পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিএনপির গণসমাবেশের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ততই আতঙ্ক বাড়ছে। সাংগঠনিক কাজতো দুরের কথা পালিয়ে থেকেও যেন রক্ষা পাচ্ছে না। তাদের মনের মধ্যে একটাই ভয় এই বুঝি ধরে নিয়ে গেলো পুলিশ। এ আতঙ্ক শুধু রাজধানীতেই নয়-সারা দেশের নেতা কর্মীরাই এখন বাড়িঘর ছাড়া। এর মধ্যে গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ঘোষণা দিয়েছেন বুধবার থেকে রাজধানী ঢাকার পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলায় সব জায়গায় সতর্ক পাহারা বসানো হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পাহাড়া দেবে’। রাজধানীর কয়েকটি পাড়া মহল্লায় ঘুরে এবং মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন প্রতিরাতে আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা বিএনপি কারা করছেন তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চালাচ্ছেন।
পহেলা ডিসেম্বর থেকে দেশব্যাপী পুলিশের বিশেষ অভিযানে গতকাল পর্যন্ত ৬ দিনে শুধু ঢাকাতেই গ্রেফতার হয়েছে ১ হাজার ১২ জন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ২৪ ঘন্টায় গ্রেফতার করা হয়েছে ২৮৫ জনকে। এ হিসেব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের। এছাড়া বিশেষ অভিযানে গতকাল পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপির ১ হাজার ৫শ’ জন নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিএনপির অভিযোগ, গ্রেপ্তারের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের বাড়ি-বাড়ি তল্লাশী আর নির্যাতনে দেশে একটা ভয়াবহ ভীতি ও ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি হয়েছে।
গত সোমাবার গভীর রাকে ধানমন্ডি থানা পুলিশ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের রায়েরবাজারের বাড়িতে অভিযান চালায়। বাসায় কাউকে না পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ফিরে যান। তবে বাড়ির প্রতিটি কক্ষ তল্লাশি করা হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
গত রোববার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের গাড়িতে হামলা ও ভাংচুর চালানো হয়। এ সময় বিএনপির অনেক নেতা আহত হন।
রাজশাহীতে সমাবেশ থেকে ঢাকায় আসার পথে গ্রেফতার হন যুবদল সভাপতি সালাউদ্দিন আহমেদ টুকু ও সহ সভাপতি নয়ন। শুধু তা-ই নয় সারাদেশেই বিএনপি ও এর অঙ্গ সংগঠনের সিনিয়র নেতাদের হয় গ্রেফতার করা হয়েছে নয়তো গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়েছে।
এদিকে নাশতার পুরোনো একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।
দলের সিনিয়র নেতাদের এহেন পরিস্থিতিতে বিএনপির মাঝারী , ছোট এমনকি সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মনোবল ভেঙ্গে গেছে। তাদের মধ্যেও গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একাধিক নেতা জানান, নেতা-কর্মীদের মধ্যে শুধু গ্রেফতার আতঙ্কই নয়, পুলিশের ছত্রছায়ায় থাকা সরকার দলীয় ক্যাডারদের হামলার শিকারও হচ্ছেন অনেকে। সারাদেশেই একই চিত্র বিরাজ করছে।
বিরোধীদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হচ্ছে একের পর এক মিথ্যা মামলা। বিভিন্ন অভিযোগ এনে এসব মামলা করা হচ্ছে। কোনটার বাদী হচ্ছে পুলিশ। আবার কখনো কখনো বাদী হচ্ছে সরকার দলীয় লোকজন। এসব সাজানো মামলায় যাকে খুশি গ্রেফতার করা হচ্ছে। ইচ্ছে হলেই বিরোধী দলীয় কারো বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ার আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে সেখানের বিএনপির দেড় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম বাবুলসহ সিনিয়র নেতাদের আসামি করা হয়। এ ব্যাপারে মঠবাড়িয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রুহুল আমিন দুলাল মামলাটি মিথ্যা ও গায়েবি দাবি করে বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশে নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণে বাধা দেওয়া স্বরূপ মামলাটি করা হয়েছে।
এর আগে মুন্সীগঞ্জ, বরিশাল, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ বাদী হয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। কোথাও কোথাও পুলিশ নিজে বাদী হয়ে এসব মামলা দায়ের করে।
আবার পুরোনো মামলায়ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। একদিকে গ্রেফতার আতঙ্ক অন্যদিকে হামলার আশঙ্কায় বাড়িঘর ছাড়া প্রত্যন্ত এলাকার বিরোধী মতের নেতা-কর্মীরাও।
২০১৮ সালের নাশতার একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, যুবদলের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম নীরবসহ ৩৪ জনকে গ্রেপ্তারের জন্য গতকাল পরোয়ানা জারি করেছে আদালত। জামিনে থেকে আসামিরা আদালতে উপস্থিাত না হওয়ায় গতকাল আদালত এ পরোয়ানা জারি করেন।
এদিকে পুলিশের বিশেষ অভিযানের গতকাল মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত ষষ্ঠ দিনে ঢাকায় ২৮৫ জনসহ বিশেষ অভিযানে এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ১২ জন। তবে পুলিশ দাবি করছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক ইনকিলাবকে বলেন, নগরবাসির নিরাপত্তায় পুলিশ সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করছে। পুলিশ নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীতে অভিযান চালাচ্ছে। কাউকে হয়রানি করা পুলিশের উদ্দেশ্য নয়। তবে রাজনৈতিক নেতা-কর্মীসহ রাজধানীবাসিকে মনে রাখতে হবে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়। রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করলে কঠোরভাবে দমন করা হবে।
পুলিশের বিশেষ অভিযান ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক বলেন, সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই বলে এসব অভিযান চালাচ্ছে। সরকার যতই গ্রেপ্তার করুক, অভিযান চালাক লাভ হবে না। বরং এতে নেতাকর্মীরা আরও জেদি হয়ে উঠেছে। নেতা-কর্মীরা ঢাকার ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ সফল করবে বলে শপথ নিয়েছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, মহান বিজয় দিবস, বড়দিন এবং থার্টি ফাস্ট নাইট উদযাপন নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে চলমান অভিযানের পাশাপাশি ১-১৫ ডিসেম্বর বিশেষ অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেয় পুলিশ সদরদপ্তর। নির্দেশনা মোতাবেক ডিএমপির ৫০টি থানা ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে মাদক, দণ্ডপ্রাপ্ত, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, চোর, ছিনতাইকারীসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হয়। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হয়েছে। এসব মামলায় রিমান্ড আবেদন করে আসামিদের আদালতে হাজির করা হবে।
গত ২৯ নভেম্বর পুলিশ সদরদপ্তরের আদেশে বলা হয়, অন্যান্য স্থানের পাশাপাশি আবাসিক হোটেল, মেস, হোস্টেল, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, কমিউনিটি সেন্টারসহ অপরাধীদের লুকিয়ে থাকার সম্ভাব্য স্থানগুলোতে কার্যকর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অভিযানে জঙ্গি, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী ও কারবারি, অবৈধ অস্ত্রধারী, পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেফতার, মাদক ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।