Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সরকার তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় পায়

সম্পত্তি ক্রোকের আদেশের প্রতিবাদে বিক্ষোভ দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ মিছিল-পূর্ব সমাবেশে গয়েশ্বর

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৮ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বকে ভয় পায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এই সরকার লুটপাটের মাধ্যমে দেশকে শূণ্য করেছে। আর এখন তারেক রহমানের প্রতি তাদের রাগ। কারণ তিনি দেশে না থেকেও দেশবাসীকে জাগ্রত করেছেন। তার নেতৃত্বে এই গণজাগরণে সরকার এখন আতংকিত। গতকাল শনিবার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের সম্পদ ক্রোকের আদেশের প্রতিবাদে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল পূর্ব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

বিক্ষোভ মিছিলটি রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারো নয়াপল্টনে এসে শেষ হয়। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবীউল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির লিটন মাহমুদ, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, যুবদলের গোলাম মাওলা শাহিন প্রমুখ। বিক্ষোভ মিছিলে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির মনির হোসেন চেয়ারম্যানসহ ছাত্রদল, যুবদল এবং অন্যান্য সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

বিক্ষোভ মিছিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, তারেক রহমানের কোনো অস্থাবর সম্পত্তি নেই। মূলত ওয়ান ইলেভেনে শেখ হাসিনা দেশে বিরাজনীতিকরণের রাজনীতি শুরু করেছিলো। তারই ধারাবাহিকতায় এই মিথ্যাচার।
তিনি বলেন, এই সরকারের মন্ত্রী বা এমপিরা কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কতো টাকা লুটে করেছে তার সবকিছুই বেরিয়ে আসবে। তখন কিন্তু শেখ হাসিনা বোরখা পরে রাস্তায় নামতে পারবেনা।
গয়েশ্বর আরো বলেন, কাঁচের ঘরে বাস করে অন্যের ভবনে ঢিল মারা বন্ধ করুন। না হলে ভবিষ্যতে দিশা পাবেন না কোথায় যাবেন? আজকে চাকরির ভয় দেখিয়ে গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণ করছে। আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। এর মাধ্যমে সরকারকে পতন ঘটাতে হবে এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। সবাই শরিক হবেন।

এদিকে বিকেলে নয়াপল্টন ভাসানী ভবন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ্রআন্দোলনের ১০ দফা আর রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ২৭ দফার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণগ্ধ অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আমাদের ইনটেনশন আন্দোলন করে ক্ষমতায় যাওয়া নয়, জনগণের অধিকার রক্ষা করে দেশের গণতন্ত্র ও মানুষের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আমরা আন্দোলনের জন্য ১০ দফা দিয়েছি, এই ১০ দফার মধ্যেই রয়েছে কিভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে হবে তার রুপরেখা। আর ২৭ দফার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত। অর্থাৎ কিভাবে বাংলাদেশকে একটা পরিপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে গঠন করা যায়।
গয়েশ্বর বলেন, বিএনপির কর্মসূচিতে দেশের সাধারণ মানুষ আজ অংশ নিচ্ছে কারন মানুষ এই অবৈধ সরকারের পতন চায়। এ সরকারকে মানুষ আর দেখতে চায় না।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক নবী উল্লাহ নবীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর পরিচালনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মোহন, ইউনুস মৃধা, আ ন ম সাইফুল ইসলাম, আব্দুস সাত্তার, মনির হোসেন চেয়ারম্যান, লিটন মাহমুদ, আকবর হোসেন নান্টু ভূঁইয়া সহ বিএনপি থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।

বিভিন্ন সংগঠনের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ: তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশের তীব্র সমালোচনা ও নিন্দা জানিয়েছে ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনটির সভাপতি প্রফেসর ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আব্দুস সালাম গতকাল এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের রাজনীতিকে ধ্বংস করার নীল নকশা বাস্তবায়নের অপচেষ্টার অংশ হিসেবে জিয়া পরিবারকে হেয় করার ঘৃণ্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে এই সরকার।

তারা বলেন, বর্তমান অবৈধ ভোটারবিহীন ফ্যাসিবাদী সরকারের কর্তৃত্ববাদী কুশাসন থেকে এদেশের জনগণকে মুক্ত করার আন্দোলন যখন ক্রমবর্ধমানভাবে একদফা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে তখন ওই গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াসই হচ্ছে এই হীন আদেশ। হামলা, মামলা, খুন-গুম, চরিত্র হরণ করে কখনো ফ্যাসিবাদ টিকতে পারেনি এবং গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও স্তব্ধ করা যায়নি। ইনশাআল্লাহ তারেক রহমানের নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ এই গণআন্দোলনও সরকারের সব রাষ্ট্রযন্ত্রকে অপব্যবহার করে বন্ধ করা যাবে না।
ড্যাবের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, অনতিবিলম্বে এই ধরনের মিথ্যা, বানোয়াট, ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকাণ্ড থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিরত থাকার জোর দাবি জানাচ্ছি। নতুবা চলমান গণআন্দোলনকে আরো গতিশীল করে চিকিৎসকসহ সব পেশাজীবী সংগঠন জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একদফা সরকার পতনের মাধ্যমেই এসব অপচেষ্টার জবাব দিবে ইনশাআল্লাহ।

সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি আদালত কর্তৃক ক্রোকের আদেশের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ-বিএসপিপি। সংগঠনটির আহ্বায়ক প্রফেসর ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরী গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, রাজনীতির মাঠ থেকে প্রধান প্রতিপক্ষকে উচ্ছেদ করে ক্ষমতা দখলে রাখার অসৎ উদ্দেশ্যে সরকার এমন নোংরা নীতি গ্রহণ করেছে। একটা সভ্য রাষ্ট্রে সরকারের এমন হিংসাত্মক আচরণ কল্পনাও করা যায় না। তারা বলেন, দেশে যে একটি ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী শাসন চলছে এটি তার উজ্জ্বল প্রমাণ। আমরা মনে করি দীর্ঘদিন পর ভিত্তিহীন মামলাকে পুঁজি করে তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের যে আদেশ দেওয়া হয়েছে, তা সরকারের ইঙ্গিতেই হয়েছে। তারা অবিলম্বে এসব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ প্রত্যাহারের জোর দাবি জানান।

ছাত্রদলের বিক্ষোভ : তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দেয়া বিচারপতি মো. আছাদুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা পুড়িয়েছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আছাদুজ্জামানের কুশপুত্তলিকা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সেটি পোড়ায় তারা। এর আগে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণীর সকল সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের ফরমায়েশি রায়ের প্রতিবাদে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আকতারুজ্জামান আক্তার ও সহ-সভাপতি নাছিরউদ্দিন নাছিরের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক রিয়াদ রহমান, মঞ্জুরুল রিয়াদ, ইব্রাহিম খলিল, হায়াত মাহমুদ জুয়েল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফারুক আহমেদ, সহ-সম্পাদক তাইফুর রহমান ফুয়াদ, সদস্য শাহেদ আলম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা, নাহিদুজ্জামান শিপন, ঢাকা কলেজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিল্লাদ হোসেন, মহানগর পূর্বের যুগ্ম আহ্বায়ক বায়োজিদ হুসাইন, তিতুমীর কলেজের সহ-সভাপতি বায়োজিদ মুস্তাকিম, ঢাকা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক হাফিজ উদ্দিনসহ বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা।

জবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ: সম্পত্তি বাজেয়াপ্তের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ পালন করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। গতকাল জবি ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা পুরান ঢাকার তাঁতিবাজার মোড় থেকে নয়াবাজার পর্যন্ত মিছিল করে। মিছিল পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। জবি ছাত্রদলের সভাপতি আসাদুজ্জামান আসলাম, সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা।###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ