Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আরাকান রাজ্য নামে স্বাধীন এক দেশ ছিল রোহিঙ্গাদের

| প্রকাশের সময় : ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইতিহাসের ধারায় বিভিন্ন সময়ে অত্যাচারিত হতে থাকা এক জাতি
ইনকিলাব ডেস্ক : অষ্টম শতাব্দীতে আরাকান রাজ্য নামে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ ছিল। আর এ রাজ্যেই ছিল রোহিঙ্গাদের বাস। রোহিঙ্গারা জাতিতে মুসলমান। আর রাজ্য হিসেবে আরাকান ছিল বেশ সমৃদ্ধ। কালক্রমে রোহিঙ্গারা রাজ্য হারিয়ে একটি সংখ্যালঘু জাতিতে পরিণত হয়। তারপর ইতিহাসের ধারায় বিভিন্ন সময়ে তারা অত্যাচারিত হতে থাকে। মিয়ানমারের পূর্ব নাম বার্মা। ১৯৮৯ সালে বার্মা নাম পরিবর্তন করে মিয়ানমার হয়। সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের ওপর যে অত্যাচার-নিপীড়ন তা প্রায় সারা বিশ্বই প্রত্যক্ষ করেছে। কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংগঠন এটাকে জাতিগত গণহত্যা বলে অভিহিত করেছে। রোহিঙ্গারা শুধু মুসলিম হওয়ার কারণে ধারাবাহিকভাবে জাতিগত নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছেন এবং বিশ্ব দরবারে তাদের এ সমস্যা তুলে ধরারও কেউ নেই। আর এ কারণেই মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিজেদের একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র পাওয়ার অধিকার রোহিঙ্গাদের রয়েছে। রোহিঙ্গাদের সমর্থন দেয়ার ব্যাপারে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একটা নৈতিক দায় রয়েছে এবং সেটি তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। এখন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত হবে মিয়ানমারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে চাপ সৃষ্টি করা। আর যদি এ ধারণা মিয়ানমার সরকারের পছন্দ না হয় এবং রাখাইনকে রাজ্য হিসেবেই রাখতে চায়, তাহলে তার উচিত হবে শিগগিরই রোহিঙ্গাদের মানবাধিকারের ব্যাপারে তার সংবিধানের ধারা সংশোধন করা এবং যত রোহিঙ্গা শরণার্থী অন্যান্য দেশে আছে তাদের সবাইকে দেশে ফিরিয়ে নেয়া। ফোর্বস ম্যাগাজিনে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অ্যান্ডার্স কর এক নিবন্ধে লেখেন, মিয়ানমার মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ অধ্যুষিত। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ বার্মিজ সরকারের প্রচ- অত্যাচারের কারণে ১৭৮৪ সাল থেকে শুরু করে ২০১৬ সাল পর্যন্ত লাখ লাখ রোহিঙ্গা রাখাইন রাজ্য ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছে। ২০১৬ সালের আগে ধারাবাহিকভাবে ১৯৪২ সালে, ১৯৭৭-১৯৯১, ২০১২ এবং এখন থেকে দুই বছর আগেও রোহিঙ্গাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন ও নিপীড়ন চালানো হয়। অসংখ্য রোহিঙ্গাকে হত্যা করা হয়। ধর্ষণ করা হয় অসংখ্য নারীকে। ২০১৬ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সরাসরি রোহিঙ্গাদের ওপর আক্রমণ চালায়। তাদের বসতবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। হত্যা করে বহু রোহিঙ্গাকে। নিপীড়ন চালাতে সেনাবাহিনীর সঙ্গে অংশ নেয় বৌদ্ধ সন্যাসীরা। এভাবে মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার-নিপীড়নে অতিষ্ঠ হয়ে পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশ ও চীনে বহু রোহিঙ্গা পালিয়ে যায়। বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে এসে বর্তমান বাংলাদেশে পাঁচ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে মানবেতর জীবনযাপন করছে। বিশ্বব্যাপী ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করছে। ১৩ লাখের বেশি রোহিঙ্গা এখনও মিয়ানমার সরকারের অত্যাচার-নির্যাতন সহ্যকরে দেশটিতে রয়েছে। আগেই বলা হয়েছে মিয়ানমার একটি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। আর রোহিঙ্গারা মুসলিম সংখ্যালঘু হিসেবে খোদ মিয়ানমার সরকারের আক্রমণের শিকার হয়েছে। যেটাকে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ‘ক্লিয়ারেন্স অপারেশন’ বলে অ্যাখ্যা দিয়েছে। গত তিন মাস ধরে চলা রোহিঙ্গাদের ওপর যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, জাতিসংঘের সিনিয়র কর্মকর্তারা তাকে ‘জাতিগত গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। মিয়ানমার একটি বর্ণবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। আর তা মূলত মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীও অধিকাংশ দেশের পেশাজীবী সামরিক বাহিনীর মতো আর্থিক প্রণোদনার জন্য রোহিঙ্গাদের তাদের বসতভিটা থেকে বিতাড়িত করছে। যেসব জমি তারা রোহিঙ্গা কৃষকদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে সেসব জমি তারা বেসরকারি কৃষি কাজের জন্য ব্যবহার করছে। গত কয়েক মাসে রোঙ্গিাদের ওপর নিপীড়ন চালানোর যেসব প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মিয়ানমার সামরিক বাহিনী রোহিঙ্গাদের মতো একটি নিরস্ত্র সংখ্যালঘুর ওপর সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়া রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী মূলত তাদের বাপ-দাদাদের রেখে যাওয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। সেই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে হত্যা, ধর্ষণ ও জীবিকার প্রধান মাধ্যম মাছ ধরতে না দেয়ার অর্থই হচ্ছে  পৈতৃক ভিটা থেকে তাদের উচ্ছেদ করা। ২০১২ সালে মুসলিম রোহিঙ্গা আর মিয়ানমারের বৌদ্ধদের মধ্যকার সংঘর্ষের জের ধরে ১ লাখ ২৫ হাজার রোহিঙ্গাকে ভিটামাটি ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীও বৌদ্ধদের পাশে দাঁড়িয়ে নির্যাতন-নিপীড়ন শুরু করে। সেনাবাহিনী ১২০০’র অধিক ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং ১ লাখ ৫০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য করে, যেটাকে টাইম ম্যাগাজিনের এক সাংবাদিক ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ বলে আখ্যায়িত করে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকারগুলোও হরণ করা হয়েছে। এমনকি গত নির্বাচনে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিমকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। দুই মাস আগে নতুন করে যে আক্রমণ চালানো হয়, তাতে হাজার হাজার রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী দেশ বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া ও চীনে পালিয়ে যান। রোহিঙ্গাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যান্য দেশহীন ও প্রতিনিধিত্বহীন মুসলিমের মতোই সন্ত্রাসী হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ ধরনের সন্ত্রাসবাদের ফলে নিপীড়ন আরও বাড়বে এবং তা সহিংসতার চক্রের দিকে ধাবিত করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত এই ঝুঁকি নিরসনে কঠোর শান্তিপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের সমর্থন দেয়া। এর একটি হচ্ছে রোহিঙ্গাদের জন্য রাখাইনে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করা। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নীতির উন্নতির জন্য দেশটির সরকারের ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা যেতে পারে। ফোর্বস ম্যাগাজিন।



 

Show all comments
  • জায়েদ ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৪৫ পিএম says : 0
    সেই রাষ্ট্র আবার পুন:প্রতিষ্ঠা করা হোক
    Total Reply(0) Reply
  • মো: জাহীদুল আলম ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৬:৩৮ পিএম says : 2
    বিশ্ববাসী স্বেচ্ছার হওয়া প্রয়োজন ্ রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়ানো বাংলাদেশের সকল নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব ।
    Total Reply(0) Reply
  • এম, এস, আনোয়ার ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:১০ এএম says : 0
    রোহিঙ্গারাও বাঙ্গালী। শিক্ষা থেকে বঞ্চিত বলে শুদ্ধ বাংলা বলতে পারেনা। কিন্তু বৃহত্তর চট্টগ্রামের সাথে রোহিঙ্গাদের ভাষার হুবহু মিল রয়েছে। ঐতিহ্য ও ভাষায় ওরা আমািদের আপনজন। তদুপরি ওরা মুসলমান, আমাদের ভাই। পশ্চিম বাংলার বাংলাভাষীদের জন্য আমাদের কত টান অথচ রোহিঙ্গাদের বেলায় কোথায় আমাদের অবস্থান...!!!
    Total Reply(0) Reply
  • reza karim ১ জানুয়ারি, ২০১৭, ৯:৪৮ পিএম says : 0
    we want justice and Rohinga will get back their own country.
    Total Reply(0) Reply
  • Anwar ২ জানুয়ারি, ২০১৭, ৩:৪৮ পিএম says : 0
    রুহিংগা মুসলিমদের জন্য স্বাধীন রাষ্ট্র চাই।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আরাকান

২১ জানুয়ারি, ২০১৯
১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ