Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে বাড়ছে মৃত্যু

টাঙ্গাইলে ঝরেছে ৩ প্রাণ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

মৃত্যু বেড়েই চলেছে অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে গুরুতর আহত হয়েছেন দুই শিশুসহ পাঁচ জন। দুপুর ১২টায় তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু রেললাইনের ভূঞাপুর উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ঢেপাকান্দি এলাকায় এই দুর্ঘটনা ঘটে।

টাঙ্গাইল জেলা সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ঢেপাকান্দি এলাকায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে দুই শিশুসহ পাঁচজন গুরুত্বর আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারাকান্দি-বঙ্গবন্ধু সেতু রেললাইনের উপজেলার ফলদা ইউনিয়নের ঢেপাকান্দি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। নিহতদের পরিচয় এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। আহতদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।

ভূঞাপুর থানার ওসি মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। ঘটনাস্থলে পুলিশের টিম পাঠনো হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢেপাকান্দি এলাকার রেলক্রসিংটি অরক্ষিত। সেখানে কোনও গেটকিপার নেই। দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। সকালে একটি লোকাল ট্রেন বঙ্গবন্ধু সেতু স্টেশন থেকে জামালপুরের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় অটোরিকশায় ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক পারভেজ আহমেদ বলেন, হাসপাতালে মোট ছয় জনকে আনা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বাকি পাঁচ জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

সেভ দ্য রোড বলছে, মর্মান্তিকভাবে বছরের শেষ দিন নাটোরে ৩ এবং ১ জন রেল-এ কাটা পরে মৃত্যু বরণ করেন। ১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলপথ দুর্ঘটনা ঘটেছে ৪৮টি। আহত হয়েছে ১৪৭ জন। নিহত হয়েছে ১১ জন।

রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের তথ্য বলছে, সারা দেশে ৮২ শতাংশ রেল ক্রসিং অরক্ষিত। গত বছরে এসব রেল ক্রসিংয়ে ৫১টি দুর্ঘটনায় ৭৯ জন নিহত হয়েছে। বাকি ৩০৩টি দুর্ঘটনা ঘটেছে রেল ট্র্যাকে ও ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় ২৪৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। সব ঘটনাই দায়িত্বহীনতা ও অসচেতনতার কারণে ঘটেছে। মোট ৩৫৪টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২৬ জন নিহত এবং ১১৩ জন আহত হয়েছে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের (এআরআই) এক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের মোট অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ ও এলজিইডির রাস্তা রয়েছে ৪২৭টি করে, সড়ক ও জনপথ বিভাগের ২৪, পৌরসভার ১১০, সিটি করপোরেশনের ৩২, একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের রয়েছে ২৭, জেলা পরিষদের ১৩ ও চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তিনটি। এ ছাড়া ১২৭টি ক্রসিং কার আওতায় আছে তা জানা যায়নি।

রেলওয়ের তথ্য মতে, সারা দেশে তিন হাজার ৩৯৮টি ক্রসিংয়ের মধ্যে এক হাজার ৩৬১টি অবৈধ। আর অরক্ষিত দুই হাজার ৫৪টি। গেটম্যান নেই ৬৩২টি ক্রসিংয়ে। রেল দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ৮৯ শতাংশই অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে। এছাড়া এক হাজার ৪৬৪টি বৈধ লেভের ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯০৪টিতেই কোন নিরাপত্তারক্ষী নেই। রেলপথের ওপর দিয়ে কোথাও কোথাও সড়ক চলে গেছে। লেভেলক্রসিং এগুলোকে বৈধ, অবৈধ, পাহারাদার আছে (ম্যানড), পাহারাদার নেই (আনম্যানড) এভাবে শ্রেণিবিন্যাস করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কখনো বাসের সঙ্গে, কখনো মাইক্রোবাসসহ অন্য যানবাহনের সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষে প্রাণহানি ঘটে। অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ছোট একটি সতর্কীকরণ নোটিস ঝুলিয়ে কর্তৃপক্ষ দায় সারে।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. শাসসুল হক বলেন, দিন দিন বাড়ছে বসতি। নগরায়নের জন্য রেল লাইনের প্রতি কিলোমিটারের মধ্যে একটি করে রেলক্রসিং তৈরি হয়ে গেছে। সব স্থানে বৈধ ক্রসিং থাকলে এত মানুষের মৃত্যু হতো না। সড়কের সঙ্গে রেলের কোনো সমন্বয় নেই। মানুষ বাঁচানোর উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কৌশলী পরিকল্পনা হাতে নেয়া প্রয়োজন। শুধু যে ক্রসিং ঝুঁকিপূর্ণ তা নয়। রেল লাইনের আশেপাশের এলাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিবন্ধক বা পাহারাদার ছাড়া কোনো লেভেল ক্রসিং রাখার কোন অর্থ নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মৃত্যু


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ