবচেয়ে কার্যকর ভূমিকা ও অবদান ছিল পূর্ববাংলার মানুষের। অথচ তাদের ভাগ্যের নির্মম পরিহাস এই যে, তারা এক ঔপনিবেশিক শাসনের নিগড় থেকে বেরিয়ে আরেক ঔপনিবেশিক শাসনের নিগড়ে আটকে পড়ে। তারা স্বশাসনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়, গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। তাদের স্বাতন্ত্র্য অস্বীকৃত হয় এবং তারা শোষণ ও বৈষম্যের শিকারে পরিণত হয়। তাদের ঐতিহ্যগত রাজনৈতিক সচেতনতা তাদের পথ দেখায় এবং তাদের সক্রিয়তা, আন্দোলন, সংগ্রাম দেশকে আরেকটি স্বাধীনতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়।
১৯৭০ সালে পাকিস্তানে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনের সুযোগটি দেশের মানুষ সর্বোতভাবে কাজে লাগায়। নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। কার্যত রাজনৈতিকভাবে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান আলাদা হয়ে যায়। তাদের চূড়ান্ত বিচ্ছিন্নতা হয়ে পড়ে সময়ের ব্যাপারমাত্র। এই সময়টি দ্রুত এগিয়ে আনে পাকিস্তানের সামরিক সরকার ও জেনারেলরা। নির্বাচনের ফলাফল মোতাবেক পূর্ব পাকিস্তানে এবং সমগ্র পাকিস্তানে সরকার গঠনের অধিকার লাভ করে আওয়ামী লীগ। অথচ পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসনচক্র এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিকরা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে মোটেই রাজি হয় না। তারা গণতন্ত্রকে পদদলিত করে, জনগণের রায় অস্বীকার করে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটে এবং শক্তি প্রয়োগ ও দমন-দলনের পথ বেছে নেয়। আলাপ-আলোচনার আড়ালে সামরিক শাসকচক্র যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয় এবং ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ দেশের নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং গণহত্যায় লিপ্ত হয়। এই আকস্মিক হামলা ও আঘাত এদেশের মানুষকে তাৎক্ষণিকভাবে বিমূঢ় ও দিশাহীন করে তুললেও এই অবস্থার ঘোর কাটতে সময় লাগে না। শুরু হয়ে যায় মুক্তির প্রাণপণ যুদ্ধ। ১৯৭১ সালের যুদ্ধ শুধু মুক্তির যুদ্ধ নয়, তা প্রকৃতপক্ষে ছিল জনযুদ্ধ। অতঃপর ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সেই যুদ্ধের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
ইতিহাসের এই সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও বিবেচনা থেকে এটা স্পষ্ট, বাংলাদেশের মানুষের রাজনৈতিক সচেতনতা ও সক্রিয়তা রীতিমত মজ্জাগত। একই সঙ্গে তারা স্বাধীনচেতা, গণতন্ত্রের প্রতি একনিষ্ঠ এবং যে কোনো অন্যায়, অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিবাদী। তারা জানে, গণতন্ত্র তাদের ঐক্যবদ্ধ করে এবং তাদের সম্মিলিত শক্তিকে সংহত করে। তাদের দাবি ও অধিকার আদায়ের এটাই প্রকৃষ্ট উপায় ও পথ। যে গণতন্ত্র তাদের দু’দুবার স্বাধীনতা অর্জনে ঐতিহাসিক ও কার্যকর ভূমিকা রাখে, যে গণতন্ত্র তাদের অধিকার ও ক্ষমতার বাহন, সেই গণতন্ত্রের জন্য তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম এখনো শেষ হয়নি। ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয় মানুষের স্বাধীনতার আকাক্সক্ষার মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন ও বিশুদ্ধ গণতন্ত্রের আকাক্সক্ষা ছিল একটি বড় আকাক্সক্ষা। দুর্ভাগ্য তাদের, ’৭১ সালের স্বাধীনতার অব্যবহিত পরেই গণতন্ত্রের স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়ে যায়। ১৯৭৫ সালের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে গণতন্ত্রকে বিদায় জানিয়ে তৎকালীন ক্ষমতাসীনরা একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা করে। চারটি বাদে সব সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করে। এর আগে ১৯৭৩ সালে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দলীয় পেশিশক্তি ও রাষ্ট্রশক্তির বেপরোয়া ব্যবহারের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনরা বিজয় ছিনিয়ে নেয়। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ লাভ করে ২৯৩টি। নির্বাচন ব্যবস্থায় অনিয়ম, দুর্নীতি, পক্ষপাতিত্ব ও জবরদস্তির এমন কোনো দিক ও নজির ছিল না যা ওই নির্বাচনে প্রত্যক্ষ করা না যায়। বলা যায়, নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের মূলে ওই নির্বাচনের মাধ্যমেই কুঠারাঘাত করা হয়। ’৭৫ সালে একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠা তারই ধারাবাহিকতার অংশ বা চূড়ান্ত রূপ।
অতঃপর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ধারায় জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তন করেন। সংবদপত্র ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা উন্মুক্ত করেন। তার সময়ে প্রেসিডেন্ট ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে বিভিন্ন দল অংশগ্রহণ করে। জেনারেল জিয়াউর রহমানের কয়েক বছরের ক্ষমতাকালে গণতন্ত্র ও মত প্রকাশের চর্চা অগ্রসরমান থাকে এবং উৎপাদন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নবধারা সৃষ্টি হয়। এর পর ১৯৮২ সালে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে জেনারেল এইচএম এরশাদ ক্ষমতা দখল করেন। তিনি তার সামরিক স্বৈরাচার বা নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্রের মাধ্যমে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকেন। একটি সফল গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন। রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত হয় বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকার। সেই সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সব দলের অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সংসদে বিরোধী হিসাবে স্থান লাভ করে আওয়ামী লীগ। আশা করা গিয়েছিল, গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশ এরপর স্বাভাবিক পথে এগুবে এবং নির্বিঘœ ও নির্বাধ হবে। তা হয়নি। আন্দোলন শুরু হয় নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার নিয়ে। এ আন্দোলনে শামিল হয় বিএনপি বাদে সকল দল। এই আন্দোলনের মুখে ১৯৯৬ সালের মার্চে সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। এরপরের নির্বাচনের মাধ্যমে ফের বিএনপি সরকার গঠন করে। সর্বশেষ সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে পুনরায় আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পালাক্রমে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলেও এবং নির্বাচন তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ হলেও বিজিত দল নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তোলে। উপযুক্ত ও বিশ্বাসযোগ্য কারণ ছাড়াই আওয়ামী লীগ এই ব্যবস্থা সংবিধান থেকে উঠিয়ে দেয় এবং ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। বিএনপি ও বিভিন্ন দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা তুলে দেয়ার প্রতিবাদ করে এবং তা ফের ফিরিয়ে আনার জন্য আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের পটভূমিতেই অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের বিতর্কিত নির্বাচন। ওই নির্বাচন বিএনপিসহ নিবন্ধনকৃত ২৬টি দল বর্জন করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে ১২টি দল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে করে সরকার গঠন করে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ছিল ভোটারবিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিাবিহীন, একতরফা একটি নির্বাচন। বাংলাদেশ তো বটেই, বিশ্বের কোথাও কোনোকালে এ ধরনের নজিরবিহীন প্রহসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনে প্রার্থীদের নির্বাচনের আগেই বিনা ভোটে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত ছাড়াও ৫ জানুয়ারি যে আসনগুলোতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেসব আসনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল না, ভোটার ছিল না। বিশ্লেষকদের অনেকই মনে করেন, ঐ নির্বাচন ছিল নির্বাচনের নামে এক ধরনের ক্যু। বলা হয়, ওই রকম একটি নির্বাচনের মাধ্যমে বস্তুত, নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়। দেশে-বিদেশে কোথাও নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
এটা অস্বীকার করা যাবে না। দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা-বিশ্বাসের ঘাটতি থাকার কারণেই নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্র এ রকম বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। এই গভীর খাদ থেকে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে তুলে আনা কতদিনে সম্ভব হবে, কেউ বলতে পারে না। কারণ রাজনৈতিক বিদ্বেষ, রেষারেষি, হানাহানি এখনো অব্যাহত আছে। দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক যুদ্ধ, আস্থা, সহাবস্থান এখনো দূরের বাদ্য হয়ে আছে। এর মধ্যেই পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হাওয়া উঠেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছে, আগাম প্রচারণাও শুরু করেছে। না ঘরকা, না ঘাটকা জাতীয় পার্টি তো আনুষ্ঠানিক প্রচারণা আগেই শুরু করেছে। বিএনপি ও তার নেতৃত্বাধীন জোটও তলে তলে নির্বাচন প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে। এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে সব দলই অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। শেষ পর্যন্ত সেই নির্বাচন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো বা ভিন্ন আঙ্গিকে অনুরূপই হবে, নাকি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ হবে, এখনই তা বলার উপায় নেই। এক্ষেত্রে অনেকগুলো পূর্বশর্ত আছে। প্রথম পূর্ব শর্ত হলো, একটি দল নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন। নতজানু, দুর্বল, অদক্ষ ও অযোগ্য বর্তমান নির্বাচন কমিশনই মূলত বর্তমান রাজনৈতিক সংকট এবং দেশকে গণতন্ত্রহীন দেশে পরিণত করার জন্য দায়ী। এ রকম আরেকটি নির্বাচন কমিশন হলে অতীতেরই পুনরাবৃত্তি ঘটবে। নির্বাচন কমিশন গঠনে প্রেসিডেন্ট রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এই আলোচনায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন গঠন সহায়ক হবে। প্রতিটি দলই প্রেসিডেন্টের উপর আস্থা স্থাপন করেছে। এই আস্থার ফল ইতিবাচক হলে রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে বা এক বড় ধরনের অগ্রগতি হিসাবে বিবেচিত হবে। দ্বিতীয় পূর্ব শর্ত হলো নির্বাচনকালীন সরকার এমন হতে হবে যে সরকার অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে হবে অঙ্গীকারাবদ্ধ। নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করাই হবে তার প্রধান কাজ। নির্বাচন কমিশনকে প্রভাবিত করা কিংবা তার কাজে হস্তক্ষেপ করা থেকে তার বিরত থাকতে হবে। এ দুটি প্রধান পূর্বশর্ত ছাড়াও নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ, সবার জন্য সমান সুযোগ এবং নিশ্চিত নিরাপত্তা ইত্যাদিও থাকতে হবে।
লক্ষ্য হলো, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক, পক্ষপাতমুক্ত, অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এ জন্য যা প্রয়োজন তা করতে হবে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে। তাহলে প্রত্যাশিত নির্বাচন অনুষ্ঠান অনায়াসে সম্ভবপর হয়ে উঠবে। রাজনীতির প্রতি, গণতন্ত্রের প্রতি এদেশের মানুষের যে অনুরাগ, অবাধ, সুষ্ঠু রাজনীতি চর্চা ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের যে সংগ্রাম ও ত্যাগ, তা বিফলে যেতে পারে না। অবশ্যই তাদের আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশার বাস্তবায়ন ঘটাতে হবে। এ জন্য আগামী জাতীয় নির্বাচন হতে হবে সর্ব বিচারে গ্রহণযোগ্য। আর নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হলে গণতন্ত্রের যে অবরুদ্ধ দশা, তাও কেটে যাবে। এক্ষেত্রে সরকার ও সরকারি দলকেই অগ্রবর্তী ভূমিকা রাখতে হবে। সাম্প্রতিককালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমন কিছু কথা বলেছেন যা আমাদের আশাবাদী করে তুলেছে। আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে তিনি বলেছেন, তিনি প্রশ্নবিদ্ধ কোনো নির্বাচন দেখতে চান না। নির্বাচন কমিশন গঠন প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে বলেছেন, প্রেসিডেন্ট যেভাবে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন তা সরকার মেনে নেবে। কদিন আগে দলীয় নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে দলের জন্য চ্যালেঞ্জিং। বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে, এমন বাস্তবতার প্রেক্ষিতে তিনি এমপি ও দলীয় নেতাদের জনগণের কাছে যেতে বলেছেন, তাদের আস্থা অর্জন করতে বলেছেন। তার এসব কথা থেকে প্রতীয়মান হয়, নির্বাচন আবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হোকÑ এটা তিনি কামনা করেন। গণতন্ত্রে জনগণই যে ক্ষমতার উৎস, এমপি ও দলীয় নেতাদের জনগণের কাছে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়ে সেটাই তিনি বুঝিয়ে দিতে চেয়েছেন। একই সঙ্গে তার এ কথার মধ্যে প্রচ্ছন্ন একটি বার্তাও রয়েছে অসৎ, দুর্নীতিবাজ, দুর্বৃত্তাচারীদের জন্য। তাদের কোনো ভবিষ্যৎ যে নেই, সেটাই তিনি বুঝাতে চেয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর এসব কথার মধ্যে যে মনোভাব, দৃষ্টিভঙ্গি, প্রত্যয় ও অভিপ্রায় প্রতিফলিত হয়েছে তা অত্যন্ত ইতিবাচক। দেশের মানুষ মুক্ত চর্চার রাজনীতি চায়, গণতন্ত্রের বিকাশ ও ফায়দা চায়, মত প্রকাশের স্বাধীনতা চায়, চায় আইনের শাসন, বিচারহীনতার সংস্কৃতির অবসান, চায় শান্তি, নিরাপত্তা, কর্মসংস্থান ও উন্নয়ন। মানুষের এই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব রাজনৈতিক দল ও নেতাদের। নেতারা মানুষের ভাষা ও আকাক্সক্ষা বুঝার চেষ্টা করবেন, তা বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ আন্তরিক চেষ্টায় ব্রতী হবেন, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।