Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪, ২৬ বৈশাখ ১৪৩১, ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

ঢাকাসহ বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান আজ

বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন ১৬ ও ২৫ জানুয়ারি আসছে নতুন কর্মসূচি :: নয়া পল্টনে বিএনপি, প্রেসক্লাবে গণতন্ত্র মঞ্চ ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, পুরানা পল্টনে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বিজয়নগরে ১২

ফারুক হোসাইন | প্রকাশের সময় : ১২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্ত করা, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারসহ ১০ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে যুগপৎ আন্দোলন করছে বিএনপি ও সমমনা বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোট। গত ২০ ডিসেম্বর যুগপতের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিল পালনের পর আজ দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে রাজধানীসহ সারাদেশের ১০ বিভাগীয় শহরে গণঅবস্থান করবে বিএনপিসহ অন্যান্য দল ও জোটের নেতাকর্মীরা। ১০ বিভাগীয় গণসমাবেশ, ৩০ ডিসেম্বর গণমিছিলে ব্যাপক জমায়েতের পর গণঅবস্থান কর্মসূচিতেও বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের উপস্থিতি দেখাতে চায় বিএনপি

এলক্ষ্যে এ মাসের শুরু থেকেই কেন্দ্রীয়, বিভাগীয় ও জেলার নেতৃবৃন্দের সমন্বয়ে টিম গঠন করা হয়। এসব টিমের সমন্বয়ে দেশের প্রতিটি জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে প্রচার, প্রচারণা, লিফলেট বিতরণ, প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে। বিএনপির বিভিন্ন জেলার নেতারা বলছেন, কর্মসূচিগুলো এখন শুধু বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না। সাধারণ মানুষও স্বত:স্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছে। আগে যাদেরকে কখনো কোন কর্মসূচিতে দেখা যায়নি, তারাও এখন এসব কর্মসূচিতে যাচ্ছে। তারা বলেন, মানুষের মধ্যে এখন তীব্র আকাক্সক্ষা জন্ম নিয়েছে যে, এই সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে হবে। আর সেটি সম্ভব বিএনপির মাধ্যমে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে। যা সাম্প্রতিক কর্মসূচির উপস্থিতিই প্রমাণ করে।

এদিকে আজ গণঅবস্থান কর্মসূচি থেকে ফের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতারা। নতুন কর্মসূচির মধ্যে ১৬ জানুয়ারি বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) ঘেরাও কর্মসূচি থাকতে পারে। ২৫ জানুয়ারি বাকশাল গঠনের দিনে বাকশাল দিবস হিসেবে কালো পতাকা মিছিল, সেমিনার, পেশাজীবীদের সমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো সূত্রে জানা যায়, যুগপৎ আন্দোলনের দ্বিতীয় কর্মসূচি হিসেবে একযোগে সারাদেশে ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে গণঅবস্থান কর্মসূচি হবে। বড় জমায়েতের প্রস্তুতি নিয়েই আজ ঢাকার ৮ এলাকায় গণঅবস্থান করবে বিএনপিসহ মিত্ররা। আজ বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টার এই কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। বিএনপি ছাড়াও আজ গণঅবস্থান করবে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, গণফোরাম এবং আরও ১৫টি সংগঠনের সমন্বয়ে নতুন ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’। গণঅবস্থান কর্মসূচি সফল করতে বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌর, থানা, ইউনিয়ন এবং ওয়ার্ড পর্যায়ের ইউনিটের নেতারা এরইমধ্যে গণসংযোগ, কর্মীসভা, লিফলেট বিতরণসহ সব প্রস্তুতি শেষ করেছে।

যেসব স্থানে গণঅবস্থান:
জানা গেছে, সারা দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে একযোগে গণঅবস্থান পালন করবে বিএনপিসহ বিভিন্ন সমমনা দল ও জোটের নেতারা। রাজধানীতে নয়াপল্টনে আজ বুধবার সকাল ১১ টা থেকে ৩টা পর্যন্ত চার ঘন্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। শীর্ষ নেতাদের মধ্যে এখানে থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও মির্জা আব্বাস। এছাড়া বিভাগীয় গণঅবস্থানে সিনিয়র নেতাদের মধ্যে অবস্থান নিবেন সিলেট বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায়, রাজশাহী বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, ময়মনসিংহ বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, চট্টগ্রাম বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বরিশাল বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান, রংপুর বিভাগে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কুমিল্লা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, খুলনা বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু এবং ফরিদপুর বিভাগে ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান। ইতোপূর্বে গঠিত সমন্বয় টিমের দলনেতা, সমন্বয়কারী, সমন্বয় সহযোগীসহ বিভাগের অন্তর্গত জেলা সমূহের অধিবাসী কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, যুগ্ম মহাসচিব, সম্পাদক, সদস্য, জেলা, উপজেলা ও মহানগরসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সহ স্ব-স্ব বিভাগীয় সদরের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবেন।

এছাড়া ‘রাজনৈতিক বন্দী মুক্তি ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে’ সকাল ১১ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদী গণঅবস্থান করবে গণতন্ত্র মঞ্চ। প্রেসক্লাবের পূর্ব প্রান্তে গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য গণঅবস্থান করবে। একইসময়ে রাজধানীর পুরানা পল্টনে গণঅবস্থান করবে ১২ দলের সমন্বয়ে গঠিত ‘জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট’। জোটের সমন্বয়ক ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, তারা ১১-৩ টা পর্যন্ত গণঅবস্থান করবেন। ১০ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে একইসময়ে বিজয়নগর পানির ট্যাংকি সংলগ্ন রাস্তয় ১২ দলীয় জোটের উদ্যোগে গণঅবস্থান করা হবে। এতে জোটের নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করবেন বলে জানানে বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা।

যুগপৎ আন্দোলনের অংশ হিসেবে রাজধানীর পূর্বপান্থপথস্থ এফডিসি সংলগ্ন দলীয় কার্যালয়ের সামনে সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩ টা পর্যন্ত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি। কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিবেন এলডিপির মহাসচিব ড. রেদোয়ান আহমদ। এ সময় এলডিপির সিনিয়র নেতারা উপস্থিত থাকবেন। আজ বুধবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত মতিঝিলের আরামবাগে মেইন রোডে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে গণফোরাম। এছাড়া বিজয়নগরে আকরাম টাওয়ারের সামনে ১৫ সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত ‘সমমনা গণতান্ত্রিক জোট’ গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করবে বলে জানিয়েছেন জোটের সমন্বয়ক মুহাম্মদ সাইদুর রহমান।

‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ পালন করবে জামায়াত: এদিকে যুগপতের প্রথম কর্মসূচি গণমিছিলের পর কোনো যোগাযোগ না হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে মনোমালিন্য হয়েছে জামায়াতের সাথে। যে কারণে ক্ষুব্ধ জামায়াত গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করছে না। জামায়াত সূত্র জানান, এমনিতেই মিছিল সমাবেশ করলে তাদেরকে বাধা দেওয়া হয়, নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। এমতাবস্থায় চার ঘণ্টার গণঅবস্থান কর্মসূচি পালন করা তাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। ফলে কৌশলগত কারণে গণঅবস্থান কর্মসূচির পরিবর্তে ওয়ান-ইলেভেনের এই দিনটিকে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালন করবে। দেশের সব মহানগরী শাখায় আলোচনা সভা করা হবে। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম রোববার এক বিবৃতিতে বলেছেন, ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। ওইদিন দেশের গণতান্ত্রিক ধারাকে ব্যাহত করে জরুরি অবস্থা জারির মাধ্যমে অগণতান্ত্রিক সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে। এই সরকারকে নিজেদের আন্দোলনের ফসল বলে দাবি করে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগ বাদে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অগণতান্ত্রিক সরকারের ক্ষমতা দখলের প্রতিবাদ জানায়। সুতরাং দেশবাসীকে কেয়ারটেকার সরকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে নিজেদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

অনুমতি দিয়েছে ডিএমপি:
ঢাকায় আজকের গণঅবস্থান কর্মসূচীর অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডিএমপি কমিশনারের কার্যালয়ে বৈঠকের পর এই অনুমতির কথা জানানো হয়। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। পরে ডা. জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা গণঅবস্থান কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করে সহযোগিতা চেয়েছি। তারা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২ টা পর্যন্ত বিএনপি অফিসের সামনের এক পাশে গণঅবস্থান করার অনুমতি দিয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে গণঅবস্থান শেষ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ।

পরবর্তী নতুন কর্মসূচি:
যুগপৎ আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে নিয়ে ধারাবাহিক কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকতে চায় বিএনপি। ধাপে ধাপে কি ধরণের কর্মসূচি দেয়া যায়, জনগণকে সম্পৃক্ত করা যায় তা নিয়ে প্রতিদিনই জেলা, মহানগর, কেন্দ্র ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করছেন বিএনপির দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এর মধ্যে জেলার নেতাদের সঙ্গে ৫দিন ব্যাপী ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। গত সোমবার ও গতকালও স্থায়ী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। এসব বৈঠক থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচির প্রস্তাব এসেছে। ধাপে ধাপে এসব কর্মসূচির মাধ্যমে আন্দোলনকে চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে চায় বিএনপির হাইকমান্ড। তবে নতুন কর্মসূচি প্রণয়নে কৌশলী বিএনপি। এক্ষেত্রে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও ‘বিতর্কিত দিবস’ বেছে নিয়ে কর্মসূচি দেওয়া হচ্ছে। নতুন কর্মসূচির মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে আগামী ১৬ জানুয়ারি দশ বিভাগীয় শহরে বিক্ষোভ কর্মসূচি হবে। এক্ষেত্রে ঢাকার কাওরান বাজারে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) এর কার্যালয় ঘেরা কর্মসূচি পালন করা হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্দ্ধগতির প্রতিবাদে পরবর্তী কর্মসূচি নিয়েও জোট ও দলের শীর্ষ নেতাদের মধ্যে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি নতুন কর্মসূচি হিসেবে ‘লংমার্চ’ বা ‘পথসভা’ কর্মসূচি আসতে পারে। এছাড়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৮৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯ জানুয়ারি পৃথকভাবে কর্মসূচি পালন করবে বিএনপি। আগামী ২৫ জানুয়ারি ‘কালো পতাকা প্রদর্শন’, ‘বিক্ষোভ মিছিল’, মানববন্ধন কিংবা পেশাজীবী সমাবেশ পালন করা হবে। ২৫ জানুয়ারি ‘বাকশাল দিবস’ হিসেবে পালনের জন্যই ওই দিনটিকে ঘৃণা প্রদর্শনের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। #



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ