Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অশ্রুসিক্ত নয়নে বিএনপি নেতা খন্দকার মাহবুবকে সহকর্মীদের বিদায়

৫ দফা জানাজা : আজ আজিমপুরে দাফন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসনকে অশ্রুশিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানিয়েছেন তার রাজনৈতিক ও আইনজীবী সহকর্মীরা। গতকাল রোববার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, মিরপুর, নয়াপল্টন বিএনপি কার্যালয়, চৌধুরী পাড়া এবং সুপ্রিম কোর্টে ৫ দফা জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বাদ হোজর আরেকটি জানাযা শেষে তাকে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে। মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেন গত শনিবার রাত ১১টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। এর আগে গত ২৭ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খন্দকার মাহবুব হোসেনকে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৬টায় মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রথম জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার ছাপড়া মসজিদে, এরপর সকাল ৯টায় মিরপুরে খন্দকার মাহবুব হোসেন চক্ষু হাসপাতালে, বেলা ১১টায় নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে, দুপুর সাড়ে ১২টায় চৌধুরী পাড়া মাটির মসজিদে এবং বেলা ৩টায় পঞ্চম ও শেষ জানাযার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিটি জানাযাতেই অসংখ্য বন্ধু-বান্ধব, সহকর্মী ও শুভাকাক্সিক্ষ অংশগ্রহণ করেন।

বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান গতকাল জানান, মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনের বড় ছেলে আমেরিকা থেকে আসার পর আজ বাদ জোহর জানাযার নামাজ শেষে আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হবে প্রবীণ এই রাজনীতিবিদের লাশ।

এদিকে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মরহুমের কফিনে দলীয় পতাকা দিয়ে আচ্ছাদন করে তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। তারা মরহুম খন্দকার মাহবুব হোসেনের প্রতি দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানান।

নামাজে জানাজার আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আজকে আমরা অত্যন্ত শোকাহত। আমরা আমাদের একজন প্রিয় নেতা এবং বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান যিনি দলের জন্য দেশের জন্য, জনগণের জন্য, জাতীয়তাবাদী শক্তির পক্ষে এবং বিচারালয়ে তিনি উচ্চতর আদালতে সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন। তার মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে এটা পুরণ হওয়ার নয়। আইনজীবীরা তাদের আইনজীবী অভিভাবক হারাল। আমরা একজন জাতীয়তাবাদী আদর্শের একজন নেতাকে হারালাম। আমরা তার রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ যেন তাকে বেহেস্তে নসিব করেন। এসময় মরহুমের ছেলে খন্দকার শামীম হোসেন সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে বাবার জন্য সকলের কাছে দোয়া চান।

এসময় উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আমান উল্লাহ আমান, হাবিবুর রহমান হাবিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক নবী উল্লাহ নবী, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, কেন্দ্রীয় নেতা কাজী রওনকুল ইসলাম টিপু, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ, ড. কাজী মনিরুজ্জামান মনির, যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এসএম জিলানী ও সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, শ্রমিক দলের মাহবুব আহমেদ বাদল, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের সমন্বয়ক ও এনপিপির চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাপগা) বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার লুৎফর রহমান, যুব জাগপার মীর আমির হোসেন আমু, ভাসানী অনুসারী পরিষদের হাবিবুর রহমান রিজু, এনপিপির মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফা, ১২ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।

এদিকে বেলা ৩টায় সুপ্রিম কোর্ট বার চত্বরে প্রবীণ এই আইনজীবীকে শেষে তাঁকে বিদায় জানাতে হাজারও আইনজীবী, আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি এবং আদালত সংশ্লিষ্ট কর্মককর্তা-কর্মচারিরা অংশ নেন। তার জানাজায় ইমামতি করেন সুপ্রিম কোর্ট বার জামে মসজিদের পেশ ইমাম মুফতি আবু জাফর। জানাজায় প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, আপিল বিভাগের বিচারপতিবৃন্দ, হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিগণ, অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র’র প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী অংশ নেন।

জানাজা-পূর্ব আনুষ্ঠানিকতায় অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জীবনী পাঠ করেন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুন নূর দুলাল।
অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের ইন্তেকালে আইনাঙ্গন থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। তিনি বলেন, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন ছিলেন সুপ্রিম কোর্ট তথা আইনাঙ্গনের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তার মৃত্যুতে আইনাঙ্গন থেকে উজ্জ্বল নক্ষত্র খসে পড়েছে। এটি আমাদের জন্য অতন্ত কষ্টের। গতকাল রোববার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি চত্বরে খন্দকার মাহবুবের জানাজা-পূর্ব সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন বিচারপতিদের প্রতি, আদালতের প্রতি সব সময় সম্মান দেখিয়েছেন। তিনি কখনও আদালতকে প্রেশার দেননি। আদেশ বিপক্ষে গেলেও তিনি হাসতে হাসতে আদালত থেকে বের হয়েছেন। এটি আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি যাবজ্জীবন মানে ৩০ বছর কারাদণ্ড-এই রায় আমরা দিয়েছি। এই মামলায় খন্দকার মাহবুব হোসেন আদালতকে শতভাগ সহযোগিতা করেছেন। তিনি সহযোগিতা না করলে এই রায় দেয়া সহজ হতো না। এদিকে প্রখ্যাত ফৌজদারি আইনজ্ঞ খন্দকার মাহবুব হোসেনের ইন্তেকালে উচ্চ আদালত অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে। মরহুমের লাশ সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে আনা হলে দল,মত নির্বিশেষে সর্বস্তরের আইনজীবী তাকে শেষবারের মতো একনজর দেখতে আসেন। খন্দকার মাহবুব হোসেনের ইন্তেকালে তার প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে আজ (সোমবার) সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ অর্ধদিবস বন্ধ ঘোষণা করেছেন প্রধান বিচারপতি। এ কারণে দ্বিতীয়ার্ধে বিচারপতিগণ এজলাসে বসবেন না।

অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের জন্ম ১৯৩৮ সালের ২০ মার্চ। তার পৈতৃক বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায়। তিনি ১৯৬৭ সালের ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ওই বছরের ২০ অক্টোবর হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭৩ সালে দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য গঠিত আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ছিলেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি চার দফায় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দুবার দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে আদালতে লড়তেন মাহবুব হোসেন।

খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীর বিক্রম। তিনি এক শোক বার্তায় বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেনের মৃত্যুতে এলডিপি পরিবার মর্মাহত এবং গভীরভাবে শোকাহত। তিনি অত্যন্ত নিষ্ঠাবান, কর্তব্য পরায়ন, সততা ও একাগ্রতার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি স্বল্পভাষী এবং সদালাপী ছিলেন। তাঁর দীর্ঘ কর্মজীবনে কর্মনিষ্ঠা ও একাগ্রতার কথা এলডিপি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করে। কর্নেল অলি মরহুমের রুহের মাগফেরাত ও শান্তি কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
প্রবীণ এই রাজনীতিবিদ ও বরেণ্য আইনজীবীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, খন্দকার মাহবুব হোসেন একজন খাঁটি জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার কর্মময় জীবনে এবং আইনঅঙ্গনে ও রাজনৈতিক জীবনে আপসহীন ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তার মৃত্যুতে জাতির এক অপূরণীয় ক্ষতি হলো। তার মৃত্যুতে শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়ে জোট নেতৃবৃন্দ বলেন, এই শোক কাটিয়ে ওঠার আল্লাহ যেন ধৈর্য ও শক্তি দান করেন। এসময় তারা মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন।



 

Show all comments
  • ম নাছিরউদ্দীন শাহ ২ জানুয়ারি, ২০২৩, ৪:১৪ পিএম says : 0
    প্রধান বিচারপতি বলেছেন আইন অঙ্গনের একটি নক্ষত্রের বিদায়। হাজারো আইনজীবী শোকাহত। সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন প্রতি মানুষের শ্রদ্ধাবোধ শ্রদ্ধাঞ্জলি অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে খুশী হলাম। আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক। আমিন।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ