গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
হাবিবুর রহমান : জনগণের সরাসরি অংশগহণে নয়, জেলা পরিষদের প্রশাসক যুগের অবসান হচ্ছে। আগামী ২৮ ডিসেম্বর ৩৯ জেলায় নির্বাচন বুধবার। প্রশাসক নয়, এবার দেশের সকল জেলা পরিষদ পেতে যাচ্ছে নির্বাচিত চেয়ারম্যান। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সকল জেলায় ব্যালট পোপার পাঠানো হয়েছে।
ইতোমধ্যে ২২ জেলায় সরকারি দলের জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন ২২ প্রার্থী এবং সাধারণ সদস্য ১৩৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৩ জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›দ্বী ১২৪ জন প্রার্থী। তবে বেশির ভাগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
জেলা পরিষদ ব্রিটিশ আমল থেকেই চালু ছিল। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর রহমান মৃত্যুর পর জিয়াউর রহমান আবার জেলা পরিষদ গঠন করেন। ওই সময়ে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে সরকারের মনোনীত ব্যক্তিদের নিয়োগ দেয়া হতো। জেলা পরিষদের মাধ্যমে তখন মূলত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হতো। জেনারেল এরশাদের আমলেও জেলা পরিষদ কার্যকর ছিল। ১৯৮৮ সালে ঠিক হয় সরকার মনোনীত ব্যক্তিরা নন, সংসদ সদস্যরা হবেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। কিন্তু ১৯৯১ সালে গঠিত বিএনপি সরকারের সময় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। ওই সময় উপজেলা পরিষদও বিলুপ্ত করা হয়। মূলত জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর কোনো নির্বাচন না দেয়ায় জেলা পরিষদ অকার্যকর হয়ে পড়ে। সরকারে উপসচিব পদমর্যাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ে এ পরিষদ পরিচালনা শুরু হয়।
নির্বাচন কমিশনের উপ-সচিব ফরহাদ আহাম্মদ খান ইনকিলাবকে বলেন, তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী রয়েছেন ১৪৬ জন। এর মধ্যে ২২ জেলায় বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন একক প্রার্থীরা। বাকি ৩৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্ব›দ্বী ১২৪ জন। তাদের সবাই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া ১৬টি জেলায় মাত্র দু’জন করে প্রার্থী জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল ১১ ডিসেম্বর। গত ২০ নভেম্বর তিন পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা পরিষদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, গত ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চেয়ারম্যান, সাধারণ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন প্রার্থীরা। ৩ ও ৪ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই হয়েছে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে ৩৯ জেলায় প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন ১২৪ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ২২ জন বিনা প্রতদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন।
নির্বাচিতরা হলেনÑ নারায়ণঞ্জে আনোয়ার হোসেন, গাজীপুরে মো: আখতারুজ্জামান, ঠাকুরগাঁওয়ে সাদেক কোরাইশী, জয়পুরহাটে আরিফুর রহমান রকেট, নাটোরে সাজেদুর রহমান খান, সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, যশোরে শাহ হাদিউজ্জামান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, ঝালকাঠিতে সরদার শাহ আলম, ভোলায় আব্দুল মোমিন টুলু, নেত্রকোনায় প্রশান্ত কুমার রায়, মুন্সীগঞ্জে মো: মহিউদ্দিন, দিনাজপুরে আজিজুল ইমাম চৌধুরী, নওগাঁয় এ কে এম ফজলে রাব্বি, কুষ্টিয়ায় রবিউল ইসলাম, ফেনীতে আজিজ আহমেদ চৌধুরী, কিশোরগঞ্জে মো: জিল্লুর রহমান, ঢাকায় মো: মাহবুবুর রহমান, হবিগঞ্জে মো: মুশফিক হুসেন চৌধুরী, চট্টগ্রামে এম এ সালাম, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক ও ফরিদপুরে মো: লোকমান মৃধা।
এছাড়া সাধারণ সদস্য পদে ২ হাজার ৯৮৫ জন ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৮০৫ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতায় রয়েছেন। সাধারণ সদস্য ১৩৯ ও সংরক্ষিত সদস্য পদে ৫৩ জন বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচনে সরাসরি ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে না। জেলাগুলোতে স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ভোট দিয়ে নিজ নিজ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্য (সাধারণ ও সংরক্ষিত) নির্বাচন করবেন।
জানা গেছে, পার্বত্য তিনটি জেলা বাদে বাকি ৬১ জেলা পরিষদে ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রশাসক নিয়োগ করে সরকার। তখন স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা বলেছিলেন, ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন দিয়ে জেলা পরিষদ গঠন করা হবে। কিন্তু গত সাড়ে চার বছর ধরে প্রশাসক দিয়েই চলছে জেলা পরিষদগুলো। নির্বাচন না হওয়ায় অনির্বাচিত ব্যক্তিরাই প্রশাসক হিসেবে কাজ করায় অনেক ক্ষেত্রে জবাবদিহিতা কমে যায়। এ বিষয়গুলো বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রæত জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার বিভাগকে। জেলা পরিষদ নির্বাচন হবে বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন-২০০০ অনুযায়ীই। বিদ্যমান এ আইনের ১৭(১) ধারায় বলা হয়েছেÑ প্রত্যেক জেলার অন্তর্ভুক্ত সিটি কর্পোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র, কমিশনার, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, পৌরসভার মেয়র, কমিশনার, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের নিয়ে নির্বাচকমÐলী গঠিত হবে।’ ১৭(২) ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘প্রত্যেক ওয়ার্ডের জন্য নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রণীত একটি ভোটার তালিকা থাকবে।’ ১৭(৩) ধারায় বলা হয়েছেÑ ‘নির্বাচকমÐলীর সদস্য নন এমন কোনো ব্যক্তি ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন না।’ আইনের এই ধারা অনুযায়ী ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের ভোটদানের মাধ্যমে জেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনের পর একটি পূর্ণাঙ্গ পরিষদ গঠন করা হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ১৫ জন সদস্য এবং সংরক্ষিত ৫ জন নারী সদস্যও নির্বাচন করা হবে।
গত ২৮ মার্চ মন্ত্রিসভার নিয়মিত সাপ্তাহিক বৈঠকে আইনটি সংশোধন না হওয়ার কারণ সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়। ওই বৈঠকেও জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে ইতিবাচক মত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপরই স্থানীয় সরকার বিভাগ এ নিয়ে কাজ শুরু করে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর জেলা পরিষদ কার্যকরের উদ্যোগ নেয়া হয়। ২০১১ সালের ডিসেম্বরে জেলা পরিষদ আইন-২০০০-এর ৮২(১) ধারা অনুযায়ী দেশের তিনটি পার্বত্য জেলা বাদে ৬১ জেলা পরিষদের প্রশাসক নিয়োগ করা হবে। এ আইনানুসারে, জেলা পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক নিযুক্ত একজন প্রশাসক জেলা পরিষদের কার্যাবলি সম্পাদন করবেন। তবে জেলা পরিষদের নির্বাচন কবে হবে এবং প্রশাসক কতদিন দায়িত্ব পালন করবেন, তার কোনো সময়সীমার উল্লেখ নেই ওই আইনে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।