পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের দু’দিন আগেই বুধবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের রাস্তা রণক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে। সমাবেশের ভেন্যু নিয়ে সরকার এবং বিএনপি’র মধ্যে এক ধরণের রশি টানাটানির মধ্যে বিকল্প প্রস্তাবগুলো নিয়ে যখন আলোচনা চলছিল তখন বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমবেত কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে সরিয়ে দিতে পুলিশ বলপ্রয়োগ করলে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ শত শত রাউন্ড শর্টগানের গুলি, টিয়ারসেল নিক্ষেপের সাথে সাথে লাঠিচার্জ করেই ক্ষান্ত হয়নি। তারা বিএনপি কার্যালয়ে ঢুকে রিজভী আহমেদ, আমানউল্লাহ আমান, শিমুল বিশ্বাস, আব্দুস সালাম, শহীদ উদ্দিন এ্যানিসহ ৩ শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। পুলিশের গুলিতে একজন বিএনপি কর্মী নিহত এবং অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছে । সংঘর্ষে ইটপাটকেলের আঘাতে কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছে। বিএনপি কার্যালয়ে আকষ্মিক পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার ও ভাঙ্গচুরের ঘটনাকে পুলিশের বাড়বাড়ি বলেই গণ্য হতে পারে। কার্যালয় থেকে ককটেল উদ্ধারের দাবিকে পুলিশের সাজানো নাটক বলে দাবি করেছে বিএনপি। বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশের হামলার ঘটনাকে পৈশাচিক ও সংবিধান বিরোধী আখ্যায়িত করে এর তীব্র প্রতিবাদ করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বুধবারের পুলিশি হামলার প্রতিবাদে গতকাল সারাদেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে বিএনপি। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশের ধারাবাহিকতায় ঢাকার সমাবেশের মধ্য দিয়ে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণার কথা রয়েছে। নয়াপল্টনে রক্তাক্ত ঘটনা একটি শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বিক্ষোভ-সহিংসতার দিকে উস্কে দেয়া হয়েছে।
গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের অনুপস্থিতি দেশে একটি বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে বিচারহীন হত্যা-গুম-খুন ও রাজনৈতিক হামলা-মামলার শিকার বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা। মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বার বার অভিযুক্ত হয়েছে। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের পক্ষ থেকে র্যাব ও পুলিশের সাবেক ও বর্তমান ৭ শীর্ষ ব্যক্তির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, কোনো রাজনৈতিক দলের বাহিনী নয়। তাদের যে কোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের বদনাম কিংবা নিষেধাজ্ঞা পুরো দেশের জন্য লজ্জাজনক ও বিব্রতকর। হামলা-মামলাসহ বিরোধিদলের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বাঁধা দেয়ার ধারাবাহিক ঘটনাবলীকে পুঁজি করেই বিদেশিরা বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত করার সুযোগ পাচ্ছে। সেই সাথে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা ও রাজনীতি নিরপেক্ষ ভ‚মিকাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে। দেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা দূর করতে হলে রাষ্ট্রকে প্রথমেই বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সভাসমাবেশ করার অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। বিএনপিসহ বিরোধীদলকে আইনশৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধাশীল, সমঝোতামূলক ও নমনীয় ভ‚মিকা রাখতে হবে। অন্যত্র সভাসমাবেশ করার অনুমতি না পেয়ে গত ১০ বছর ধরেই বিএনপি তাদের পল্টন কার্যালয়ের সামনে সভা-সমাবেশ করে আসছে। একইভাবে বিভাগীয় সমাবেশটিও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের রাস্তায় করার ঘোষণা দিয়েছে। এখানে সমাবেশ করলে রাস্তা বন্ধ হওয়ার অজুহাত তুলে পুরো এলাকাকে রণক্ষেত্রে পরিনত করার মত ঘটনা পুলিশের হঠকারি সিদ্ধান্ত বলেই গণ্য হতে পারে।
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও মানবাধিকার রক্ষাসহ ১০ ডিসেম্বর বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নিশ্চিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ উন্নয়ন সহযোগী ১৫টি দেশের ঢাকাস্থ মিশন থেকে একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয়েছে। এরপর গতকাল ঢাকাস্থ জাতিসংঘের প্রতিনিধির পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে বিরোধীদলের সভাসমাবেশ ও মত প্রকাশের অধিকার রক্ষার আহŸান জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির গণসমাবেশের দিন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস। বিএনপি কার্যালয়ে পুলিশি হামলা ও হতাহতের ঘটনার একঘন্টার মধ্যেই জাতিসংঘ প্রতিনিধির এই বিবৃতিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে বিবেচনা করা যায়। জাতিসংঘ বা উন্নয়ন সহযোগীদের চাপের কারণেই নয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উন্নয়ন, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘবের স্বার্থেই দেশে একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে সরকার এবং বিএনপিকে যার যার অবস্থানকে নমনীয় করতে হবে। বিশেষত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মানবাধিকার ও সাংবিধানিক নাগরিক অধিকার রক্ষার প্রতি যতœশীল হতে হবে। ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশের দিকে সারাবিশ্ব তাকিয়ে আছে। পুলিশ ও দলীয় ক্যাডার দিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বানচাল করার যে কোনো প্রয়াস দেশের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। দেশের মানুষ আর কোনো সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা দেখতে চায়না। সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করা সরকারের প্রধান দায়িত্ব। ১০ ডিসেম্বর শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সম্ভব করার ক্ষেত্রে পুলিশ ও সরকারকে যথাযথ সহযোগিতা নিশ্চিত করা তাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। এমতাবস্থায়, হামলা, মামলা, গণগ্রেফতার ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের ধারা বন্ধ করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।