Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চরম ভোগান্তি নগরবাসীর

গণপরিবহন বন্ধ

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০২২, ১২:০০ এএম

বিএনপির সমাবেশের কারণে গতকাল শনিবার সকাল থেকে রাজধানীতে গণপরিবহন চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল ৩টার দিকে কিছু বাস চলাচল শুরু হয়েছে। পুরো নগরবাসী ভুগছে গণপরিবহন সঙ্কটে। চাপের মুখে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাস মালিক ও চালকরা।
এর আগে বিএনপির অনুষ্ঠিত ৯টি বিভাগীয় গণসমাবেশের মধ্যে ৭টি সমাবেশের সময় পরিবহন ধর্মঘটের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে নগরবাসীও মনে মনে ধারণা করে নিয়েছিলেন, ঢাকার অবস্থা কী হবে। সেই আশঙ্কাই বাস্তবে পরিণত হয়েছে। গত শুক্রবার থেকে রাজধানীতে যান চলাচল সীমিত থাকলেও শনিবার সকাল থেকে হাতেগোনা ২/১টি ছাড়া তেমন বাস চোখে পড়েনি রাজধানীতে। এছাড়া দূরপাল্লার তেমন কোনো বাসও ঢাকায় প্রবেশ করতে দেখা যায়নি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর আসাদগেট, মোহাম্মদপুর, সংসদ মোড়, প্রগতি সরনি, সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া এবং যাত্রাবাড়ী এলাকা ঘুরে কোথাও বাসের দেখা মেলেনি। বলা চলে, ঢাকার রাস্তা থেকে বাস উধাও হয়ে গেছে। ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চললেও অন্যান্য দিনের চেয়ে সেগুলোর সংখ্যাও কম। সকালে বিভিন্ন গন্তব্যের উদ্দেশে যারা বাসা থেকে বের হয়েছেন তাদের পড়তে হয়েছে বিপাকে। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করে ভাগ্যের জোরে বাসের দেখা মিলছে। অবশ্য রাস্তায় মানুষের সংখ্যাও ছিল অন্যান্য দিনের চেয়ে কম।

গাবতলী বাস টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ বাস কাউন্টার বন্ধ। কিছু কাউন্টার খোলা থাকলে তেমন টিকিট বিক্রি হয়নি। বাস ছাড়ার সময়সূচি ১০টায় হলে সেটা নির্ধারিত সময়ে ছাড়ছে না। সেখানে হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার জুয়েল বলেন, যাত্রী একেবারেই নেই। সকাল থেকে গাড়ি ছেড়েছে মাত্র ১টা। তাতেও আবার ৮-১০টা সিট ফাঁকা ছিল। যাত্রী স্বল্পতায় আমরা ক্ষতির মুখে পড়ছি।

এদিকে গত ৮ ডিসেম্বর বিকেলে এক জরুরি বৈঠক থেকে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছিল, লোকসান হলেও যেন বাস মালিকরা রাস্তায় বাস চালায়। সমিতির সিদ্ধান্ত, যেকোনো মূল্যে বাস অন রোড রাখতে হবে। কিন্তু সমিতির সে কথা মানেনি সমিতিতে থাকা মালিকরাই। তারা বাস চলাচল বন্ধ রেখেছে এমনটাই অভিযোগ যাত্রীদের। তবে বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আতঙ্ক আর চাপের মুখে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে হয়েছে। তবে মালিক সমিতি বলছে, যাত্রী নেই বলে রাস্তায় বাসের সংখ্যা কম।

এদিকে, বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানী জুড়ে অন্যান্য দিনের তুলনায় বাস চলাচল একেবারেই কম। যা চলছে তা স্বল্প দূরত্বে। এ সুযোগে দ্বিগুণ থেকে তিনগুণ ভাড়া হাঁকাচ্ছেন রিকশা-সিএনজি চালকরা।

গতকাল শনিবার সকালে সাইনবোর্ড, মাতুয়াইল, রায়েরবাগ, শনির আখড়া এবং যাত্রাবাড়ী ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। এদিকে যাত্রাবাড়ী থেকে কারওয়ান বাজারের উদ্দেশে আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাস পাননি বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ হাছান। বাড়তি ভাড়ার কারণে সিএনজি করেও যেতে পারছেন না তিনি। তিনি বলেন, অফিসে যাওয়ার জন্য বের হয়েছিলাম। আজকে রাস্তায় বাস একেবারে নেই বললেই চলে। এ জন্য বাধ্য হয়েই ভাবলাম সিএনজি করে যাবো। তবে যাত্রাবাড়ী থেকে কারওয়ান বাজার ২৫০-৩০০ টাকা ভাড়া হলেও সিএনজি চালকরা ভাড়া হাঁকাচ্ছেন ৬০০ টাকা!

সাভার পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহেল বলেন, যেহেতু গত ৭ তারিখে একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে, আমরা আতঙ্কের মধ্যেই আছি। সেই ঘটনা থেকে অন্যান্য মালিকরাও একটি ভয়-ভীতির মধ্যে রয়েছে। কখন কি ঘটে যায়, সেটা তো বলা যায় না। মালিকরাও সাহস করতে পারছে না, আর চালকরাও গাড়ি চালাচ্ছে না। সমাবেশ শেষ হলে পরিস্থিতি বুঝে বাস চালানো শুরু করা হবে।

সিএনজি চালকরা বলেন, আমরা আজকে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় নেমেছি। সেজন্যই ভাড়া একটু বেশি চাচ্ছি।
এদিকে রাজধানীর ঢাকায় বাস বন্ধের কোনো সিদ্ধান্ত নেই বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ। তিনি বলেন, মালিকরা হয়তো আতঙ্কের কারণে গাড়ি কম চালাচ্ছেন। যাত্রী না থাকায় দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

বিএনপির ঢাকায় গণসমাবেশকে কেন্দ্র করে যানবাহন বন্ধ থাকায় রাজধানীর ঢামেকসহ বিভিন্ন হাসপাতালে আসা রোগীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। একই সাথে রিকশা, অটোরিকশা, সিএনজি বা অ্যাম্বুলেন্সে যারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন তাদের বাড়তি টাকা খরচ করতে হয়েছে।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ঢাকা মেডিক্যালের জরুরি বিভাগ ঘুরে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম ছিল। রোগীদের কেউ রিকশা, কেউ সিএনজি, কেউবা অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে আসেন। চিকিৎসা নিতে আসা রুগীদের মধ্যে সাধারণ রোগীর সংখ্যাই বেশি। রাস্তা ফাঁকা থাকলেও হাসপাতালে আসতে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে রোগীদের। ফলে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে যাত্রীদের।

ঢামেক জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় মায়ের চিকিৎসা করাতে আসা আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, আমার মা হঠাৎ অসুস্থ পড়েন। শাহবাগ থেকে এসেছি। ২০০ টাকা সিনএনজি ভাড়া নিলো। রাস্তা পুরা ফাঁকা। সিএনজি পর্যাপ্ত ছিল কিন্তু ভাড়া বেশি।

৬ দিন আগে ছেলের চিকিৎসা করাতে নীলফামারী থেকে ঢাকা মেডিক্যালে এসেছিলেন আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, ছেলেকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি। গাড়ি চললে বাসে যাওয়া যেতো। এখন অ্যাম্বুলেন্স নিতে হলো ৯ হাজার টাকায়। আমি গরিব মানুষ।
ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, মূলত ছুটির দিন হওয়ায় জরুরি বিভাগে চাপ কম ছিল। সাধারণ রোগীর সংখ্যাই বেশি ছিল।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিএনপি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ