Inqilab Logo

রোববার, ২৩ জুন ২০২৪, ০৯ আষাঢ় ১৪৩১, ১৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

গণ আন্দোলনে ভীত সরকার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে তান্ডব সৃষ্টি করছে : প্রিন্স

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১:২৩ পিএম

গণ আন্দোলনে ভীত সরকার দমন নিপীড়ন চালিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে উস্কানি-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তান্ডব সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স।
তিনি বলেন, স্বাধীনভাবে রাজনীতি এবং রাজনৈতিক কর্মসূচী পালন করবার অধিকার সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত। সরকারের মন্ত্রী নেতারা হর-হামেশায়ই বলেন, দেশে সকলের রাজনীতি করবার অধিকার রয়েছে। বিদেশীদের সামনে তারা বলেন, বিরোধী দলের কর্মসূচী পালনে সরকার নাকি সর্বাত্মক সহযোগিতা করে থাকে। সরকারের এই বয়ান সর্বৈব বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। প্রকৃত সত্য এই যে, সরকার কর্তৃত্ববাদী শাসন অব্যাহত রাখতে রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করবার চেষ্টা চালাচ্ছে। গণ আন্দোলনে ভীত সরকার দমন নিপীড়ন চালিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে উস্কানি-প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তান্ডব সৃষ্টি করছে।
মঙ্গলবার (১৭ জানুয়ারি) বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গতকাল দেশব্যাপী মহানগর ও উপজেলা পর্যায়ে ১০ দফা বাস্তবায়ন ও বিদ্যুতের দাম কমানোর দাবিতে সমাবেশ ও মিছিলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী ছিল। এই কর্মসূচী সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরকার দমন নিপীড়ন চালায়, প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে এবং কর্মসূচী চলাকালে হামলা চালায়। অধিকাংশ জায়গায় কর্মসূচী পালন না করতে প্রশাসনকে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা হয়। সরকারের বাঁধা, বিঘ্ন, হামলা, গ্রেফতার উপেক্ষা করে জনগণকে সাথে নিয়ে সমাবেশ ও মিছিলের কর্মসূচী সফল করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির গণ বিরোধী সরকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ এবং দাম কমানোর দাবী উচ্চকিত করায় নেতাকর্মীদের প্রতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
কর্মসূচি পালনকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাধা ও হামলার তথ্য তুলে দরে তিনি বলেন, গতকাল চট্টগ্রামে মিছিল পূর্ব সমাবেশ চলাকালে বিনা উস্কানিতে পুলিশ সমাবেশে আগত নেতাকর্মীদের ওপর আক্রমন করে। বেধড়ক লাঠি চার্জ, গুলি, সাউন্ড বোমার হামলায় সমাবেশ পন্ড করে দেয়। পুলিশের এই সাঁড়াশি অভিযানে ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হন, গ্রেফতার করা হয় ২০ জনকে। রাতে পুলিশ চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক শাহ আলম, সদরঘাট থানা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক নুর খানকে গ্রেফতার করা হয় এবং চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সভাপতি ডা. শাহাদাৎ হোসেন, সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, মহানগর যুবদলের সভাপতি মোশাররফ হোসেন দীপ্তি, সাংগঠনিক সম্পাদক এমদাদুল হক বাদশার বাড়িতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতারের উদ্দেশ্যে তল্লাশী চালায়।

সীতাকুন্ডে সমাবেশস্থল উপজেলা বিএনপি’র সদস্য সচিব গাজী সুজাউদ্দিনের মালিকানাধীন মুন স্টার কনভেনশন হলে আওয়ামী সন্ত্রসীরা পুলিশের উপস্থিতিতে বোমা হামলা চালায় এবং ব্যাপক ভাংচুর করে।

ময়মনসিংহ গৌরীপুর সদরে বিএনপি’র মিছিল চলাকালে পুলিশের উপস্থিতিতে হারুন পার্কের সামনে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করে। হামলায় ময়মনসিংহ উত্তর জেলা বিএনপি’র সদস্য হাফেজ আজিজুল হক, অচিন্তপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আব্দুল আউয়াল মারাত্বকভাবে আহত হন। সন্ত্রাসীরা ময়মনসিংহ উত্তর জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী তানজিল চৌধুরী লিলি, জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহবায়ক নুরুজ্জামান সোহেলকেও আহত করে। মুক্তাগাছা বিএনপি’র সমাবেশে আগত নেতা-কর্মীদের ওপর পুলিশ এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ন্যাক্কারজনক হামলা চালায়। হামলায় ১০জন নেতা-কর্মী আহত হয় এবং নেতা-কর্মীদের যানবাহন ভাংচুর করে ও পৌর বিএনপির নেতা সোহেল ও আউয়ালকে রাতে গ্রেফতার করে।

ধামরাই উপজেলা ও পৌর বিএনপি’র মিছিলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা করে বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও ধামরাই উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ¦ তমিজ উদ্দিন, দোহার পৌর বিএনপি’র সিনিয়র সহ সভাপতি শাহজাহান দেওয়ান, ধামরাই পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মারুফ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মর্তুজ আলী, ধামরাই উপজেলা বিএনপি’র দপ্তর সম্পাদক মিকাইল, বিএনপি নেতা আব্দুল হাই, জাকির হোসেন ও স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা লাভলু কে গ্রেফতার করা হয়।

কর্মসূচী সফল করতে ১৫ জানুয়ারী বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি শরিফুল আলম তার নিজ নির্বাচনী এলাকা কুলিয়ারচরের গণ-সংযোগকালে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা তার গাড়ি বহরে হামলা করে। এসময় নেতা-কর্মীরা প্রতিরোধ করলে তারা পালিয়ে যায় এবং পরে ধারালো অস্ত্র নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা ও লুটপাট চালায়। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গভীর রাতে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বাড়িতে প্রবেশ করে তান্ডব চালায়। পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলমসহ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে। কিশোরগঞ্জ জেলার কুলিয়ারচর উপজেলাধীন সালুয়া ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক সরাপ উদ্দিন সুপন, ফরিদপুর ইউনিয়ন বিএনপি সাধারণ সম্পাদক মোঃ জালাল, মিছিল ও সমাবেশের আগের রাতেই পুলিশ নেতা-কর্মীদের বাসায় অভিযান চালিয়ে ভৈরব পৌর ছাত্রদলের সদস্য সচিব মুকিত আব্দুল্লাহ ফারুকী, ৩ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সোলায়মান, রামদী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ আরাফাতকে গ্রেফতার করে। পুলিশ হামলাকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো বিএনপি’র সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি’র সভাপতি শরীফুল আলমসহ নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে।


সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় কর্মসূচী চলাকালে পুলিশ অতর্কিত হামলা চালায় এবং বিএনপি কর্মী মিজানুর রহমান বাবু, বাবুল আহমেদ, মোঃ মামুন, মোহাম্মদ আলী খোকন, আসলাম মিয়া ও মনিরুলকে গ্রেফতার করে।
শেরপুরের নকলা উপজেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক জহির উদ্দিন মুক্তি, পৌর যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক মুরাদুজ্জামান মাসুমসহ শ্রীবর্দী উপজেলা বিএনপি’র ৫জন
নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে ও মিথ্যা মামলা দায়ের করে।

কুষ্টিয়া পৌর বিএনপি’র যুগ্ম সম্পাদক ও ১২ নং ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতি হাফিজুর রহমান খোকন, পৌর বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তালেব, যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক কামরান জামান কামকে গ্রেফতার করা হয়।

রাজশাহীর বাঘা পৌর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল লতিফসহ দুই জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

পলাশ উপজেলা বিএনপি’র মিছিলে আসার সময় আওয়ামী সন্ত্রাসীদের গুলিতে নরসিংদী জেলাধীন পলাশ থানা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান পাপন গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুত্বর আহত হন এবং অনেক নেতাকর্মী আহত হন।

সিলেটের গোয়াইঘাটে সমাবেশ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হামলায় আহত হয় জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক সোহেল আহমেদ, উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক ওয়ারিস উদ্দিন আহমেদ।

মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলা বিএনপি মিছিল শেষে দলীয় কার্যালয়ে বসলে আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা করে কার্যালয় ভাংচুর এবং উপজেলা বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক আহাদ মোল্লাকে মারাত্মকভাবে আহত করে।

এছাড়াও টাঙ্গাইলের ঘাটাইল, গাজীপুরের শ্রীপুর, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরের নকলা, নালিতাবাড়ী, শ্রীবর্দী, কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর, ভৈরবসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ হামলা চালায়।

আমরা এই হামলা, গ্রেফতার, গুলি, মামলা, দমন নিপীড়নের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের শাস্তি দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এড. আব্দুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, সহ-মহিলা বিষয়ক সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, নির্বাহী কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন, নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ শামীম, নির্বাহী কমিটির সদস্য (দফতরে সংযুক্ত) আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সালেহ প্রিন্স


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ