পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পুড়েছে দুই শতাধিক মসজিদ মাদরাসা ও অসংখ্য খানকাহ : বন্ধ আজান-নামাজ
বিরান ভূমি আরাকানে এখন খাঁ খাঁ করছে পুড়া ঘর-বাড়ি, মসজিদ, মাদরাসা ও জনশুন্য গ্রাম। আরাকানের হাজার বছরের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী শুধু নয় মিয়ানমার সরকার যেন আরাকান থেকে মুছে দিতে চায় ইসলাম ও মুসলমানদের নাম নিশানা। বর্মী হায়েনার দল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে, নারী শিশু পুরুষদের নির্মমভাবে হত্যা করে ও যুবতীদের জানোয়ারের মত ধর্ষণ করে ক্ষ্যান্ত হয়নি। তারা একই সাথে পেট্রোল ঢেলে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে আরাকানের ঐতিহ্যবাহী অর্ধশত মসজিদসহ দুই শতাধিক মসজিদ, অর্ধশত মাদরাসা ও অসংখ্য খানকাহ। গত ২৪ আগস্ট থেকে আরাকানের মসজিদ সমুহে আজান-নামাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
গত ১৫ দিন থেকে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর চলছে বর্বর নির্যাতন ও গণহত্যা। বার্মিজ আর্মি ছাড়াও বিজিপি, নাসাকা বাহিনী ও উগ্র বৌদ্ধরা চালিয়ে আসছে এ হত্যাযজ্ঞ। নাফ নদীর ওপারে এখনো জ্বলছে গ্রামের পর গ্রাম। প্রাণভয়ে টেকনাফের লাম্বা বিল, উখিয়ার আঞ্জুমানপাড়াসহ অনেকেই সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছেন লাখ লাখ মানুষ।
বাংলাদেশ মুখি মিয়ানমারের সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলমানদের জনস্রোত এখনো বন্ধ হয়নি। এরইমধ্যে সে দেশের মংডু, বুচিডং ও রাচিডং টাউনশিপ এলাকার অন্তত ১৫০ গ্রাম রোহিঙ্গা শূন্য হয়েছে। এসব গ্রাম থেকে ৭/৮ লাখের মত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমার সেনা-পুলিশ ও মগদস্যুরা গুলি করে, আগুন দিয়ে পুড়িয়ে এবং হেলিকপ্টার থেকে ব্রাশ ফায়ার করে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে দশ সহ¯্রাধিক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুকে। ওসব হায়েনাদের ধর্ষণের শিকার রোহিঙ্গা মা-বোনদের সংখ্যা কত তার কোন হিসাব নেই।
আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলমানরা প্রাণ বাঁচাতে বনে জঙ্গলে পালিয়ে এবং পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা জানায় এখন খাঁ খাঁ করছে সেনা-পুলিশ ও মগদস্যুদের পুড়িয়ে দেয়া দশ সহ¯্রাধিক বাড়ি-ঘর, ২০০ শতাধিক মসজিদ ও অর্ধশতাধিক মাদরাসা। আরাকান যেন এখন এক মৃত্যুপুরী।
আরাকানে অন্যান্য জাতির লোকজন বসবাস করলেও শুধু রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়ি-ঘরে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে পুড়িয়ে ছাই করেছে সেদেশের সরকারি বাহিনীর লোকজন ও সংখ্যাগরিষ্ঠরা। তবে ওই তিন জেলা শহরের সদরে সরকারি স্থাপনা ও কার্যালয়ের পাশে এখনো কিছু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষ চরম বিপন্ন অবস্থায় টিকে রয়েছে বলে জানা গেছে। রাখাইনের (আরাকান) অন্য জেলাগুলোতেও সহিংসতা শুরু হওয়ায় সেখান থেকেও বিপন্ন মানুষ দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসাতে শুরু করেছে।
একইভাবে এখনো রোহিঙ্গা আসছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত ছাড়াও বাংলাদেশ সীমান্তের বান্দরবান জেলার ঘুমধুম, তমব্রু, আছরতলী, নাইক্ষ্যংছড়ি পয়েন্ট দিয়ে। দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার থেকে যারা ফিরছেন, তাদের অনেকেই গুলিবিদ্ধ, ক্ষুধার্ত ও জীর্ণশীর্ণ চেহারায় বাংলাদেশের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান নিয়েছেন।
এদিকে গত রোববার সোমবারেও টেকনাফের লাম্বা বিল সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের নাইছাদং, পোয়াখালী, বলিবাজার, শিকদারপাড়া গ্রামে দিনভর আগুনের কুন্ডলী লক্ষ্য করা যায়। ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় আশপাশের এলাকা। উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়ার বিপরীতে মিয়ানমারের পোয়াংদিবন টমবাজার এলাকায়ও দিনভর আগুন জ্বলতে দেখা যায়। এসব এলাকায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হেলিকপ্টারে টহল দিয়ে দাহ্য পদার্থ নিক্ষেপ করে। ওই এলাকাগুলোতে বসবাস করা কয়েক হাজার রোহিঙ্গা রোববারও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা সীমান্তের লাম্বা বিলের পাশে লেদা মুছুনি নয়াপাড়া, থাইনখালী, বালুখালী ও কুতুপালং ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। এর মধ্যে অনেকেই পরিবারের সব সদস্যকে হারিয়ে একাই চলে আসেন। কোনো কোনো নারীকে দেখা যায় কোলের সন্তানকে নিয়ে একাই ফিরে আসতে।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা অনেকেই জানান, তিন জেলার অন্তত ১৫০টি গ্রামের কোনো রোহিঙ্গা আর সে দেশে নেই। প্রতি গ্রামে তিন হাজার থেকে ২৫ হাজার মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষের বাস ছিল। সব মিলিয়ে কমপক্ষে পাঁচ লাখ মানুষ এরইমধ্যে বাংলাদেশে এসেছে। তারা কেউই বাংলাদেশি বা বাংলাভাষী নয়। শতশত বছর ধরে তারা বংশ পরাক্রমে সে দেশে বাস করছেন এবং রোহান ভাষায় কথা বলে আসছেন। রোহান ভাষার সঙ্গে চট্টগ্রামের ভাষার হয়তো কিছুটা মিল থাকলেও তারা কিছুতেই বাংলাদেশী নয়, তারা রোহিঙ্গা, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যের অধিবাসী।
এদিকে বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে ১০টি কর্মপরিধি নির্ধারণ করে রোহিঙ্গা সেল গঠন করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। জননিরাপত্তা বিভাগের রাজনৈতিক শাখা-১-এর উপসচিব আবু হেনা মোস্তাফা কামাল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে থেকে সেল গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সহিংসতা ও উদ্ভূত পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশের কারণে কক্সবাজার ও বান্দরবান জেলাসহ সন্নিহিত সীমান্তবর্তী এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি ও আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণসহ বিভিন্ন সংস্থার কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধনের সুবিধার্থে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ রোহিঙ্গা সেল গঠন করেছে।
ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা বিষয়টি আন্তর্জাতিক বিশ্বের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে। বাংলাদেশ সরকারও বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচনা করে রোহিঙ্গাদের পাশে দাড়িঁয়েছ। আশ্র দিয়েছে মিয়ানমার থেকে প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা।
কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার
টেকনাফের বাহারছড়া সমুদ্রসৈকত থেকে এক রোহিঙ্গা কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গতকাল সোমবার সকালে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশ বলেন, বাহারছড়ার উত্তর শীলখালী সমুদ্রসৈকত এলাকা থেকে সকালে এক কিশোরীর অর্ধগলিত লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে লাশটি উদ্ধার করে। পোশাক দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে ওই কিশোরী রোহিঙ্গা।
টেকনাফে নগদ টাকা ও ইয়াবাসহ ২ দালাল আটক
বাংলাদেশ কোস্টগার্ড বাহিনী সেন্টমার্টিনদ্বীপ থেকে নগদ টাকা ও ইয়াবাসহ দালাল-ইয়াবা ব্যাবসায়ীকে আটক করেছে কোস্টগার্ড। আটককৃতরা হলেন সেন্টমার্টিনদ্বীপ ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড পূর্বপাড়ার বাসিন্দা মোঃ নূরুল হকের ছেলে সালাউদ্দিন (৩০) এবং মোঃ আলীর ছেলে কবির মাঝি (২৮)। তাঁদের কাছ থেকে নগদ ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং ৬০ হাজার টাকা মুল্যের ১২০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়েছে।
টেকনাফে ৩ নারীসহ ৯ জনের সাজা
ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ৩ জন নারীসহ ৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড এবং অর্থদন্ড দেয়া হয়েছে। সোমবার ১১ সেপ্টেম্বর টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ জাহিদ হোসেন সিদ্দিক এবং নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশণার (ভুমি) প্রণয় চাকমা পৃথকভাবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে এ দন্ডাদেশ প্রদান করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।