Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পে মানবিক বিপর্যয়

| প্রকাশের সময় : ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

তুরস্ক ও সিরিয়ার সীমান্ত এলাকার কয়েকটি শহর ৭.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে। গত সোমবার স্থানীয় সময় ভোর ৪.১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প আঘাত হানে। তুরস্কের কাহরামানমারাস থেকে ৬৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ভূ-পৃষ্ঠের ২ কিলোমিটার নিচে উৎপত্তি হওয়া ভূমিকম্পটি তুরস্ক ও সিরিয়ার ১৫টির বেশি শহরে আঘাত হানে। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ৫ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মৃতের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এ সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অসংখ্য মানুষ এখনো ধ্বংসস্তুপের নিচে আটকা পড়ে আছে। তুরস্কে প্রায় ২৫ হাজার উদ্ধারকর্মী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতায় কাজ করছে। ইতিমধ্যে ১৭ হাজারের বেশি আহত মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। তুরুস্কে এটি শতাব্দীর সবেচেয়ে ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইতিপূর্বে ১৯৯৯ সালে তুরস্কের ইজমিত ও মারমারা উপকুলীয় অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। এবারের ভূমিকম্পের মাত্রা, প্রবণতা, বিস্তৃতি ও ধ্বংসক্ষমতা আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। তুরস্ক ও সিরিয়ার নেতাদের আহŸানে ইতিমধ্যে বিশ্বের ৪৫টির বেশি দেশ ও সংস্থা সাড়া দিয়ে সহায়তা নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন কয়েক ঘন্টার মধ্যে তার দেশের উদ্ধার কর্মী ও ত্রাণ তৎপরতা শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহত ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।

তুরস্কে প্রায় ৬ হাজার ভবন ধ্বংস হয়েছে বলে প্রাথমিক তথ্যে বলা হয়েছে। সিরিয়ার আলেপ্পোসহ বেশ কয়েকটি শহরে শত শত ভবনের ধ্বংসস্তুপের নিচে হাজারো মানুষ আটকে থাকা কিংবা চাপা পড়ার খবর পাওয়া গেছে। গতকাল গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভূমিকম্পের ধ্বংসস্তুপের চিত্র যেন পারমানবিক বোমার ধ্বংসযজ্ঞের চেয়েও ভয়াবহ। তুরস্কের ১০ টি শহর ও প্রদেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। রাজনৈতিক বিভাজন, যুদ্ধ ও ভূ-রাজনৈতিক প্রতিদ্ব›িদ্বতা নির্বিশেষে প্রায় সব দেশই এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে তুরস্ক ও সিরিয়ার নাগরিকদের প্রতি সমবেদনাসহ সহায়তা নিয়ে পাশে থাকার ঘোষণা দিয়েছে। সিরিয় নেতা বাশার আল আসাদ চরম বৈরী ইসরাইলের প্রতিও সহায়তার আহŸান জানিয়েছেন বলে গতকাল প্রকাশিত খবরে জানা যায়। বন্ধু প্রতিম মুসলিম দেশ হিসেবে সামর্থ্য অনুসারে বাংলাদেশকে তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিৎ। সিরিয়া ও তুরস্কে কি ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন তা খোঁজ নিয়ে সহায়তা করা প্রয়োজন। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন দুর্যোগ-সংকটে তুরস্ক আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত সিরিয়া এবং তুরস্কের এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সময় উদ্ধার তৎপরতা, ত্রাণ, গার্মেন্ট পণ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানো যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর উচিৎ শুধু সমবেদনা ও শোক প্রকাশ করাই নয়, তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে সব ধরনের সহায়তা নিয়ে দাঁড়ানো জরুরি।

বিশ্ব ক্রমশ প্রাকৃতিকভাবে অস্থিতিশীল ও দুর্যোগপ্রবণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন দেশে ভূমিধস, সাইক্লোন, সুনামি এবং ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন স্থানে দাবানল, অস্বাভাবিক তাপপ্রবাহ এবং সাম্প্রতিক শৈত্য প্রবাহের রেকর্ড প্রকৃতির অস্বাভাবিক আচরণের বার্তা দিচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য বিনষ্ট, ভূপৃষ্ঠের উষ্ণায়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে ভূমিকম্প ঝুঁকিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে। ভূমিকম্প ও আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা ঢাকাসহ দেশের ১৩টি এলাকাকে ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে চিহ্নিত করেছেন। বাংলাদেশের আবহাওয়াও ক্রমে চরমভাবাপন্ন হয়ে উঠছে। এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (একিউআই) জরিপে টানা বেশকিছুদিন ধরে ঢাকার বাতাসকে সবচেয়ে দূষিত বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে। অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ণের কারণে পরিবেশ দূষণের সাথে সাথে ভূমিকম্পের প্রবণতা ও ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। ঢাকার ঘনবসতি এবং অপরিকল্পিতভাবে বিল্ডিং কোড অমান্য করে যে হারে ভবন নির্মিত হয়েছে ও হচ্ছে, তাতে ৭ মাত্রার ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে মানবিক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। রানা প্লাজা ধস ও কয়েকটি বহুতল ভবনে অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে প্রতিয়মান হয়েছে, আমাদের সিভিল ডিফেন্সের লজিস্টিক সাপোর্ট ও ট্রেনিংয়ে ঘাটতি রয়েছে। ভূমিকম্পের মত বড় ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আমাদের নেই। ভূমিকম্পে ধ্বংসযজ্ঞ হলে তা মোকাবেলা করার মতো সামর্থ্য ও সুযোগ সীমিত। তুরস্ক ও সিরিয়া ভূমিকম্প থেকে শিক্ষা নিয়ে ভূমিকম্পসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে আধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন করে গড়ে তোলা অপরিহার্য। এ বাহিনীর উদ্ধারকর্মীদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশে পাঠিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ট্রেনিংয়ের উদ্যোগ নিতে হবে। ভবন নির্মাণ ও নগরায়ণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পসহনীয় ও পরিবেশগত বিষয়গুলো নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

 



 

Show all comments
  • মেনন ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৬ এএম says : 0
    তুরস্ক ও সিরিয়ার এমন বিপদে সব দেশের পাশে থাকা উচিত
    Total Reply(0) Reply
  • মেনন ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৬ এএম says : 0
    যারা এ ভূমিকম্পে নিহত হয়েছে মহান আল্লাহ যেন তাদের জান্নাতবাসী করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ওসমান ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তোমার বান্দাদের এমন কষ্ট দিও না।
    Total Reply(0) Reply
  • বাবু ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৭ এএম says : 0
    হে আল্লাহ তুমি সবাইকে রক্ষা করো
    Total Reply(0) Reply
  • জন্টু ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৭ এএম says : 0
    হে মহান আল্লাহ তুমি বিশ্ববাসীকে হেফাজত করো
    Total Reply(0) Reply
  • রামীম ৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩, ১:০৮ এএম says : 0
    এমন ভূমিকম্প পূথিবীবাসী এর আগে কমই দেখেছে। মহান আল্লাহ সবােইকে হেফাজতে রাখুক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সিরিয়া

১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন