Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গুজরাট দাঙ্গায় মোদির দায় নিয়ে বিবিসির দুই পর্বের প্রামাণ্যচিত্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জানুয়ারি, ২০২৩, ৮:০৭ পিএম

গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে দুই পর্বের একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ওই দাঙ্গায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির দায় নিয়েই মূলত এই প্রামাণ্যচিত্র। দাঙ্গা সম্ভব করে তোলার জন্য মোদির সক্রিয় ভূমিকার কথা উল্লেখ রয়েছে এতে।
এ প্রামাণ্যচিত্র নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে ভারতের বিজেপি সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তথ্যচিত্রে মোদি প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব রয়েছে। আর এটি আসলে একটি অপপ্রচার।
২০০২ সালে ভারতের গুজরাট রাজ্যে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গায় বহু মানুষ প্রাণ হারায়। এর মধ্যে অধিকাংশ মুসলিম। ঘটনার সময় ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ছিলেন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী।
দুই পর্বের প্রামাণ্যচিত্রটির প্রথমটি গত মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যে প্রচারিত হয়েছে। দ্বিতীয় পর্ব সম্প্রচার করা হবে আগামী মঙ্গলবার। বিবিসি বলছে, দাঙ্গার ঘটনার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভারত সরকারের প্রতিক্রিয়ার জবাবে বিবিসি বলেছে, প্রামাণ্যচিত্রে উত্থাপিত অভিযোগগুলোর বিষয়ে ভারত সরকারের কাছে জবাব চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করেছিল।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি বলেছেন, তথ্যচিত্রটিতে মোদি প্রশ্নে বস্তুনিষ্ঠতার অভাব রয়েছে। এটি বানানোই হয়েছে অপপ্রচারের জন্য।
প্রামাণ্যচিত্রের প্রথম পর্বটি রাজনীতিতে মোদির প্রথম পদক্ষেপগুলোকে চিহ্নিত করে এগিয়েছে। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) মাধ্যমে পশ্চিমাঞ্চলীয় গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার মধ্য দিয়ে নরেন্দ্র মোদির উত্থান ঘটে।
প্রামাণ্যচিত্রটিতে ব্রিটিশ পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে পাওয়া অপ্রকাশিত একটি প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে হিন্দু তীর্থযাত্রীদের বহনকারী একটি ট্রেনে আগুন দেওয়ার পরে যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শুরু হয়েছিল, সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী মোদির পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এই দাঙ্গায় বেশ কয়েকজন মানুষ প্রাণ হারান। এরপর সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে হাজারের বেশি মানুষ প্রাণ হারায়, যাদের বেশির ভাগই মুসলমান। সাতচল্লিশে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সাম্প্রদায়িক সংঘাত এটি।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, নরেন্দ্র মোদি ‘দায়মুক্তির পরিবেশের’ জন্য ‘সরাসরি দায়ী’, আর তাঁর এ অবস্থানই সহিংসতা উসকে দিয়েছে।
নরেন্দ্র মোদি দীর্ঘদিন ধরে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আসছেন। সহিংসতার জন্য তাঁর কোনো দায় ছিল—এমন অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেন এবং দাঙ্গার জন্য ক্ষমা চাইতেও রাজি হননি। ২০১৩ সালে সুপ্রিম কোর্টের একটি প্যানেলও বলেছিলেন, ওই দাঙ্গায় মোদির বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ নেই।
এই প্রামাণ্যচিত্র করার ক্ষেত্রে বিবিসির উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি। তিনি বলেছেন, ‘এই ধরনের তৎপরতা এবং এর পেছনের এজেন্ডা কী হতে পারে, সেটি আমাদের ভাবাচ্ছে। একটি নির্দিষ্ট অসমর্থিত বয়ানকে তুলে ধরার উদ্দেশে এই অপপ্রচার। এখানে পক্ষপাতিত্ব, বস্তুনিষ্ঠতার অভাব এবং একটি অব্যাহত ঔপনিবেশিক মানসিকতা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।’
একটি বিবৃতিতে বিবিসি বলেছে, ‘প্রামাণ্যচিত্রটিতে ভারতের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং মুসলিম সংখ্যালঘুদের মধ্যে উত্তেজনার ওপর নজর দেওয়া হয়েছে এবং সেই উত্তেজনাগুলোর সঙ্গে মোদির রাজনীতির সম্পর্ক অন্বেষণ করা হয়েছে।’
এই প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণের আগে ‘গভীরভাবে গবেষণা’ করা হয়েছিল। নির্মাণকালে বহু মানুষ, প্রত্যক্ষদর্শী, সাক্ষী এবং বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। বিজেপির লোকজনের প্রতিক্রিয়াসহ বিভিন্ন মতামতও তুলে ধরা হয়েছে।
প্রতিবেদনটি তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাক স্ট্রর নির্দেশে একটি তদন্তের অংশ ছিল। এতে বলা হয়েছে, ‘দাঙ্গার সময় সহিংসতার ঘটনা বিভিন্ন মাধ্যমে যতটা এসেছে, প্রকৃত চিত্র ছিল তার চেয়ে অনেক বেশি মারাত্মক’ এবং ‘দাঙ্গার লক্ষ্য ছিল হিন্দু এলাকা থেকে মুসলমানদের নির্মূল করা’।
‘অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ ছিল যে পুলিশকে দাঙ্গাস্থল থেকে ফিরিয়ে আনতে এবং হিন্দু উগ্রপন্থীদের কৌশলে উৎসাহিত করার ক্ষেত্রে নরেন্দ্র মোদি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছিলেন। এটি ছিল হিন্দু ও মুসলমানদের সুরক্ষার জন্য পুলিশকে তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়ার জন্য রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার একটি বিশেষ উদাহরণ।’ প্রামাণ্যচিত্রে জ্যাক স্ট্রকে এসব বলতে শোনা যায়।
সেই সময়ে ব্রিটিশ সরকার কী পদক্ষেপ নিতে পারত, সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে স্ট্র বলেন, ‘বিকল্প...সীমিত ছিল, আমরা কখনই ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে যাইনি। তবে এটা স্পষ্টতই তাঁর (মোদির) খ্যাতির ওপর একটি কালো দাগ।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাককে সংসদে এমপি ইমরান হুসেন জিজ্ঞাসা করেন, তিনি এই প্রতিবেদনের সঙ্গে একমত কি না যে নরেন্দ্র মোদি সহিংসতার জন্য সরাসরি দায়ী এবং জাতিগত নির্মূলের এই গুরুতর কাণ্ডে তাঁর জড়িত থাকার বিষয়ে পররাষ্ট্র দপ্তর আরও কী কী জানত?
জবাবে সুনাক বলেন, ‘আমরা কোথাও নিপীড়ন সহ্য করি না।’ তবে নরেন্দ্র মোদিকে যেভাবে চিত্রিত করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি একমত নন। সূত্র : বিবিসি



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রামাণ্য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ