পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এবং বিগত দিনে বিরোধীদলে থাকাকালে দলটির সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের তথ্য কূটনীতিকদের জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে হোটেল লেকশোরে বিএনপি আয়োজিত ‘ভায়োলেন্স অ্যান্ড পলিটিক্স অব ব্লেমিং’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনা সভায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিভিন্ন সময় সন্ত্রাসের একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়। এছাড়া গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা সহিংসতা, বাসে আগুন দেয়া, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নৃশংস হামলা, তাদের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করে জমি ও ঘরবাড়ি দখলের ওপর পুস্তিকা প্রদান ও ভিডিও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এসব তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বিএনপির পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং একটি অংশগ্রহণমূলক স্বচ্ছ ও বিশ^াসযোগ্য নির্বাচনের দাবিতে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে বিরোধী রাজনৈতিক জোট বিএনপি’র নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করে। এই হরতালের সময় আওয়ামী লীগ সরকার ভয়াবহ নাশকতার আশ্রয় নেয়, নিজেরাই গণপরিবহনে বোমাবাজি ও আগুন সন্ত্রাস করে এর দায় বিএনপি’র ওপর চাপাতে চেষ্টা করে। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে এটি দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে এই আগুন সন্ত্রাসের মূল হোতা আওয়ামী লীগ নিজেই।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে ও বিএনপি নেতা শামা ওবায়েদ ও অ্যাডভোকেট ফারজানা শারমিন পুতুলের পরিচালনায় সভায় বিএনপি ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ছাড়াও রাশিয়া, ইরান, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, জাতিসংঘ ও মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের দূতাবাসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে মূলপ্রবন্ধ পাঠ করেন জি নাইনের সাধারণ সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হোসেন সায়ন্থ।
মূলপ্রবন্ধে বলা হয়, আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল তখন আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটে দলটি। আর যখন ক্ষমতায়, তখন দলীয় নেতা ও রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক এ আগুন সন্ত্রাসের দায় বিএনপি’র ওপর চাপিয়ে বিএনপি’র ভোটাধিকার আদায়ের গণতান্ত্রিক সংগ্রামকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে মরিয়া দলটি। গণতন্ত্রের সপক্ষের কর্মীদের দমন করতে এরা মিথ্যা মামলা, গণগ্রেফতার, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে কেবল নিজেদের ফ্যাসিস্ট শাসনকে দীর্ঘায়িত করতে।
এতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৩ সালের ২ ডিসেম্বর ঢাকার শাহবাগে বিহঙ্গ পরিবহনে আগন দিয়ে ১১ জনকে নির্মমভাবে আগুনে পুড়িয়ে মারে আওয়ামী লীগ। এর আগে ২০০৪ সালের ৪ জুন আওয়ামী লীগের হরতাল কর্মসূচির উপলক্ষে রাজধানীর শেরাটন হোটেলের সামনে বিআরটিসির একটি যাত্রীবাহী বাসে গান পাউডার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয় এবং ১১জন নারী-শিশু, পুরুষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের একজন কেন্দ্রীয় নেতা এর সাথে জড়িত ছিলেন। আগুন সন্ত্রাসের মতো আওয়ামী নেতাকর্মীরা দেশব্যাপী সংখ্যালঘুদের ওপরও নৃশংস হামলা চালায়, তাদের উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগ করে, জমি এবং ঘরবাড়ি দখল করে শুধু বিএনপি’র ওপর এর দায় চাপানোর রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে। বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমে কক্সবাজারের রামু, ব্রাম্মনবাড়িয়ার নাসিরনগর ও গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীসহ সারাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর ও উপাসনালয়ে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নাম সামনে এসেছে।
সভাপতির বক্তব্যে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকার সমাবেশ নিয়ে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে মনে কোনো দ্বিধা রাখবেন না। সেদিন অবশ্যই ঢাকায় সমাবেশ হবে। সেদিন থেকেই মানুষ নতুন স্বপ্ন দেখবে।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী কদিন আগে একটি নাটক করেছেন। তিনি কিছু আহত লোককে নিয়ে এসে আবারে ব্লেইমগেম খেলতে চাইছেন। আমরা শুনতে পাচ্ছি আমাদের চলমান আন্দোলন বানচাল করতে ২০০ বাস নাকি পোড়ানোর জন্য রেডি করা হয়েছে। ছাত্রলীগ নামধারী নেতাদেরকে রেডি রাখা হয়েছে আমাদের মোকাবিলা করতে। কিন্তু আমরা বলছি- সরকার আবারো পুরনো খেলায় মেতেছে। তবে জনগণ আজকে জেগে উঠেছে। কারণ এই সরকার নির্বাচিত নয়। তারা ১৫ বছর ধরে দেশের মানুষের ওপর নিপীড়নের স্টিম রোলার চালাচ্ছে। আজকে দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি করেছে। মানুষ আজকে সর্বগ্রাসী দানব সরকারের হাত থেকে মুক্তি চায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে জাতির করুন অবস্থা। আমরা এবার মানুষকে নিয়ে বেরিয়েছি। তারাই এবার আমাদের আগে। আমরা পরিবর্তনের চেষ্টা করছি। ইনশাআল্লাহ আমরা বিজয়ী হবো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন করতে আসুন সকলে মিলে একটি বাসযোগ্য রাষ্ট্র তৈরি করি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ ১৪ বছর ধরে ব্লেইমগেম তথা চাপাবাজি করছে। সেটার ওপরই তারা টিকে আছে। পাশাপাশি তারা নানা ধরনের চক্রান্তও করছে।
তিনি বলেন, শত উস্কানির পরও আমাদের ৯ টি সমাবেশ হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীরা কিন্তু কোনো ভায়োলেন্স করেনি। সমাবেশে শুধু নেতাকর্মী নন সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিলো। সুতরাং সরকার ব্লেইমগেম ও ব্লাফগেইম করে পার পাবে না।
ড. মোশাররফ বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাধা দেবেন না। কিন্তু হচ্ছে তার উল্টোটা। তিনি চট্টগ্রামে বলেছেন ভোট চোরদের ভোট দেবেন না। আবার তিনি নৌকায় ভোট চাইছেন। এটা কতটা কন্ট্রাডিক্টোরি। আসলে তারা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে। সেজন্য আবোলতাবোল বকছেন। ইনশাআল্লাহ ১০ ডিসেম্বর সরকার বিদায়ের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। হয়তো সরকার শেষ কামর দেওয়ার চেষ্টা করবে। কিন্তু ভয় পাওয়া যাবে না। ইনশাআল্লাহ বিজয় হবে।
স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, ক্ষমতাসীন সরকার দিনের ভোট রাতে করেছে। ফেসবুকে বিরুদ্ধে লিখলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়েছে। আবার তারাই বিরোধী দলের বিরুদ্ধে ব্লেইম করছে। আজকে তারা আমাদের ঢাকার সমাবেশ নিয়ে টালবাহানা শুরু করেছে। সমাবেশ করতে দিতে চায় না। হুমকি-ধামকি দিয়ে পুলিশ দিয়ে ভয় দেখাচ্ছে। কিন্তু কোনো ভয়ভীতি দিয়ে কাজ হবে না। গত ১৪ বছরে আমাদের নেতাকর্মীদের অনেক ভয়ভীতি দেখিয়েছেন। সমাবেশ আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার যত চেষ্টাই করুক না কেনো সমাবেশ করবোই। সরকারকে বলবো গণতন্ত্রের পথে আসুন। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পথে আসুন। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের পথে আসুন। বিদেশীরাও বলছে এই সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। সরকার যদি এতো উন্নয়ন ও ভালো কাজ করে তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনে ভয় পায় কেনো?
ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, আমাদের চলমান আন্দোলনের সফলতা হচ্ছে গ্রামীণ জনপদের মানুষ সাড়া দিয়েছে। তারা জেগে উঠেছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকা ডিক্লারেশন দেওয়া হলে ভালো হবে।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, স্বৈরাচার সরকার ক্ষমতায় আছে। তারা শেষপর্যন্ত ক্ষমতা দখল রাখতে কঠোর হবে। ইতোমধ্যে ৯ জনকে হত্যা করেছে। আমরা সবাই নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার। এক্ষেত্রে বিদেশি বন্ধুদেরকে সচেতন করতে হবে। আগামী ১০ ডিসেম্বর সমাবেশ সফলের লক্ষ্যে যা করা দরকার সেজন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। যদিও এটাই আমাদের শেষ সমাবেশ নয়। একইদিনে ঢাকায় ১০০টি সমাবেশ কিভাবে করা যায় সেটা নিয়ে ভাবতে হবে।
প্রফেসর ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, আজকে একটি গোষ্ঠী দেশের মানুষের অধিকার ভুলুণ্ঠিত করে দেশ চালাচ্ছে। তাদের কৌশল হলো ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছে। মিথ্যা মামলা দিয়ে গুম ও খুন করে ভয় পাইয়ে দিতে চায়। তাদের লক্ষ্য হলো দেশে শুধু তারাই থাকবে। অন্যরা থাকবেনা। এরা ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছে।
গোলটেবিল আলোচনা সভায় আরো অংশগ্রহণ করেন বিএনপির বেগম সেলিমা রহমান, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মীর মোহাম্মদ নাছির, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, আব্দুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবদীন ফারুক, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. আবদুস সালাম, ডক্টর এনামুল হক চৌধুরী, ড. শাহিদা রফিক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, আব্দুল কাইয়ুম, বিজন কান্তি সরকার, মজিবুর রহমান সারোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, ফজলুল হক মিলন, শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, জহির উদ্দিন স্বপন, অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান, কাদের গণি চৌধুরী, তাইফুল ইসলাম টিপু, ব্যারিস্টার মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, নায়াবা ইউসুফ, এবিএম আবদুস সাত্তার, শায়রুল কবির খান প্রমুখ। এছাড়া প্রফেসর অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস ইসলাম, প্রফেসর ড. আফম ইউসুফ হায়দার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. দিলারা চৌধুরী, সাবেক রাষ্ট্রদূত সিরাজুল ইসলাম, প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে ছিলেন- জাতীয় পার্টির (জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, সুব্রত চৌধুরী, কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম, জাগপার খন্দকার লুৎফর রহমান ও এসএম শাহাদাত, ডিএল‘র সাইফুদ্দিন মনি, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, এনপিপির ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, পিপলস লীগের সৈয়দ মাহবুব হোসেন, ন্যাপ ভাসানীর অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলাম, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকী, এনডিপির ক্বারী আবু তাহের, জাতীয় দলের সৈয়দ এহসানুল হুদা, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টির অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম, ইসলামী ঐক্যজোটের অধ্যাপক আবদুল করিম, বাংলাদেশ ন্যাপের এম এন শাওন সাদেকি প্রমুখ।##
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।