Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনে ৪৫ এলাকায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, নিহত ৯

আটলান্টিকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত রণতরী পাঠালেন পুতিন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০২ এএম

ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, পূর্ব ইউক্রেনে হামলা আরও জোরদার করেছে রাশিয়া। বুধবার (৪ জানুয়ারি) অঞ্চলটির অন্তত ৪৫টি এলাকায় রুশ সেনারা একযোগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। এতে ৯ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং ২০ জন আহত হয়েছেন।
বিবিসি জানায়, ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্কসহ বেশ কয়েকটি অঞ্চলে বুধবার একযোগে রুশ সেনারা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ৪৫টি এলাকার বিভিন্ন স্থাপনা। কিয়েভের দাবি, হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক হতাহত হয়েছেন। রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় বাখমুত শহরের ৬০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে গেছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। যদিও বরাবরের মতো রুশ প্রতিরক্ষা বিভাগ বলছে, ইউক্রেনীয় সেনাদের ঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের আশপাশেও হামলা অব্যাহত রেখেছে রুশ সেনারা। গত সপ্তাহে শহরের একটি আবাসিক হোটেলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করেছে কিয়েভ। হামলায় ভবনটির একাংশ ধসে পড়ে বলে জানানো হয়। এ ঘটনায় আহত হয়েছিলেন বেশ কয়েকজন। নতুন এক ভিডিও বার্তায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দাবি করেছেন, যুদ্ধের গতিপথ পাল্টে দিতে রাশিয়া আবারও সেনা সমাবেশের কৌশল নিচ্ছে। এর মাধ্যমে পরবর্তী সময়ে ইউক্রেনে ব্যাপক আকারে হামলার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। তবে যে কোনো কিছুর বিনিময়ে রাশিয়ার এ পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়া হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন জেলেনস্কি। যদিও রাশিয়ার পক্ষ থেকে নতুন করে সেনা সমাবেশের বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা জানিয়েছেন, রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের হামলা ঠেকাতে শিগগিরই অত্যাধুনিক মার্কিন প্যাট্রিয়ট আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মোতায়েন করা হবে। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা সরবরাহের কাজ শুরু করেছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
আটলান্টিকে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত রণতরী পাঠালেন পুতিন : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র-সজ্জিত করে একটি ফ্রিগেট পাঠিয়েছেন আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগরের দিকে। ইউক্রেন যুদ্ধ অব্যাহত থাকার প্রেক্ষাপটে সামরিক শক্তি প্রদর্শনের অংশ হিসেবে পুতিন এই পদক্ষেপ গ্রহণ করলেন।
পুতিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বুধবার অ্যাডমিরাল গরশকভ রণতরী যাত্রা শুরুর আনুষ্ঠানিকতায় অংশ নেন। রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সার্গেই শোইগু ও ফ্রিগেটটির কমান্ডার ইগোর ক্রোখমালও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। যুদ্ধযাত্রা শুরুর নির্দেশ দেয়ার আগে পুতিন বলেন, ‘এই জাহাজে সর্বাধুনিক হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ‘জিরকন’ রয়েছে। এর সাথে তুলনীয় কিছু নেই।’ তিনি বলেন, আমি আশা করছি যে ক্রুরা তাদের মাতৃভ‚মির কল্যাণে কাজ করে যাবে। শোইগু বলেন, ফ্রিগেটটি আটলান্টিক ও ভারত মহাসাগর ও ভ‚মধ্যসাগরে যাবে। তিনি বলেন, এটি সাগর ও স্থলভাগে শত্রæর ওপর নিখুঁত ও শক্তিশালী হামলা চালাতে সক্ষম। তিনি বলেন, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অকার্যকর করে দিতে পারে। এর পাল্লা হাজার মাইলের চেয়ে বেশি। হাইপারসনিক অস্ত্র শব্দের চেয়ে পাঁচগুণ বেশি দ্রæত এগুতে পারে।
গত বছর রাশিয়া রণতরী ও সাবমেরিন থেকে জিরকনের পরীক্ষা চালিয়েছিল। হাইপারসনিক অস্ত্র নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথে পাল্লা রাশিয়া জিরকন নির্মাণ করেছে। শোইগু বলেন, এই মিশনের প্রধান লক্ষ্য হবে রাশিয়ার হুমকিগুলো মোকাবেলা করা এবং বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সাথে একত্রে মিলে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতাকে সহায়তা করা।
ট্যাঙ্ক সরবরাহে গড়িমসি পশ্চিমাদের, তবুও আশাবাদী জেলনস্কি : ইউক্রেনের জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের সেক্রেটারি অ্যালেক্সি ড্যানিলভ কিয়েভে ট্যাঙ্ক সরবরাহ করতে অনিচ্ছার জন্য জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজকে তিরস্কার করেছেন। তিনি বলেছিলেন যে, শলৎজ ‘এ খেলা চালিয়ে যেতে পারেন, যদি তিনি চান যে জার্মানরা বার্লিন এবং স্টুটগার্টের কাছে জার্মান ট্যাঙ্কে যুদ্ধ করতে পারে।’
সাম্প্রতিক মাসগুলিতে, ইউক্রেন বার্লিনকে তার লেপার্ড ২ ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার দাবি করছে, কিন্তু চ্যান্সেলর শলৎজ বলছেন যে, তার দেশ এ বিষয়ে তার মিত্রদের সাথে সমন্বয় করে কাজ করবে। জার্মান চ্যান্সেলরের মতে, একটি দেশও কিয়েভে পশ্চিমা ট্যাঙ্ক সরবরাহ করেনি। তবে ট্যাঙ্ক পাওয়ার বিষয়ে এখনও আশাবাদী ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি বলেছেন যে, তিনি তার দেশের পশ্চিমা অংশীদারদের কিয়েভে ট্যাঙ্ক সরবরাহ না করার কোনও কারণ দেখছেন না। ‘আমরা ফ্রান্সে তৈরি চাকাযুক্ত ট্যাঙ্ক সহ আরও সাঁজোয়া যান পাব। এটি আমাদের সমস্ত অংশীদারদের কাছে একটি স্পষ্ট সংকেত পাঠায়: কেন পশ্চিমা ট্যাঙ্কগুলো এখনও ইউক্রেনে সরবরাহ করা হয়নি তা ব্যাখ্যা করার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই,’ তিনি বৃহস্পতিবার তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে বলেছেন।
বুধবার ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখ্যোঁর সাথে টেলিফোন কথা বলার পরে, জেলেনস্কি জানিয়েছিলেন যে, কিয়েভ ফরাসি লাইট ট্যাঙ্কগুলি গ্রহণ করবে। এলিসি প্যালেসের বরাত দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছে, ম্যাখ্যোঁ ইউক্রেনে এএমএক্স-১০ আরসি চাকাযুক্ত ট্যাঙ্ক সরবরাহ করার প্রতিশ্রæতি দিয়েছেন।
ইউক্রেনের বিশেষ ইউনিটগুলিতে সরবরাহ করা হচ্ছে পশ্চিমা অস্ত্র : পশ্চিমা আগ্নেয়াস্ত্রগুলো মূলত বিদেশীদের দ্বারা পরিচালিত ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর বিশেষ ইউনিটগুলোতে সরবরাহ করা হয়, ডোনেৎস্ক পিপলস রিপাবলিক (ডিপিআর) এর সংসদ সদস্য এবং ডিপিআর পিপলস মিলিশিয়ার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আন্দ্রে বেয়েভস্কি বৃহস্পতিবার বলেছেন।
‘অবশ্যই, ন্যাটোর আগ্নেয়াস্ত্রও সরবরাহ করা হয়। সেগুলো প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন বিশেষ ইউনিট এবং নাশকতা ও পুনরুদ্ধার গোষ্ঠীগুলিতে দেয়া হয়, যেগুলো মিশ্র গঠনের এবং প্রধানত তথাকথিত ভাড়াটেদের দ্বারা পরিচালিত হয়। স্বাভাবিকভাবেই, ইউক্রেনের বিদেশী ভাড়াটেদের জন্য তাদের পরিচিত অস্ত্রগুলো ব্যবহার করা সুবিধাজনক। তারা সেগুলিকে কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা তারা ভাল জানে, উদাহরণস্বরূপ, এম ৪ স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। এর মানে এই নয় যে এই ধরনের অস্ত্রগুলি আরও ভাল, তবে এর মানে হল যে, তারা কালাশনিকভ থেকে নয় বরং এম ৪ থেকে গুলি করতে সুবিধা বোধ করে। তারা উভয়ই ব্যবহার করতে পারে তবে তারা পশ্চিমা অস্ত্র ব্যবহার করতে বেশি অভ্যস্ত,’ তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন।
যাইহোক, তার ভাষায়, নিয়মিত ইউক্রেনীয় সেনারা প্রাথমিকভাবে সোভিয়েত তৈরি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে, যার মধ্যে ইউক্রেনের মজুদ রয়েছে। ‘বিভিন্ন ধরণের কালাশনিকভ বন্দুকের মতো বিপুল সংখ্যক আগ্নেয়াস্ত্র, সোভিয়েত আমল থেকে ইউক্রেনীয় অস্ত্রের ডিপোতে মজুদ করা হয়েছে। সুতরাং, বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর পর ফেব্রæয়ারি-মার্চ মাসে কিয়েভ যে অস্ত্রগুলো হস্তান্তর করেছিল সেগুলো সোভিয়েত আমল থেকে অস্ত্রাগারে রাখা ছিল। এবং আইনী রপ্তানি ও নিয়মিত অবৈধ বিক্রয় সত্তে¡ও তারা আজ অবধি এ অস্ত্রগুলি ব্যবহার করে আসছে। সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করার জন্য তাদের কাছে এসব অস্ত্রের যথেষ্ট মজুদ ছিল,’ তিনি বলেছিলেন। সূত্র : তাস, আল-জাজিরা, বিবিসি নিউজ।

 



 

Show all comments
  • Md Azad Feni ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৯ এএম says : 0
    পুতিন ভাই অনেক ধৈর্যবান মানুষ, আমি হলে ইউক্রেন নামক কোন দেশ বিশ্ব মানচিত্রে রাখতাম না,, কমেডিয়ানকে সহ নাই করে দিতাম
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rokibul Hasan Rakin ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৮ এএম says : 0
    আমেরিকা ফিলিস্তিনের মানুষের কষ্ট দেখতে পায়না, শুধু দেখতে পায় আলজেরিয়া +আজারবাইজান, আফগানিস্তানের সিরিয়া,মিশর,ইরাক,লিবিয়া,মতো মুসলিমা দেশগুলোকে, তাড়া সবসময়ই একটা বিবাদ সৃষ্টি করে রাখার চেষ্টা করে, এবার বুঝ টেলা পুতিন ও কিম জং উন মিসাইল ছাড়া শুরু করেছে এখন সব বন্ধ হয়ে যাবে
    Total Reply(0) Reply
  • Jahidul Islam ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৮ এএম says : 0
    আমেরিকা হামলা করে নির্বিচারে মানুষ মারলে জাতিসংঘ তখন নিরব থাকে আমেরিকা নির্বিচারে হামলা করেছে ইরাকে, আফগানিস্তানে,জাপানে হামলায়তো পারমানবিক বোমার ব্যবহার করছে আর ফিলিস্তিনের পেছনে তো আমেরিকার সন্ত্রাসী বাহিনী ইজরাইলকে লাগিয়ে দিয়েছেন
    Total Reply(0) Reply
  • MD Belal ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৯:৩৭ এএম says : 0
    সমস্ত জায়গায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হোক পশ্চিমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হোক রাশিয়ার শক্তি কত জয় হোক রাশিয়ার জয় হোক রাশিয়ার জয় হোক পুতীনের
    Total Reply(0) Reply
  • Mohmmed Dolilur ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৫৯ এএম says : 0
    পুরা ইউক্রেন দখল করা দরকার,অন্যথায় রাশিয়া হেরে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohmmed Dolilur ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:৫৯ এএম says : 0
    পুরা ইউক্রেন দখল করা দরকার,অন্যথায় রাশিয়া হেরে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Mohmmed Dolilur ৬ জানুয়ারি, ২০২৩, ৫:১৮ এএম says : 0
    পুরা ইউক্রেন দখল করা দরকার,অন্যথায় রাশিয়া হেরে যাবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুতিন

২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩
২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ