মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
প্রায় দুই সপ্তাহ আগে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমবার চীনের বিরুদ্ধে তাদের ভূখণ্ডে একটি গুপ্তচর বেলুন উড়ানোর অভিযোগ এনেছিল। এ ঘটনা চীন সরকার এবং জনগণের মধ্যে- ক্ষোভ এবং উত্তেজনাপূর্ণ জল্পনা- দুটোরই জন্ম দিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র বেলুনটি নিয়ে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি করেছে। এবার জানা গেল, যুক্তরাষ্ট্রের এ বাড়াবাড়ির নেপথ্যে কারণ কি।
বেলুন ইস্যুতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন চীনে একটি পরিকল্পিত সফর বাতিল করার পর চীনা কর্তৃপক্ষ একটি দীর্ঘ এবং আরও জোরালো রক্ষণাত্মক বক্তব্য প্রকাশ করে। তারা দাবি করে যে, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কিছু রাজনীতিবিদ এবং মিডিয়া চীনকে আক্রমণ ও তাদেরকে দোষী সাব্যস্ত করতে বিষয়টিকে ভুলভাবে উপস্থাপন করছে।’ সেই দিনই, যুক্তরাষ্ট্র বেলুনটি গুলি করে ভূপাতিত করে- যা চীনকে ক্ষুব্ধ করে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাও নিং এটিকে একটি "স্পষ্ট মাত্রাতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া" এবং "অগ্রহণযোগ্য এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন" বলে অভিহিত করেন। বেলুনের অবশিষ্টাংশ ফেরত দেয়ার জন্য চীন অনুরোধ করেছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আকাশযানটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়। এটি চীনের।" বেইজিংয়ে থাকা মার্কিন দূতাবাসে এ বিষয়ে একটি আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দিয়েছে চীন। অনলাইন, চীনা জাতীয়তাবাদীরা ক্ষুব্ধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিন্দা করেছে।
বিশিষ্ট ভাষ্যকার এবং গ্লোবাল টাইমসের সাবেক প্রধান সম্পাদক হু শিজিন বলেন, তিনি মনে করেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে এই "পরিস্থিতির অবসান করতে হয়েছে" কারণ আমেরিকানরা "দুর্ঘটনার পেছনে সত্য অনুসন্ধান করার পরিবর্তে এর রাজনীতিকীকরণ করতে চেয়েছিল"। এরইমধ্যে, দ্বিতীয় আরেকটি বেলুন লাতিন আমেরিকার উপর দিয়ে ভেসে যেতে দেখা গেছে, যা চীনা কর্তৃপক্ষ স্বীকার করেছে যে সেটিও তাদের ছিল।
চীনা ইন্টারনেটে বেলুনটি নিয়ে রীতিমত জল্পনা শুরু হয়েছে যে, ঠিক কে বা কারা বেলুনটি উড়িয়েছে তা নিয়ে। কারণ বেলুনটি বেসামরিক কোনো উৎস থেকে উড়ানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানতে পারেনি তারা। অনেকে সাম্প্রতিক বিভিন্ন আর্টিকেল দেখে কেমচায়না ঝুঝও রাবার রিসার্চ এন্ড ডিজাইন ইন্সটিটিউট নামে স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করছে যারা এ ধরণের উচ্চতায় উড়তে সক্ষম বেলুন উৎপাদন করে।
কিছু ব্লগার দাবি করেছেন যে, একটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কেমচায়না ঝুঝও বেলুনটি তৈরি করেছে। কিন্তু এটির সঙ্গে কোম্পানির সংযোগের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। রোববার এই বিভ্রান্তি আরও জোরালো হয় যখন পূর্ব শানদং প্রদেশের উপকূলে একটি অজ্ঞাত বস্তু উড়ে যাওয়ার বিষয়ে দ্য পেপার নামে একটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। এই প্রতিবেদনে বলা হয়, মৎস্য কর্মকর্তারা স্থানীয় জেলেদের সতর্ক করে বলেছে যে, চীনা কর্তৃপক্ষ বস্তুটিকে গুলি করে নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
প্রতিবেদনটি চীনের কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমও প্রকাশ করে তবে রাষ্ট্রীয় মিডিয়া এবং সরকারি বিভাগগুলি এ নিয়ে মুখ খোলেনি। তবে এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে। কিছু অ্যাকাউন্ট থেকে স্যাটেলাইটের চিত্রসহ লাইভ স্ট্রিমিং করা হয়েছে। কিন্তু কিছু অনলাইন বিষয়টিকে সন্দেহের চোখে দেখেছে এবং প্রশ্ন তুলেছে যে, এই সংবাদটি কেন আরো আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে ঘোষণা করা হলো না।
এর পরে চীনের রাষ্ট্রীয় মিডিয়া একটি ভিন্ন বিষয়কে সামনে এনেছে। তারা বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওহায়োতে বিপজ্জনক উপাদান বহনকারী একটি লাইনচ্যুত ট্রেন রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সে ঘটনা আড়াল করতেই চীনের বেলুন নিয়ে মাতামাতি শুরু করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনাটি ফেব্রুয়ারির শুরুতে ঘটেছিল। সে বিষয়কে আড়াল করতে মার্কিন সংবাদমাধ্যমগুলো চীনের বেলুন নিয়ে প্রতিবেদন ছাপার উপরেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলো। চীনা সংবাদ মাধ্যমগুলো এখন এ বিষয়টি উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচার করছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছে যে, তারা দূষণ রোধ করতে ট্রেন থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নিয়ন্ত্রিতভাবে বের করেছে।
এরপর থেকে এটি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ওয়েইবো যা চীনে টুইটারের মতো, সেখানে ওহায়োর ট্রেন হ্যাশট্যাগটি সপ্তাহান্তে ৬৯ কোটির বেশি বার দেখা হয়েছে, এই বিষয়ে ৪০টিরও বেশি হ্যাশট্যাগ তৈরি করা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, ঘটনাটি একটি বৈশ্বিক পরিবেশগত সংকটে পরিণত হবে এবং বেলুনের তুলনায় মার্কিন মিডিয়াতে ট্রেনের ঘটনার তুলনামূলকভাবে কম প্রতিবেদন করা হয়েছে। "ওহায়োর বিষয়ে উত্তেজনা কমাতেই মনে হচ্ছে দিশাহীনভাবে ঘুরতে থাকা বেলুনকে ব্যবহার করা হয়েছে," লেখা পোস্টটি প্রায় ৩০০০ বার পড়া হয়েছে৷ সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।